• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খোলস ছেড়ে অন্য গাভাস্কার!


রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ মে ১৬, ২০১৯, ০৪:৪৫ পিএম
খোলস ছেড়ে অন্য গাভাস্কার!

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: কেউ বলেন সানি কেউ বলেন লিটল মাষ্টার। ভারতীয় ক্রিকেটে লিটল মাষ্টার বললে এখনকার প্রজন্ম টপ করে বলে দেবে শচীন টেন্ডুলকারের নাম। না, টেন্ডুলকার নন ভারতের প্রথম লিটল মাষ্টার সুনিল মনোহর গাভাষ্কার। যার মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন টেন্ডুলকার। শুধু তাই, গাভাষ্কার ১৯৮৭ বিশ্বকাপ খেলতে যখন  মুম্বাইয়ের মাঠে, টেন্ডুলকার তখন বলবয়। সেই বলবয়ই আজকের টেন্ডুলকার।

ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্ট ক্রিকেটে নতুন একটা অধ্যায়ই যোগ করেছেন গাভাষ্কার। তাই ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের শেষ কথা এই কিংবদন্তি! হবেই না-বা কেন টেস্ট ক্রিকেটে তার কীর্তি দেখুন-গাভাষ্কারই প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি প্রথম ১০ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন। সঙ্গে ৩০ সেঞ্চুরি। সবমিলিয়ে ১২৫ টেস্টে ৫১.১২ গড়ে গাভাস্কারের রান ১০,১২২। ৩৪ সেঞ্চুরির পাশে রয়েছে ৪৫ ফিফটি।

সেই সময় গাভাস্কার উইকেটে থাকা মানেই প্রতিপক্ষ বোলারদের তিতি বিরক্তি অবস্থা! কারণ উইকেটে জমে গেলে ছোট-খাটো গড়নের এই ব্যাটসম্যানকে আউট করতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে বোলারদের। তারচেয়েও বড় কথা, ঘন্টার পর ঘন্টা উইকেটে কাটিয়ে দিতে গাভাস্কারের গায়েই লাগতো না।

আর সেই অভ্যাসটা গাভাস্কার টেনে আনলেন ১৯৭৫ এর প্রথম বিশ্বকাপে। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এমন ভুতুরে কান্ড ঘটালেন, যেটা শুনলে আপনি না হেসে পারবেন না! তখন ছিল ৬০ ওভারের ম্যাচ। ইংল্যান্ড আগে ব্যাট করে তুলে ফেলল ৩৩৪/৪। ওই রান টপকানোর তাড়া দুরে থাক, গাভাস্কার ওয়ানডেকে টেস্ট মনে করে ব্যাটিং করা শুরু করলেন! শুরু থেকে শেষ অবধি তিনি ব্যাটিং করে গেলেন। বল খেললেন ১৭৪টি। রান করলেন কত, জানেন? অপরাজিত ৩৬! পুরো ৬০ ওভার খেলে ভারতের স্কোর ১৩২/৩।

ওয়ানডে ক্রিকেটে এত বেশি বল খেলে এত কম রান করার ঘটনা রেকর্ড বইয়েই ঢুকে গেছে। একবার ভাবুন, সেই সময় আর এই সময়ের কথা। গাভাস্কার ১৭৪ বলে ৩৬* আর এখন রোহিত শর্মা তার চেয়ে এক বল অর্থাৎ ১৭৩ বল খেলে করেন ২৬৪! কতই না ক্রিকেটের বাঁক বদল।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে এসে নিজেকেও বদলে ফেলতে চেয়েছিলেন গাভাস্কার। বের হতে চেয়েছিলেন খোলস ছেড়ে। টেস্টে যার নামের পাশে ৩৪ সেঞ্চুরি সেই একই ব্যক্তির পাশে কোনও ওয়ানডে সেঞ্চুরি নেই, তা কী হয়? বড় লিটল মাষ্টারও বোধহয় এটা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। আর এ জন্য গাভাস্কার বেছে নিলেন বিশ্বকাপ মঞ্চকেই।

১৯৭৫ বিশ্বকাপে খেলা গাভাস্কারের ব্যাটিং নিয়ে হাসতে পারেন, কিন্তু ১৯৮৭ এর বিশ্বকাপ দেখল এক বদলে যাওয়া গাভাস্কারকে। যে গাভাস্কার বলের চেয়ে রান বেশি করতে জানেন! পৌঁছাতে পারেন কাঙ্খিত সেই তিন অঙ্কের ঘরে।

গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে ভারতের দরকার ছিল ২২২ রান। গ্রুপ সেরা হতে এই রান টপকে যেতে হবে ৪২.২ ওভারে। চোখ কপালে তোলার মতোই ব্যাট করলেন গাভাস্কার। ৮৮ বলে ১০ চার তিন ছক্কায় এবার তিনি অপরাজিত থাকলেন ১০৩ রানে। ১০৮ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে গাভাস্কারের সেঞ্চুরি এই একটিই। আর ৩২.১ ওভারেই ওই রান টপকে গেল ভারত।

গাভাস্কারের সঙ্গী যিনি আউট হয়েছিলেন সেই কৃঞ্চমাচারী শ্রীকান্তের ব্যাট থেকে এসেছিল ৫৮ বলে ৭৫। ভারতের উইকেট পড়া বলতে ওই শ্রীকান্তই। আর ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন তরুণ মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন। ও, হ্যাঁ চেতন শর্মার কথা না বললে অন্যায়ই হয়ে যায়। ওই ম্যাচে চেতনই প্রথম বোলার যিনি বিশ্বকাপে হ্যাটট্টিক করার বিরল কীর্তি দেখান। শুধু বিশ্বকাপ নয়, তার আগে ওয়ানডেতে আর কোনও বোলারই পরপর তিন বলে তিন ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পারেননি।   

সোনালীনিউজ/আরআইবি/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!