• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গ্ল্যামার ফুরালেই হারিয়ে যাচ্ছেন নায়িকারা


বিনোদন ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০, ০৪:২২ পিএম
গ্ল্যামার ফুরালেই হারিয়ে যাচ্ছেন নায়িকারা

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ষাট বছর বয়সেও অস্কারে সেরা অভিনেত্রী হচ্ছেন হলিউডের নায়িকারা। কিন্তু আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ববিতা মনের মত চরিত্র না পেয়ে অভিমানে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে আছেন। শুধু ববিতা নয়, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকারা প্রায় সবাই আজ চলচ্চিত্র থেকে দূরে। 

কারণ, বয়সের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অভিজ্ঞ অভিনেত্রীর যোগ্যতার চরিত্র নেই। শাবনূর-মৌসুমীরা নায়িকা হবার কোটা পার হবার পরই গুরুত্ব হারিয়েছেন। কিন্তু ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘খায়রুন সুন্দরী’, ‘চার সতীনের ঘর’, ‘নিরন্তর’র সিনেমায় কী টিনএজ, জিরো ফিগার, সেক্সি লুক, ছোট কাপড়ের নাচে যোগ্যতা লেগেছিলো? বা এইসব যোগ্যতাসম্পন্ন নায়িকারা কী পারছে ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘খায়রুন সুন্দরী’, ‘চার সতীনের ঘর’, ‘নিরন্তর’র মতো সিনেমা উপহার দিতে? 

তবে নারীদের নায়িকা ভাবার বাইরে গিয়ে অভিনেত্রী ভাবার চর্চাটা কেন ইন্ডাস্ট্রি করছে না, সেই প্রশ্নের উত্তর কী খুঁজে পাওয়া যায়? ষাট বছরের চলচ্চিত্রে সমাজে প্রভাব ফেলার মতো নারী চরিত্র খুব বেশি নেই। গ্ল্যামারটাই বেচে খাওয়া হয়েছে।

প্রথমত: আমরা নায়িকাদের যা দেখেছি: বাংলাদেশের সিনেমায় নারীরা কখনো এসেছে নামের উপমা হয়ে, কখনো এসেছে গল্পের সৌন্দর্যে। কিন্তু নারী প্রধান সিনেমায় এসেছে হাতে গোনা কয়েকজন। ছবিতে নারীর উপস্থাপনও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেতিবাচক। শুরুতে স্বামী, সংসার ছিল নারীর গন্ডি। এটাই যেন চিরাচিরত রুপ। সংসার, স্বামী কিংবা কাছের পুরুষটি যতোই ত্রুটিতে পূর্ণ থাকুক, তাকে আগলে রাখতে, তার পায়ের নিচে বেহেস্ত খুঁজতে, তার করুণায় বেঁচে থাকার শিক্ষা দিয়েছে সত্তর দশকের বাংলা সিনেমা। যার প্রতিনিধিত্ব করেছেন শাবানা, ববিতা, কবরী, রোজিনারা, অঞ্জনারা।

দ্বিতীয়ত: নব্বই দশকে শুরু হলো এক নায়িকাকে নিয়ে দুই নায়কের টানাটাানি ফর্মূলা। চম্পা, দিতি, মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমারা ছিলেন এমন ট্রাজেডির নায়িকা। দুই নায়ক এই এক নায়িকার জন্য দুনিয়া এক করে ফেলার চেষ্টা করতেন। কখনো বড়লোক নায়িকাকে গরীব নায়কের আপন করে পাওয়ার চেষ্টা দেখে কাটিয়েছি একটা বড় সময়। এই সময়টাতে নায়িকারা শুধু নায়কের প্রয়োজনীয় বস্তু হিসেবই পর্দায় আবিভূত হয়েছে।

বাস্তব কতটা উঠেছে পর্দায়? বিশ্ব চলচ্চিত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের নায়িকারা কখনো আকাশে উড়েনি, পুলিশ-আর্মিতে যায়নি, নেত্রী হননি। দেখা যায়নি এমন কোন চরিত্র হতে যা দিয়ে দেশবাসীকে নতুন কিছু ভাবাবে। বড়জোর, প্রতিবাদী নারীর রুপ দেখাতে অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে গল্পের গরু আকাশে উড়ানোর মতো উপস্থিত করেছেন নির্মাতারা। নায়িকারা কেবলই গল্পের পার্শ্ব চরিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে, সিনেমার সেরা বিজ্ঞাপন হয়ে প্রেম কিংবা সংসারে বসে বালিশে এঁকেছে ‘ভুলোনা আমায়’। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখিয়ে দর্শক টানার বস্তু হয়েছে।  

অথচ, স্বাধীনতার পর থেকেই নারীদের ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে। বিদেশে পড়াশুনা থেকে শুরু করে ক্রমাগত শিক্ষিত নারীর সংখ্যা বাড়ছে।  নারীরা আকাশে বিমান নিয়ে উড়ে বেড়িয়েছে, পুলিশ-আর্মিতে ঢুকে জাতির সেবা করেছে। আজকাল ব্যবসা-ব্যাংক থেকে শুরু করে কোথায় নেই নায়িকা!

হাল আমলের নায়িকার হাল- হাকিকত কী? হাল যুগেও বদলায়নি নারীর উপস্থাপন। এখনো নারী প্রেমিকাই হচ্ছেন। বরং আগের চেয়ে অবনতি হয়েছে। আজকাল আর আমজাদগ হোসেনরা নেই। কোন গোলাপীর সৃষ্টি হয় না। এখন অগ্নি হয়, রক্ত হয়- তবে এমন চরিত্র বাস্তবে কেউ কখনো দেখেননি। এরা সিনেমারই নায়িকা বলতে হয়। এই থেকে দর্শক মাতানো পর্যন্তই। বিবেক বা সমাজ নাড়ানো সম্ভব নয়। নায়কের কোমর ধরে নাচেন, হাঁটেন, ঘুরে বেড়ান, নাকি নাকি কান্না কাঁদেন। বাকি যা করার একাই একশো নায়কেরা করছেন। এই চলছে , চলবে আর কতদিন তা বাংলাদেশের সিনেমা ওয়ালারাই ভালো জানেন।

বয়স হয়ে গেলে কী হয়? এই ইন্ডাস্ট্রিতে বয়স হয়ে গেলে চরিত্রে প্রমোশন হয়, অভিজ্ঞতাতে নয়। এখানে অভিজ্ঞ হলে বেকার হতে হয়। আজকের অপু, মাহি, বুবলী, পরীমনি, মিমেরা যে কাল বেকার হচ্ছেন না সেটা বলা দায়। এক নায়ককে ঘিরে আর কতই বা ছবি হতে পারে।

ববিতা তো আক্ষেপ করে বলেন, ‘কি করবো বলো? যেসব চরিত্রের জন্য ঢাকা হয়। তার জন্য এত বছরের অভিজ্ঞ ববিতাকে আমি অপমান করতে পারি না। এইসব অভিনয় রোজকার সম্মানিতে পাওয়া যায় এমন বয়স্ক শিল্পীকে দিয়েই সম্ভব, এফডিসি পাড়ায় যাদেরকে ‘এক্সট্রা’ বলে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এখন অভিনয় করলে তোমরা সেই গোলাপীকে আর খুজবা না।’

ভাবী, মা-দাদীর চরিত্র হয়ে গল্পের মূল হওয়া যায়: ‘আম্মাজান’ ছবিটি নায়ক প্রধানই। মান্নার পাগলাটে অভিনয় ছবিটিকে অনন্যতা দিয়েছে। কিন্তু সেই ছবিতে প্রায় নির্বাক চরিত্রে অভিনয় করেও দেশের দর্শকদের কাছে ‘আম্মাজান’ খ্যাতি পেয়েছিলেন নন্দিত অভিনেত্রী শবনম। এমন চরিত্রও আজকাল আর দেখা যায় না।

নায়িকারা এখনো পারে: ‘ঢাকা অ্যাটক’ ছবিতে মাহিয়া মাহিকে তৎপর সাংবাদিক হিসেবে আলাদা লেগেছে দর্শকের। যদিও চরিত্রটির প্রয়োজনীয়তা ও এর বিকাশ নিয়ে মাহীর অক্ষমতা থাকতে পারে। তৌকীর আহমেদের ‘হালদা’ ছবিতে জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম, ফজলুর রহমান বাবুদের মতো শক্তিমান অভিনেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে তিশা, দিলারা জামান, রুনা খানের চরিত্রগুলো। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার স্ত্রী তিশাকে গুরুত্ব দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলেও সেসব সিনেমায় কিন্তু নারীরা স্বকীয়ভাবে দর্শক আকর্ষণ রাখতে পারে।

নারী চরিত্র হতে পারে: নারীরা কেবলমাত্র পুরুষের আরাধ্য, মনযোগকারী, দর্শক ধরার টোপ হিসেবে নয়। সিনেমায় আসুক সংসারে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া মায়েদের জীবনের গল্প, স্যাক্রিফাইসের দৃশ্যগুলো। আসুক ভাবীদের মমতামাখা সংগ্রামী গল্পগুলো, আসুক ভাইদের জীবনের উত্থানের পেছনে বোনদের গল্প। আসুক প্লেন চালানো গল্প। আসুক ডাক্তার হওয়ার গল্প। আসুক নেত্রী হওয়ার গল্প। 

নতুন নির্মাতারা ভাবুন অভিজ্ঞদের নিয়ে, একজন শাবনুর কিন্তু একদিনে হয়নি। ভালো চরিত্র পেলে এখনো তিনি করো চেয়ে কম নয়। অথবা বিদ্যা সিনহা মীমদের শুধু শাকিব খানদের প্রেমিকা বানিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন না। একটা সময়ে নিজেরাই নিজেদের উপর বিরক্ত হয়ে হারিয়ে যাবে। ভাববে, এর চেয়ে ঘর সংসার করাই ভালো। ইন্ডাস্ট্রি এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!