• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ

গাজীপুর ও বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন প্রস্তুত


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১২, ২০১৮, ০২:১৭ পিএম
গাজীপুর ও বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন প্রস্তুত

ঢাকা : বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার পর এটির নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে। ওই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট) স্থাপন করা হবে।

স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগবে। সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। এ জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে প্রথমবারের মতো এর নিয়ন্ত্রণ নেবে রাঙামাটির বেতবুনিয়ার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন-২। স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগবে। এটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।

ব্যাকআপ স্টেশন হিসেবে নির্মিত বেতবুনিয়ায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন-২-এর ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগাতেই এটি প্রথম ব্যবহার করা হবে। স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের মূল কাজ হবে জয়দেবপুরের স্টেশনে। তবে কখনো যদি গাজীপুর স্টেশন স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, তখন বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন-২ কাজ শুরু করবে। অনেক ক্ষেত্রে দুই গ্রাউন্ড স্টেশনেই সমানতালে কাজ চলবে।

বেতবুনিয়ায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনে নিয়োজিত প্রকৌশলীরা জানান, উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রকেটের স্টেজ-২ খুলে যাবে। এ জন্য ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ নেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন। এরপর শুরু হবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ২০ দিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় অবস্থিত দুটি গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, মহাকাশে থাকা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ন্ত্রণ করা হবে জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ার দুই গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে। পৃথিবীর অরবিটে থাকা স্যাটেলাইট তার জায়গা থেকে মাঝে মাঝে সরে যেতে পারে। সেখানে আমাদের ৭৫ কিলোমিটার একটি জায়গা আছে। এর মধ্যে স্যাটেলাইটটি রাখতে হবে। কাজটি এখান থেকে করা হবে। এ ছাড়া যাবতীয় মেইনটেন্যান্স কাজ এখান থেকে করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটির নিয়ন্ত্রণ হবে জয়দেবপুর ও বেতবুনিয়া থেকে। এ লক্ষ্যে গত জুলাই মাসে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের যন্ত্রপাতিও আমদানি করেছে বিটিআরসি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরে অবস্থিত স্টেশনের সঙ্গে বেতবুনিয়া স্টেশনের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। একই নকশায় গড়ে তোলা হয়েছে দুটি স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। ডিম্বাকৃতির একটি ভবন ব্যবহার হবে মূল ভবন হিসেবে। এর ভেতরে আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে স্যাটেলাইট অপারেশন, কন্ট্রোল সেন্টার ও নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার বিভাগ।

মূল ভবনের বাইরে বসানো হয়েছে বিশাল দুটি অ্যান্টেনা। কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের জন্য রয়েছে ডরমেটরি ভবন। যেখানে ৩০ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা পেতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ছয়জন প্রকৌশলী বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশনের দেখভাল করছেন। এ ছাড়া অপারেশন ইউনিটের সবাই ঢাকার গাজীপুরে অবস্থান করছেন। স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের কাছে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন। মূল অপারেশন প্যানেলের দুই কন্ট্রোল স্টেশনে কাজ করবেন ৩০ প্রকৌশলী। তবে উৎক্ষেপণের পর তিন মাস থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস স্যাটেলাইটের দেখভাল করবে।

আরো জানা যায়, গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ার দুটি গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের যন্ত্রপাতি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে বিটিআরসি। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে গ্রাউন্ড স্টেশনে সিগন্যাল আদান-প্রদানে ১০ টন ওজনের দুটি অ্যান্টেনা স্থাপন করা হয়। অ্যান্টেনা দুটির একটি ২৬ কি-কিউ-ব্যান্ড এবং অন্যটি ১৪ সি-ব্যান্ড, যা স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণে ট্রান্সপন্ডার হিসেবে কাজ করবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!