• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খোলা আকাশের নিচে খুলনা ওয়াসার শতকোটি টাকার পাইপ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৫, ২০১৬, ০১:০১ পিএম
খোলা আকাশের নিচে খুলনা ওয়াসার শতকোটি টাকার পাইপ

খুলনা প্রতিনিধি

খুলনার কাটাখালী ও লবণচরা এলাকায় খোলা আকাশের নিচে শতকোটি টাকা মূল্যের পাইপ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। রূপসার সামন্তসেনা থেকে নদীর তলদেশ দিয়ে নগরীর সাতটি রিজার্ভার এবং ১০টি ওভারহেড ট্যাংক পর্যন্ত এসব পাইপ স্থাপনের কথা ছিল। ২০১৪ সালের অক্টোবরে এ কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়। ৮০ শতাংশ পাইপ পৌঁছে গেছে। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতি না পাওয়ায় দেড় বছরেও কাজ শুরু করা যায়নি। ১৬ জন চীনা প্রকৌশলী অলস সময় পার করছেন।

ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, খুলনা নগর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুমতি নদীর পানি এনে তা পরিশোধনের পর সিটি করপোরেশন এলাকায় সরবরাহ করা হবে। এজন্য ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ২০১১ সালের ২৭ জুন একনেকে অনুমোদন পায়। সরকার এবং উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ও এডিবি এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।

প্রকল্পের আটটি প্যাকেজের অন্যতম দুটি হচ্ছে ক্লিয়ারিং ওয়াটার ট্রান্সমিশন লাইন ইনক্লুডিং রিভার ক্রসিং এবং ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ নেটওয়ার্ক। দুটি প্যাকেজেরই কাজ পেয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। প্রথম প্যাকেজের মাধ্যমে রূপসার সামন্তসেনা থেকে পাইপলাইন নদীর তলদেশ দিয়ে খুলনায় আনা হবে। এর পর নগরীর সাতটি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার ও ওভারহেড ট্যাংক পর্যন্ত মোট ৪০ কিলোমিটার পাইপ বসানো হবে। পাইপের ব্যাস সর্বনিম্ন এক ফুট থেকে সর্বোচ্চ চার ফুট পর্যন্ত। সড়ক খুঁড়ে পাইপ বসানো হবে। এ কাজে ব্যয় হবে ২২০ কোটি টাকা।

তৃতীয় প্যাকেজে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে মোট ৬৫০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন বসানো হবে। এসব পাইপের ব্যাস ৩ থেকে ২০ ইঞ্চি। সড়কের প্রায় ১২-১৫ ফুট নিচ দিয়ে এ পাইপ স্থাপন করতে হবে। তবে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে পাইপ স্থাপনের কারণে সড়ক খোঁড়ার প্রয়োজন পড়বে না। এ প্যাকেজে ব্যয় হবে ৩৫৪ কোটি টাকা।

ওয়াসার প্রকল্প ব্যবস্থাপক খান সেলিম আহমেদ জানান, সামন্তসেনা থেকে রূপসা নদীর ২০ ফুট নিচ দিয়ে পাইপলাইন রূপসা ফেরিঘাটে এসে উঠবে। এর পর খানজাহান আলী রোড ধরে রয়েল মোড়, কেডিএ এভিনিউ হয়ে শিববাড়ী, লোয়ার যশোর রোড ধরে মহসিন স্কুল এবং দৌলতপুর কৃষি কলেজের সামনে দিয়ে যাবে। এ কাজের জন্য দুই থেকে চার ফুট ব্যাসের পাইপ বসানোর জন্য সড়কের পাঁচ থেকে ছয় ফুট খুঁড়তে হবে। সড়ক খোঁড়া ও মেরামতের সব খরচ ওয়াসা বহন করবে। এজন্য ২০১৩ সালের জুনে সড়ক বিভাগে প্রথম চিঠি দেয়া হয়। পরে আরো ছয় দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। সড়ক বিভাগ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য দুবার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু তার পরও অনুমতি পাওয়া যায়নি। এখন কোটি কোটি টাকার পাইপ ও নানা যন্ত্রাংশ খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, বিশাল আয়তাকার পাইপগুলো থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। ডাকটাইল আয়রন পাইপগুলো চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে।

চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (বাংলাদেশ) কুইন ইয়ং জানান, দুটি প্যাকেজের ৮০ ভাগ পাইপ এর মধ্যে চলে এসেছে। তার মূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। মাটি খোঁড়ার যন্ত্রপাতিও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় তারা কাজ শুরু করতে পারছেন না। তাদের প্রতিষ্ঠানের ১৬ জন চীনা প্রকৌশলী এখন বসে রয়েছেন।

খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, প্রকল্পের অন্যান্য প্যাকেজের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। শুধু সড়ক বিভাগ ও কেসিসির অনুমতি পেতে দেরি হওয়ায় দুটি প্যাকেজের কাজ কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। তিনি আরো জানান, পাইপ ও অন্যান্য উপকরণ প্রস্তুত আছে। সড়ক বিভাগের অনুমতি পেলে কাজ শেষ করতে সময় লাগবে না।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিপুল চন্দ্র সাহা জানান, প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তবে কবে নাগাদ অনুমতি পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে তিনি বলতে পারেননি।

খুলনা ওয়াসার চেয়ারম্যান তালুকদার আবদুল খালেক এমপি জানান, ৫০০ মিটার কাজ শেষে সড়ক মেরামতের পর অন্য অংশে হাত দেয়া হবে। মেরামত করা হবে মজবুতভাবে। ফলে নগরবাসীকে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হবে না। স্বল্প সময়ের মধ্যে সওজের অনুমতি পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!