• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন শুরু আজ

চমক আসবে এবার তরুণ-প্রবীণের


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২০, ২০১৯, ০৬:০৩ পিএম
চমক আসবে এবার তরুণ-প্রবীণের

ঢাকা : দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দুদিনের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আজ থেকে শুরু হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলটির এবারের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের স্লোগান ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মেলনকে ঘিরে সারা দেশেই দলটির মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক শীর্ষ নেতা দলীয় পদ থেকে বাদ পড়তে পারেন। কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নতুন মুখকে ঠাঁই করে দিয়ে প্রবীণ ও তরুণদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠন করে চমক দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।

পদ পেয়েও নিষ্ক্রিয় থাকা, নানা কারণে বিতর্কিত, চাঁদাবাজদের প্রশ্রয়দাতা ও অভিযুক্তরা বাদ পড়ার বিষয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়েও আলোচনা চলছে। সভাপতি ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য যে কোনো পদে আগামীতে পরিবর্তন আসতে পারে, এমন আভাস ইতোমধ্যে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শুধু দলেই শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, এমন নয়। রাষ্ট্র পরিচালনায়ও তার মতো দক্ষ, দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতা দেশে নেই বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগকে চান দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকরা।

কয়েকবার অবসরের ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা। এবারো তিনিই দলের সভাপতি থাকছেন তা প্রায় নিশ্চিত।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সবসময়ই নতুনদের অগ্রাধিকার দেয়। দলের বিগত সম্মেলনগুলোর মধ্য দিয়ে গঠিত কমিটি বিশ্লেষণ করলে তা প্রমাণিত হয়। এবারের সম্মেলনেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না।’

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। এখন ঐতিহ্যবাহী এ দলের বয়স ৬৭ বছর। এ পর্যন্ত দলটির ২০টি কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ২০তম জাতীয় সম্মেলন ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের হাল ধরার পর থেকে গত প্রায় চার দশক ধরে প্রতিবার কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদ সাধারণ সম্পাদক নিয়ে আলোচনা বেশি থাকে। এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কে হচ্ছেন দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক-এ প্রশ্ন এখন খুব বেশি আলোচিত।

দলের আগামী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতির সিদ্ধান্তের ওপর। সাধারণ সম্পাদক পদে সাম্প্রতিক অতীতে নির্বাচন হয়নি, সমঝোতার মাধ্যমেই নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এবারো এর ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কাকে করা হতে পারে, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠজনদের ধারণা দিয়ে থাকেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার এ ধরনের ইঙ্গিত বা ধারণা দলের শীর্ষ নেতারা এখনো পাননি।

কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তিন-চারদিন আগে থেকে হঠাৎ করে নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়ায়, দলীয় প্রধান সবাইকে চমকে দিতে এবার গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজমতউল্লাহ খানকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিতে পারেন। এর আগে তিনি সেভাবে আলোচনায় ছিলেন না।

সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একই পদে থাকছেন বলেও আলোচনা জোরালো হয়ে উঠছে। কাদের ও আজমতউল্লাহসহ সাধারণ সম্পাদক পদে সাত থেকে আটজনের নাম আলোচনায় আছে।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নামও এবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছে।

কিছু কারণ মিলিয়ে অনেকে মনে করেন, ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক পদে আবারো রাখা হতে পারে।

অনেকে বলছেন, সাধারণ সম্পাদক পদে এবার নতুন মুখের সম্ভাবনা আছে। আবার অতীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব যারা পালন করেছেন, তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও আবদুল জলিল এক মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাকিরা এ পদে কয়েক মেয়াদে থেকেছেন।

সাধারণ সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধু পাঁচবার, তাজউদ্দীন আহমদ তিনবার, জিল্লুর রহমান চারবার, আবদুর রাজ্জাক দুবার, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুবার ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুবার দায়িত্ব পালন করেন। ওবায়দুল কাদেরও শুধু এক মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক। দলের অতীত ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় তাকে আবারো এ পদে রাখা হতে পারে।

সরকারি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নারীর সংখ্যা বাড়ছে, এমন আভাস পাওয়া গেছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় পদে নতুন নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

দলের ১৭ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলী ও বর্তমান ৪৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদে এবার নারীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

নারীরা দায়িত্ব পেতে যাওয়ায় প্রভাবশালী ও নানা কারণে অভিযুক্ত বেশ কয়েক নেতা এবার দলের কেন্দ্রীয় পদ থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নারী নেত্রীর মাঠে রাজনৈতিক অর্জন, নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও বিশেষ করে গত প্রায় এগারো বছর দল টানা সরকারে থাকাবস্থায় কর্মকাণ্ড ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হয়েছে।

দলটির গত কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সম্পাদকমণ্ডলীতে শাম্মী আহমেদ, রোকেয়া সুলতানা ও শামসুন নাহার চাপার স্থান পাওয়া ছিল অনেকটাই চমক। এবার কেন্দ্রীয় কমিটির বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের ১৯টি পদের মধ্যে প্রায় ৮ থেকে ১০টিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। এসব পদে নতুন মুখসহ বর্তমান কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের কেউ কেউ দায়িত্ব পেতে পারেন।

নারীদের মধ্যে গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাগুপ্তা ইয়াসমিন, মানিকগঞ্জ-২ আসনের মমতাজ বেগম, গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি, সংরক্ষিত আসনের আওয়ামী লীগের কোটায় সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য মাহজাবিন খালেদ, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী ও নূরজাহান বেগম মুক্তা প্রমুখকে নিয়ে আলোচনা আছে।

সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা, জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, দলের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান, শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার, ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের মেয়ে সুজাতা হক ও মহিলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি রওশন জাহান সাথীও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে পারেন বলে আলোচনা আছে।

তরুণদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার বিপুলসংখ্যক নতুন মুখকে স্থান দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তরুণ নেতারাই প্রাধান্য পাচ্ছেন বলে আভাস দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা।

ছাত্রলীগের সাবেক ত্যাগী নেতা, দলের দুর্দিনে সাহসী ভূমিকা রাখা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সাবেক নেতা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের নাম আছে আলোচনায়।

তারা হলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্না, দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুর রাজ্জাকের বড় ছেলে নাহিম রাজ্জাক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী, লিয়াকত সিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল,  যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, কৃষক লীগের বিদায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল জন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও অভিনেতা ফয়সাল আহসানউল্লাহ প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!