• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বিএনপি


বিশেষ প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯, ০২:৫৩ পিএম
ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বিএনপি

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবিশ্বাস্য ফল বিপর্যয়ের পর তেমন কোনো কর্মসূচিই দিতে পারেনি বিএনপি। এখন দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করেছে দলটি। দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে বিপর্যস্ত বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াতে চায়। এ জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কাউন্সিল করে ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে চাইছে দলটির হাইকমান্ড।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দল গোছানোর কাজ শুরুর পাশাপাশি হাজারো মামলায় গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করার উদ্যোগ হিসেবে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এজন্য ধানের শীষের প্রার্থীদের নিজ নিজ আসনে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সার্বিক তথ্য-উপাত্ত কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিএনপি সিনিয়র নেতারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দলকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। তাই সংগঠন গোছানো ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে জেল-জুলুমের শিকার নেতাকর্মীদের পাশে থেকে তাদের মনোবল বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ প্রক্রিয়ায় মূল দলের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটি থেকে শুরু করে ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি নতুন করে গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢেলে সাজানো হচ্ছে সমর্থনপুষ্ট পেশাজীবী সংগঠনগুলোকেও। এরই মধ্যে দীর্ঘদিনের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (অ্যাব)। তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার। বাকি সংগঠনগুলোতেও নতুন কমিটি গঠনের কাজ চলছে বলে জানা গেছে। এসব কমিটিতে প্রত্যাশীরাও দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিএনপির তৃণমূল পর্যায়েও হতাশা বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে দলকে বের করে আনতে চেষ্টা করছে বিএনপি। দল গোছানোর লক্ষ্যে দ্রুত দলীয় ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কাউন্সিল করতে চাইছেন তারা। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে মনোযোগী বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘নির্বাচনী কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম তেমন একটা হয়নি। আমাদের হাতে দলকে সুসংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। আমরা সেই কাজ করছি। এটা চলমান থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনের পাশাপাশি দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দেওয়া হবে।’

দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি বাকি সংগঠনগুলোতে হাত দেয়া হবে। ড্যাব, অ্যাবের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। এরপর হয়তো কৃষকদল, শ্রমিক দলসহ অন্য যেসব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন আছে ধারাবাহিকভাবে নতুন কমিটির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

মেয়াদ ফুরানো অঙ্গ-সংগঠন বেহাল : ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংগঠনটির কমিটি আড়াই বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমও সেইভাবে নেই বললেই চলে।

সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে তাদের কার্যকর কোনো ভ‚মিকা ছিল না বলে অভিযোগ আছে। নতুন কমিটির দাবিতে বিএনপির শীর্ষ মহলের সঙ্গে দফায় দফায় চেষ্টাও চালাচ্ছে ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশীরা। সহসাই নতুন কমিটি হতে পারে এমন গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে।

শুধু ছাত্রদলই নয়, বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় সবগুলোরই বেহাল অবস্থা। বেশ কয়েকটি মেয়াদোত্তীর্ণ। নেই কোনো চেইন অব কমান্ড। নেতৃত্বের কোন্দলে বিশৃঙ্খলাও বিরাজ করছে সংগঠনগুলোতে।

দুই বছর ধরে আংশিক কমিটিতেই আটকে রয়েছে বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কারাগারে থাকায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যাচ্ছে না বলে দাবি সংগঠনটির দায়িত্বশীলদের। যদিও এক মাসের মধ্যে কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে তারা দেশের অন্যান্য ইউনিটের বেশির ভাগ জায়গায় কমিটি ঘোষণা করেছে।

২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটিকে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও আড়াই বছরের বেশি সময়েও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি তারা। অবশ্য তারা জেলা পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা করেছে। বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দলের কমিটি করা হয় ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে। প্রায় তিন বছর ধরে কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। সংগঠনের কার্যক্রমও নেই বললে চলে।

সর্বশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে কৃষক দলের কমিটি হয় ১৯৯৮ সালের ১৬ মে কৃষক দলের কমিটি করা হয়। এরপর ২০ বছর ধরে কৃষক দলের কোনো কমিটি নেই। কিন্তু টানা ২৮ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন শামসুজ্জামান দুদু। তিনি এখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানও। মাঠপর্যায়ে কৃষক দলেরও একই অবস্থা। বিগত আন্দোলন সংগ্রামেও কৃষক দলের কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান ছিল না। সংগঠনটির নেতাকর্মী যাদের দেখা যায়, তাদের আশঙ্কা কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি জরুরি। না হলে সংগঠন থাকবে না।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মহিলা দলের কমিটি দেওয়া হয়। কিন্তু দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। তবে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে পুরুষ কর্মীদের চেয়ে মহিলা দলের কর্মীরা কিছুটা হলেও দৃশ্যমান ছিলেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা দল, ওলামা দল, জাসাস, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলের হালচালও একই রকম। এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে কমিটির জন্য চেষ্টা করলেও এখনো কোনো ফল আসেনি।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব গড়ে উঠত এবং দলের মূল শক্তি মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরাও মতামত দিতে পারতেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছি। দলকে শক্তিশালী করতে সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি, এটা চলবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!