• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘুরে আসুন তুরস্ক


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৮, ২০১৯, ০১:০৮ পিএম
ঘুরে আসুন তুরস্ক

ঢাকা : একদিকে  ইতিহাসে পরিপূর্ণ, অন্যদিকে সমুদ্রসৈকত ও পাহাড়ের সৌন্দর্যে বিমোহিত এক রাষ্ট্র তুরস্ক। হাজার হাজার বছর ধরে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যকার প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত এই তুরস্ক। ইউরোপ ও এশিয়ার মিলনস্থল হওয়ায় দুই মহাদেশের সংস্কৃতির প্রভাব সমানভাবে লক্ষ করা যায় তুরস্কের সংস্কৃতিতে। যার ফলে তুরস্কের রন্ধনশৈলী, ধর্মীয় স্থাপনা, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে চোখে পড়ার মতো বৈচিত্র্য। তুরস্কে দেখার জায়গা রয়েছে অনেক। সেসব খবর জানাচ্ছেন সালেহীন বাবু

ইস্তাম্বুল : একসময় অটোমান এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল এই ইস্তাম্বুল। পৃথিবীর বৃহত্তর শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ইস্তাম্বুল তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর। সংকীর্ণ প্রণালির মধ্যে অবস্থিত ইস্তাম্বুল শহরটাই পৃথিবীর একমাত্র শহর যেটি এশিয়া ও ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করছে। চিত্তাকর্ষক স্থাপত্য, ঐতিহাসিক সাইট, খাবার, শপিং, রাতের আয়োজন ও চমৎকার আবহাওয়ার কারণে ইস্তাম্বুলকে তুরস্কের সর্বোৎকৃষ্ট বেড়ানোর স্থান বলা যায়। পুরনো শহরেই আপনি খুঁজে পাবেন সব দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানগুলো। যার মধ্যে রয়েছে হাইয়া সোফিয়া, নীল মসজিদ ও টপকাপি প্যালেস।

ক্যাপাডোসিয়া : কেন্দ্রীয় আনাতোলিয়ায় অবস্থিত ক্যাপাডোসিয়া সুপরিচিত হয়েছে এর অস্বাভাবিক আকৃতির পাহাড়ের সমন্বয়ে গঠিত রূপকথার রাজ্যের মতো সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য। প্রাচীন আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত বেয়ে পড়া ও প্রাকৃতিক ভূমি ক্ষয় থেকে কালে কালে এই অঞ্চলের পাহাড়গুলো এমন উদ্ভট আকৃতি ধারণ করেছে। এর পরে হাজার বছর আগে মানুষ এই পাহাড়গুলোর বুকে খুঁড়ে খুঁড়ে বসতবাড়ি, মন্দির ও ভূগর্ভস্থ শহর তৈরি করে। হিটাইটসরা সর্বপ্রথম পারস্য ও গ্রিক আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ খনন করে। এর অনেক পরে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা ক্যাপাডোসিয়ার এসব সুড়ঙ্গপথ ও গুহায় আশ্রয় নেয়। বর্তমানে এসব গুহার মধ্যেই নির্মিত হয়েছে হোটেল ও রেস্তোরাঁ।

এফেসাস : এফেসাস শহরটাও তুরস্কের এজিয়ান অঞ্চলেই অবস্থিত। সম্ভবত এটি ইউরোপের সবচেয়ে পরিপূর্ণ ক্লাসিক্যাল মহানগরী। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের বৃহত্তর শহরগুলোর একটি ছিল এফেসাস। প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি, আর্টেমিসের মন্দির এখানেই অবস্থিত ছিল। এফেসাসের ধ্বংসাবশেষ একটি বিশাল প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট হিসেবে খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ কারণেই এফেসাস তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রকাণ্ড থিয়েটার, হাদ্রিয়ান মন্দির, দ্বিতল বিশিষ্ট বিশাল সেলসাস গ্রন্থাগার।

বোড্রম : প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি হচ্ছে মোসোলেয়াম, যা অবস্থিত ছিল তুরস্কের দক্ষিণ এজিয়ান অঞ্চল এই বোড্রমে। বর্তমানে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, সমুদ্রসৈকত ও পাহাড়ের চূড়ায় রেস্তোরাঁর জন্য বোড্রম বিখ্যাত। সেন্ট পিটারের দুর্গ না দেখলে আপনার বোড্রম ভ্রমণই বৃথা যাবে, যা বোড্রম ক্যাসেল নামেও পরিচিত। ১৪০২ খ্রিস্টাব্দে নাইট হসপিটালার এটি নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বোড্রমের পূর্বদিকে রয়েছে তুরস্কের বিখ্যাত নীল পানির সমুদ্রসৈকত। সৈকতের কাছেই পাবেন ক্যাফে, বার ও নাইট ক্লাব। আর পশ্চিমদিকে পাবেন মারিনা, শপিং সেন্টার এবং রেস্টুরেন্ট।

সাইড : প্রাচীন পামফিলিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর যা খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের অধীনে ছিল। সাইড বর্তমানে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ ও আধুনিক রিসর্ট সম্বলিত একটি দৃষ্টিনন্দন শহর। ছোট একটি উপদ্বীপে অবস্থিত সাইডে আপনি পাবেন অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতি, খাবার আয়োজন ও রাতের জাঁকজমক। এই শহরের মূল আকর্ষণ হল মাটি খুঁড়ে আবিষ্কৃত প্রাচীন হেলেনীয় এবং রোমান প্রকান্ড অ্যামপিথিয়েটার ও বিভিন্ন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। সরু রাস্তা এবং আকর্ষণীয় বাগানে সাজানো শহর সাইড জুড়েই আপনি পাবেন নামকরা পিজার দোকান ও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের খাবারের জন্য বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ।

মারমারিস : তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টগুলোর একটি মারমারিস। পাইন গাছে ঢাকা পাহাড়, সাদা বালির সৈকত, ফিরোজা নীল রঙের সমুদ্র এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্য সব মিলিয়ে হয়তো সবচেয়ে সুন্দর রিসোর্ট এটি। দক্ষিণ পশ্চিম তুরস্কের টার্কিশ রিভিয়েরার সাথেই এর অবস্থান। ওয়াটার স্পোর্টস, রোমাঞ্চকর কারসাজি, চমৎকার খাবারের আয়োজন ও জাঁকজমকপূর্ণ রাতের পরিবেশের জন্য পর্যটকদের কাছে মারমারিসের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এখানে আপনি পাবেন নৌকা ভ্রমণের আয়োজন, যাতে করে ঘুরে দেখতে পারবেন অসম্ভব সুন্দর এই উপসাগরীয় অঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চল। এতেও যদি আপনার মন না ভরে তবে দিনে দিনেই আপনি ঘুরে আসতে পারবেন ডালিয়ান, ইফেসাস, পামুকেলে ও ক্লিওপেট্রা দ্বীপ।

আন্টালিয়া : অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, বার এবং রেস্টুরেন্টে সাজানো বিশাল এক শহর আন্টালিয়া। ভূমধ্যসাগরের উপকূলে এই শহরের অবস্থান। শহরটির একদিকের সীমানাজুড়েই দর্শনীয় সমুদ্রসৈকত আর সবুজ পাহাড়। এর ভেতরে ভেতরে প্রাচীন স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ। সাঁতার কাটা, নৌকা চালানো, পর্বত আরোহণ এসব কিছুই পাবেন আন্টালিয়ায়। দেখার মতো স্থাপনার তালিকায় আছে কালেইচি, ওল্ড কোয়ার্টার, পুরানো শহরের দেয়াল, রোমান গেট, ধাঁধাময় প্রাচীন রাস্তা ও ক্লক টাওয়ার।

আঙ্কারা : তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা খুব আধুনিক একটি শহর। এই শহরেই রয়েছে অধিকাংশ সরকারি ভবন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশী দূতাবাস। দেশের ঠিক কেন্দ্রেই আনাতোলিয়া অঞ্চলে আঙ্কারা শহরের অবস্থান। দেশের কেন্দ্রে অবস্থিত ও রাজধানী হওয়ায় তুরস্কের অন্য যে কোনো স্থানে যাওয়ার সহজ উপায় পাওয়া যাবে এই শহর থেকেই। অ্যানাটোলিয়ান সভ্যতার জাদুঘরসহ আরো অনেক দর্শনীয় জাদুঘর রয়েছে এই শহরে। যেখানে আপনি খুঁজে পাবেন শিল্প ও সংস্কৃতির বিশাল ভান্ডার।

মারডিন : তুরস্কের মারডিন প্রদেশের রাজধানী হচ্ছে মারডিন। দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের মেসোপটেমিয়া সমভূমিকে ছাড়িয়ে পাহাড়ের চূড়ায় এর অবস্থান। এই অঞ্চলের প্রাচীনতম বসতির একটি মারডিন। পাহাড়ের গায়ে লেপটে থাকা বেলেপাথরে তৈরি ভবনের পুরনো শহর ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য সুপরিচিত এই অঞ্চল। পায়ে হেঁটেই আপনি এই শহর ঘুরে দেখতে পারবেন। আঁকাবাঁকা ধাঁধাময় রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আপনার চোখে পড়বে ঝুলন্ত বারান্দা ওয়ালা পুরনো বাড়িঘর। পুরনো এসব বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে ঘুরতেই আপনার চোখে পড়বে দেইরুজ জাফারান নামের পৃথিবীর অন্যতম পুরনো আশ্রম এবং সুলতান ইশা মেডেসেসি নামের মধ্যযুগীয় স্থাপনা, যা একসময় ব্যবহার হতো জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণাগার হিসেবে।

কনিয়া : বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলোর মধ্যে কনিয়া একটি। অসাধারণ সেলজুক স্থাপত্য ও ঘূর্ণায়মান সুফি দরবেশদের জন্য এই শহর সুপরিচিত। তুরস্কের মধ্য আনাতোলিয়া অঞ্চলের বড় একটি শহর কনিয়া। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকে সেলজুক রাজবংশের শাসনামলে রাজধানী শহর হিসাবে স্বীকৃতি পায় কনিয়া। সেই সময় স্থাপিত আলাউদ্দীন মসজিদ ও সেলজুক প্যালেস এখনো প্রশংসার দাবি রাখে। ফার্সি ধর্মতত্ত্ববিদ ও সুফি ব্যক্তিত্ব রুমির দরগা কনিয়ার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। রুমির অনুসারীরাই মেভলেভি অর্ডারের উদ্ভাবক। যেটিকে আমরা ঘূর্ণায়মান দরবেশ হিসেবেই ভাল চিনি। এই অনুসারীরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পা অব্দি সাদা রঙের গাউন পড়ে বাঁ পায়ে ভর করে ঘুরতে থাকে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!