• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘর সামলাতে পারছেন না জাবির ভিসিপন্থি শিক্ষকরা


শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন, জাবি ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৯, ০২:০৭ পিএম
ঘর সামলাতে পারছেন না জাবির ভিসিপন্থি শিক্ষকরা

জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ১৫ টি পদের মধ্যে সভাপতি সম্পাদকসহ ১০ টি পদে ভরাডুবি ঘটেছে ভিসিপন্থি বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদের ।

অথচ গতবছরের নির্বাচনে সভাপতি,সহ-সভাপতি,সম্পাদকসহ ৮ টি পদে জয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়েছিল এই শিক্ষক সংগঠন। এরই মধ্যে এক বছরে নিয়োগ পাওয়া অর্ধশত শিক্ষকের ভোট যোগ হয়েছে তাদের ভোটব্যাংকে। নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন হেভিওয়েট প্যানেল। তবু কেন এত বড় পরাজয়!

অনুসন্ধানে নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল,বাসা ভাড়া ভাতা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষসহ বেশ কিছু ইস্যু ভরাডুবির কারণ হিসেবে উঠে আসে। ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পুনঃনিয়োগ নিয়ে আওয়ামী শিবির বিভক্ত হয়ে পড়লে গত নির্বাচনে ভিসিপন্থি বঙ্গবন্ধু আদর্শের শিক্ষক পরিষদ নিজেদের স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করে। অন্যদিকে সাবেক ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরপন্থি ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ নিজেদের প্যানেল ঘোষণা করে। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম খালেদা জিয়ার জেলের প্রতিবাদে নির্বাচন বয়কট করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীলতার স্বার্থে  ভিসিপন্থিদের সমর্থন দেন।

কিন্তু বিএনপিপন্থিরা গত এক বছরের প্রশাসনে আচরণে নাখোশ। বিশেষ করে আইআইটির পরিচালক পদে বিএনপিপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ফজলুল করিম পাটোয়ারিকে নিয়োগ না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ তারা। এই বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সাথে দেখা করতে গেলে পিএসের সাথে সাক্ষাত করে ফিরে আসতে হয় শিক্ষক ফোরামের নেতাদের। এসব আচরণে ক্ষুব্ধ বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা এবার সাবেক ভিসি শরীফ এনামুল কবির সমর্থিত শিক্ষক সংগঠনের সাথে ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ নামে নতুন জোট করেছেন। সে জোটের কাছে হারে ভিসিপন্থিরা। যদিওবা একসময় বিএনপিপন্থিরা শরীফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন।

নির্বাচনে ভিসিপন্থি প্যানেলে সভাপতি পদে অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী ও সম্পাদক পদে অধ্যাপক বশির আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। সভাপতি  ৫৫ ভোট ও সম্পাদক ৪৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। অন্যান্য পদের পরাজয়ের ব্যবধানও প্রায় গড়ে ৫০ ভোট। বিশ্লেষকরা বলছেন নিজেদের কোন্দলের কারণে ভিসিপন্থিদের বেশ কিছু ভোট পড়েছে প্রতিপক্ষের ব্যালটবক্সে। শুরুতে সম্পাদক পদে অধ্যাপক মোতাহের হোসেনের নির্বাচন করার কথা থাকলেও পরে অধ্যাপক বশির আহমেদ নির্বাচন করেন। কিন্তু নির্বাচনের এই প্যানেল নিয়ে ভিসিপন্থিদের মধ্যেই একটা অসন্তোষ ছিল।

মূলত সমাজ বিজ্ঞান ও কলা ও মানবিকী অনুষদ কেন্দ্রিক একটা দ্বন্দ তৈরী হয়। কলা ও মানবিকী অনুষদের দুইজন অধ্যাপক এই অসন্তোষের নেতৃত্বে ছিলেন। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই দ্বন্দ তৈরী হলেও দলটির অলিখিত অভিভাবক অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সংকট সমাধানে উদ্যোগ নিতে পারেননি। অসুস্থতার কারণে তিনি নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকদিন অফিস করতে পারেননি।

অন্যদিকে ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৩০৩তম সিন্ডিকেট সভায় বাসা ভাড়া ভাতা ৫০% থেকে কমিয়ে ৩৫% করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে এই অফিস আদেশ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ২১ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি(ভিসিপন্থি) সিন্ডিকেট সদস্য থাকার পরও সিন্ডিকেটে এই বিল পাশ হওয়ায় শিক্ষকদের একটা অংশ ক্ষুব্ধ হন।

এছাড়া অনেক সিনিয়র শিক্ষকদের ডিঙিয়ে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র শিক্ষকদের ‘এ’ টাইপ ডুপ্লেক্স বাসা বরাদ্দ দেওয়ায় অসন্তোষ আছে শিক্ষকদের মধ্যে। তাছাড়া শিক্ষা সফরসহ নানা কারণে ভিসিপন্থি কয়েকজন শিক্ষকদের ভোট কেন্দ্রে দেখা যায় নি।

এদিকে নির্বাচনে জিতে শরীফ এনামুল কবিরপন্থি প্রগতিশীল সমাজের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির নতুন সমীকরণ দাঁড় করাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির নতুন সভাও আহবান করা হয়েছে। শিক্ষক সমিতিতে জেতার পর তারা সামনের ডিন নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন। ভিসি পতন আন্দোলনের চেয়ে প্রশাসনিক পদে জিতে আসা,শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন,শিক্ষক যোগাযোগ ও প্রশাসনের প্রতি বিভিন্ন মহলের অসন্তোষকে কাজে লাগানোর দিকে নজর দিচ্ছেন।

ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি হল প্রভোস্ট ও ২ টি অনুষদের ডিন পদে আছেন শরীফ এনামুল কবিরপন্থি শিক্ষক।

আবার এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের মধ্যকার কোন্দল মেটানোকে এই মুহূর্তে বেশী জোর দিচ্ছে ভিসিপন্থিরা। তবে আওয়ামীলীগের একাংশ,বিএনপি ও বামপন্থিদের সম্মিলিত প্যানেলের বিরুদ্ধে গড়ে ২৪০ ভোট পাওয়াকেও কম হিসেবে দেখছেন না তারা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!