• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাড়ি না চললেও বছরে লাগে ৯৬ হাজার টাকার তেল


এম এ ইউসুফ নওগাঁ প্রতিনিধি আগস্ট ২৪, ২০১৯, ০৫:০৯ পিএম
গাড়ি না চললেও বছরে লাগে ৯৬ হাজার টাকার তেল

নওগাঁ : নওগাঁর রাণীনগরে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারি প্রকৌশলীর ব্যবহারিত সরকারি জিপ গাড়ি না চালালেও প্রতি মাসে টাকার বিনিময়ে তেল মাবিল এর স্লিপ পাম্প থেকে নিয়ে ভাউচার বানিয়ে সরকারি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জিপ চালক আবু সাঈদের বিরুদ্ধে।

রাণীনগরের সদ্য বিদায়ী সহকারি প্রকৌশলী গত প্রায় ৩ বছর ধরে জিপ গাড়ি ব্যবহার না করে তার একটি প্রাইভেট কার এবং অফিসের কর্মচারীদের মটরসাইকেল যোগে মাঠ পর্যায়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন মূলক কাজ তদারকি করতেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে বরেন্দ্র’র জিপ গাড়ি গেটের বাহিরে বের না হলেও ওই গাড়ির তেল, মাবিল, গিয়ার অয়েল, মেরামতসহ বিভিন্ন খরচের ভাউচার নিজে তৈরি করে প্রতি মাসেই আত্মসাৎ করছেন চালক আবু সাঈদ। এ যেন দেখার কেউ নেই!

জানা গেছে, উত্তরাঞ্চল ভিত্তিক কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বিশেষায়িত একটি প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলাবাসির জীবনমান উন্নয়ন ও কৃষি খাতের মান-উন্নয়নের লক্ষে ১৯৯২ সালে স্থাপিত হয় বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের রাণীনগর জোন। এই জোনের আওতাধীন একালায় মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের তদরকির জন্য সরকার পর্যায় থেকে একটি জিপ গাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়। যার রেজিস্ট্রেশন নং- রাজ-ক ৫৯২১।

গত প্রায় ৪ বছর আগে জিপ চালক আবু সাইদ রাণীনগর জোনে যোগদান করেন। যোগদানের কিছু দিন পরই রাণীনগর জোনের সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান একটি প্রাইভেট কার ক্রয় করেন। তারপর থেকেই সুযোগ বুঝে চালক আবু সাইদ প্রতি মাসে ওই গাড়ির তেল, মাবিল, গিয়ার অয়েল ও ব্রেক অয়েল ক্রয়ের ¯িøপ পার্শ্ববর্তী শাহী পেট্রোল পাম্প থেকে টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করে বিল ভাউচার তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন।

এছাড়াও মাঝে মধ্যে গাড়ি মেরামত বাবদ খরচের ভাউচার নিজে তৈরি করে সরকারি টাকা উত্তোলন করে প্রতি মাসেই আত্মসাৎ করে আসছেন। অফিসের প্রয়োজনে গাড়ি না চললেও গত ১৮ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত জ্বালানী খরচ বাবদ ৯৬ হাজার ৯শ ১৭ টাকা ও মেরামত বাবদ ৩৩ হাজার ১শ টাকার ভাউচার করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিজেল ১ হাজার ৯৩ লিটার, মাবিল ৩০ লিটার, গিয়ার অয়েল ৩ লিটার, ব্রেক অয়েল ১৬ লিটার এবং গাড়ির মাইল মিটার রিডিং ৩৬ হাজার ৬ শ ৫১ কিলোমিটার দেখিয়ে ভাউচার তৈরি করে কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেন তিনি।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত একটি ভাউচার প্রতিবেদনে দেখা যায়, জ্বালানী খরচ বাবদ ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৭ শ ৪২ টাকা (চলতি অর্থবছর), মেরামত বাবদ ৩৬ হাজার ১শ টাকা। জ্বালানী খরচে রয়েছে ডিজেল ১ হাজার ৪শ ৪২ লিটার, মাবিল ৪০ লিটার, গিয়ার অয়েল ৩ লিটার, ব্রেক অয়েল ২১ লিটার এবং গাড়ির মাইল মিটার রিডিং (ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত) ৩৮ হাজার ১শ ৬৯ কিলোমিটার দেখিয়ে ভাউচার তৈরি করেছেন চালক আবু সাঈদ। ভাউচার প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি মাসে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা গাড়ি বাবদ খরচ দেখানো হয়। অথচ সংশ্লিষ্টরা ও স্থানীয়রা বলছেন, সদ্য বিদায়ী সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান প্রাইভেট কার ক্রয়ের পর থেকে সরকারি জিপ গাড়ি বাহিরে বের করতে দেখিনি। তিতুমীর রহমান তার নিজের গাড়িতেই চলাচল করতেন।

এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনচ্ছুক বরেন্দ্র’র রাণীনগর জোনের একাধিক কর্মচারিরা জানান, অফিসের গাড়ি আর ব্যবহার করা হয় না! এই সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে চালক আবু সাঈদ নিজের মত ভাউচার বানিয়ে তেলের টাকা আত্মসাৎ করে আসছে।

রাণীনগর বরেন্দ্র অফিসের গেট সংলগ্ন দোকানদার মোতাহার ও এনামুল বলেন, সরকারি জিপ গাড়ি তো আর চালায় না! তিতুমীর স্যার নতুন গাড়ি কিনেছে, ওই গাড়িতেই যাওয়া আসা করেন। শুনেছি গাড়িটি অনেক পুরানা এবং ৩/৪ বছর ধরে ভাঙ্গাচুরা অবস্থায় পড়ে আছে।

নাম প্রকাশে অনচ্ছুক শাহী পেট্রোল পাম্পের এক কর্মচারি বলেন, বরেন্দ্র’র ওই ড্রাইভার প্রায় ৩/৪ বছর ধরে আমাদের এখান থেকে তেল মাবিলের স্লিপ নেয়। স্লিপের মূল্য হিসেবে আমাদেরকে লিটার প্রতি ১১ টাকা করে দেয়।

রাণীনগর সদরের শাহী পেট্রোল পাম্পের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার শাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার এখান থেকে তারা তেল মাবিল ক্রয় করে। ক্রয়ের পর ড্রাইভার তেল কি করে আমি তা জানি না!

এ ব্যাপারে রাণীনগর বরেন্দ্র জোনের জিপ গাড়ি চালক আবু সাঈদ বলেন, আমি এই অফিসে গত প্রায় ৪ বছর ধরে আছি। গাড়িটি নিয়মিত অফিসের কাজে ব্যবহার করা হয়। মাঠ পর্যায়ের সকল কাজের দেখাশুনার ক্ষেত্রে এই গাড়িতে চলাচল করে বরেন্দ্র’র অফিসাররা। পুরাতন হলেও গাড়িটি এখনও খুবই ভাল রয়েছে। তেলের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

এব্যাপারে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের রানীনগর জোনে সদ্য যোগদান করা সহকারি প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি চলতি বছরের জুলাই মাসের ৩ তারিখে এখানে যোগদান করেছি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকায় যোগদানের পর থেকে গাড়িটি ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে কি হয়েছে তা আমি জানি না।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!