• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা-৫ আসনে উপনির্বাচন

গণসংযোগে ব্যস্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৭, ২০২০, ০২:৩১ পিএম
গণসংযোগে ব্যস্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

ঢাকা : ঢাকার ডেমরা-দনিয়া-মাতুয়াইল (ঢাকা-৫) আসনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। গত ৬ মে এই আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লা মারা যান। এরপর আসনটি শুণ্য হলেও এখনো নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়নি।  

এই আসনে উপ নির্বাচনে প্রতিদন্দীতা করার জন্য নিজেদের অস্তিত্ব তুলে ধরতে মাঠে বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকে। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় এবং দোয়া চেয়ে পোস্টার ব্যানারই জানান দিচ্ছে উপনির্বাচনে প্রার্থীদের উপস্থিতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে-গেলো নির্বাচনে এই আসনের আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়েছিলেন হাবিবুর রহমান মোল্লা ও কাজী মনিরুল ইসলাম মনু। শেষ দিকে আওয়ামী সভানেত্রী বয়োজেষ্টতার বিবেচনায় হাবিবুর রহমান মোল্লাকে দলীয় মনোনয়ন দেন এবং কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলেন।

তিনিও দলের সিদ্ধান্তে আস্থা রেখে দলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন। তবে এবার তিনি আশাবাদী গেলো নির্বাচনে এতো বড় ত্যাগের বিনিময়ে এবার হয়তো সেই পুরস্কার পাবেন।

জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, গেলো বছর আমাদের দুই জনকেই টিকিট দেওয়া হয়। শেষ দিকে নেত্রী ডেকে বলেন তিনি বয়োজেষ্ঠ এবং এবারই শেষ নির্বাচন করবেন। তাই হাবিবুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি মারা যাওযার কারনে এই আসনটি শুন্য হয়।
বঙ্গবন্ধুর নিবেদিত সৈনিক হিসেবে আমি এবং তৃনমুলের নেতাকর্মীরা মনে করেন এবার আমার হক, আমাকেই দেওয়া হবে। নেত্রীর কাছেও আমার করজোরে প্রার্থনা, তিনি গেলো বারের ত্যাগের বিনিময়ে এবার আমার প্রাপ্য পুরস্কার আমায় দেবেন।

এই আসনের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন পেলে ইনশাল্লাহ নির্বাচিত হয়ে এখানকার শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবো। মাদক নির্মুল করবো। কোচিং বানিজ্য বন্ধ করবো। রি অ্যাডমিশন ব্যবস্থা বন্ধে সংসদে দাবি তুলবো। এছাড়া এখানে কোনো সরকারী স্কুল কলেজ নেই। আমি দুটি সরকারী স্কুল ও একটি সরকারী কলেজ করার চেষ্টা করবো।

খোজ নিয়ে জানা গেছে-এই আসনে অন্তত ৩০ লক্ষ মানুষের বাস। ভোটার আছে অন্তত ৫ লক্ষ।

কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ছাড়া যাত্রবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক  হারুন উর রশিদ, ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড রফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সাবেক সদস্য নেহরীন মোস্তফা দিশি, ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।

কামরুল হাসান রিপন ব‌লেন, ‘এ এলাকার জনসাধারণ এখনো অবহেলিত। কাঁচা রাস্তা, ড্রেনেজ সিস্টেমে সমস্যা আ‌ছে। অনেক কারখানা বর্জ্য ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশদূষণ রোধ করতে চাই। সব সমস্যা যাচাই-বাছাই করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমাধান করা হবে।'

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উপস্থিতি বোঝা গেলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। খোজ নিয়ে জানা গেছে-তারা ভিতরে ভিতরে নিবার্চনী মাঠ তৈরির চেষ্টা করছেন। এই আসনে গত বছরে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছেন নবী উল্লাহ নবী। এবার এই আসনে তিনিসহ সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ, তানভীর আহমেদ রবিন ও অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া মনোনয়ন চাইতে পারেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে আব্দুস সবুর আসুদের নাম শোনা যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- এটি ঢাকা-৪ আসন ছিলো। তখন এই আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করতেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহম্মেদ। এখানকার সংসদ সদস্যও ছিলেন তিনি। তার হাত ধরে এখানে অসংখ্য নেতা তৈরি হয়েছে। সেকারণে এই আসনের প্রতি তার হক রয়েছে। তিনি মনে প্রাণে চান এই আসনে নির্বাচন করতে। তাই এবার সালাহউদ্দিন আহম্মেদ বা তার ছেলে তানভীর আহম্মেদ রবিন দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।

তানভীর আহম্মেদ রবিন বলেন, আব্বা ওই আসনে নির্বাচন করতেন। তিনিও মনে প্রাণে ওই আসনটি চান। দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে তিনিও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছেন।

যারা আছেন আলোচনায় : ঢাকা-৫ (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও আংশিক কদমতলী) আসনের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রচারনা চালাচ্ছেন অনেকেই। আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) কেউ কেউ নিজেকে যোগ্য প্রার্থী মনে করে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

১৪ দলের শরিক জাসদের সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগরের (পূর্ব) সভাপতি শহীদুল ইসলাম বিগত দিনের মতোই প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মনে করছেন, দীর্ঘদিন এলাকার মানুষের পাশে থাকার কারণে তার জনপ্রিয়তা বেশি।

শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এলাকার মানুষের সঙ্গে সুখে-দুঃখে আছি। এই এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। এই ভয়ঙ্কর করোনা মহামারীর মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত আমার এলাকার অসহায় দরিদ্রের ত্রাণ দিয়ে, আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছি। আমি নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। মহান আল্লাহ সুস্থ করেছেন। এখনো এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছি। আর শুধু এখন নয় আমার এলাকার মানুষের জন্য আমি সব সময় ছিলাম এবং আগামীতেও থাকবো ইনশাল্লাহ। তাই ১৪ দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পিতার সখ্যতা ছিল জানিয়ে শহীদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাকালীন সময়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শর্ত স্বাপেক্ষে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে আলোচনা করার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কারাগারে পাঠান। আলোচনা শেষে আমার বাবা পিতা ইন্টেলিজেন্ট অফিসার জনৈক মুন্সি হোসেন উদ্দিন নিজ হাতে ১৬ জুন ১৯৫০ সালে প্রতিবেদন দাখিল করেন। যা ‘সিক্রেট ডক্যুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটির ৪৫১ পৃষ্টায় বর্নিত আছে।

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুর সবুর আসুদ নিজেকে নিজেকে যোগ্য প্রার্থী মনে করে অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

আবদুস সবুর আসুদ বলেন, ‘আমার বাবা এ এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। বাবার পথ ধরে পল্লীবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমান সংকটেও আমি আমাদের দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নির্দেশে কাজ করছি। সুতরাং এ এলাকার জন্য আমিই যোগ্য প্রার্থী।’

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে সাবেক সাংসদ প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও নিজেকে যোগ্য মনে করছেন তিনি।

হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল জানান, তার প্রয়াত বাবার রাজনৈতিক আদর্শের কথা ভেবে তিনি রাজনীতি করেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে তার বোঝাপড়া ভালো। সে বিবেচনায় তিনি মনোনয়ন পেতে পারেন।

ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও আমুলিয়া মডেল টাউনের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান (আতিক) -এর নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, বংশানুক্রমে এ এলাকার উন্নয়নে তারা কাজ করে চলছেন। বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। তার পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা বিবেচনায় এনে আওয়ামী লীগ তাকেই মনোনয়ন দিবে বলে মনে করেন ত্যাগী এ নেতা।

মনোনয়ন প্রত্যাশী যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না জানান, দেশের নানা সংকটেও তিনি রাজনীতি ছাড়েননি। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় তৎকালীন সরকারের জেল, জুলুম ও অত্যাচার সহ্য করেছেন। বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। তাই এবার আওয়ামী লীগের টিকিট মনোনয়ন তিনিই পাবেন বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন।

এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান মাসুদ, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের নাম শোনা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সবাই আশায় বুক বেঁধে আছেন। প্রত্যেকেই নিজেকে ঢাকা-৫ আসনের যোগ্য হিসেবে মনে করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষেই কাজ করবেন বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।

মাতুয়াইল, ডেমরা, সারুলিয়া ও দনিয়া ইউনিয়ন এবং মোট ১৪টি সিটি ওয়ার্ড (৬০ নম্বর থেকে ৭০ নম্বর এবং ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর) নিয়ে ঢাকা-৫ আসান। ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষাধিক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লা। গত ৬ মে তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!