• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চমকের মন্ত্রিসভায় যোগ হচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট!


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ২, ২০১৯, ০১:০৫ পিএম
চমকের মন্ত্রিসভায় যোগ হচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট!

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতদের মন্ত্রিসভায় রাখার কথা ভাবছে সরকার। ফ্রন্টের অন্তত দুজনকে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে থাকার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় সংসদের বিভিন্ন পদে তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে সরকারের। ফ্রন্টের নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই তাদেরকে মন্ত্রিসভা, সংসদীয় কমিটি ও সংসদের পদে থাকার প্রস্তাব পাঠানো হতে পারে।

তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা থাকায় সিদ্ধান্ত নিয়েও মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের সময় পেছায় সরকার। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কিছু পদও বিরোধীমতের সংসদ সদস্যদের জন্য ফাঁকা রাখা হয়। সরকারবিরোধীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে উন্নত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করার লক্ষ্যে এমন চিন্তাভাবনা করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানায়।

সূত্র মতে, ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত আটজনের মধ্যে সাতজন সোমবার (১ এপ্রিল) পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি। নির্বাচিত কেউ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ যোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ঐক্যফ্রন্টের সদস্যরা শপথ না নেওয়ায় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হয়নি। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে ও মার্চের প্রথম সপ্তাহ বা মাঝামাঝি সময়ে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ছিল সরকারের।

ঐক্যফ্রন্টের সদস্যদের মন্ত্রিসভায় রাখার পরিকল্পনা থাকায় সংসদ সদস্য হিসেবে তাদের শপথ নেওয়া পর্যন্ত সরকার অপেক্ষা করতে চায় বলে এই বিলম্ব। বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রথম দফায় সম্প্রসারণের সময় শুধু ঐক্যফ্রন্ট থেকে নয়, আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক সংসদ সদস্যও ঠাঁই পাবেন বলে জোর আলোচনা আছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের ‘চমকের’ মন্ত্রিসভায় দলটি থেকে নির্বাচিত জনপ্রিয় ও নতুনদের দ্বিতীয় দফায় যোগ করার পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে চমক দিতে চায় সরকার। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মন্ত্রিসভায় নতুন করে কারা স্থান পাচ্ছেন। তবে মন্ত্রিসভায় নতুন কারা স্থান পাচ্ছেন, তা একান্তই দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যাদের চাইবেন, তাদেরই জায়গা হবে নতুন করে। প্রধানমন্ত্রী ও তার দফতরই নির্ধারণ করবে কখন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ নেওয়া হবে। সংবিধানই প্রধানমন্ত্রীর এ ক্ষমতা নিশ্চিত করে।

তথ্য মতে, সরকারি দল ও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে শপথ নিয়ে সংসদে আসার আহ্বান জানানো হলেও বিএনপির কেউ এখনো সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ‘সংখ্যায় কম হলেও’ বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ নিয়ে সংসদে আসার আহ্বান জানান। গত ২ ফেব্রুয়ারি গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানানো হয় ঐক্যফ্রন্টকে। তবে তাতে অংশ নেননি ফ্রন্টের নেতারা। ‘নেতিবাচক রাজনৈতিক অবস্থান’ থেকে সরতে না চাওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের এমন রাজনৈতিক অবস্থান বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের।

সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, ঐক্যফ্রন্টের সবাই শেষ পর্যন্ত শপথ নেবেন। নির্বাচিত আটজনের মধ্যে বাকি সাতজন শপথ না নিয়ে সরকারকে এক ধরনের ‘রাজনৈতিক চাপে’ ফেলার যে কৌশল বিএনপি নিয়েছে, সেখান থেকে দলটি সরে আসবে। ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খানের মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা।

একই দলের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর গত ৭ মার্চ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা নির্ধারিত সময়ে বা কখন শপথ নেন, আওয়ামী লীগের নজর এখন সেদিকে। নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নেওয়ার বাধ্যবাধকতার সময় বাড়ানোর সুযোগ নিয়েও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নেওয়ার নির্ধারিত সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ সংবিধানে আছে কি না, এ নিয়েও দলের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা আছে। নির্দিষ্ট কারণ থাকলে স্পিকার শপথের সময় বাড়াতে পারেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ চায়, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে ৯০ দিনের মধ্যে বিএনপির নির্বাচিতরা শপথ না নিলেও তাদেরকে শপথের সময় দিতে। ৯০ দিনের মধ্যে শপথের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী বিএনপির সদস্যের সামনে চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় আছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ মনে করেন, সুলতান মনসুরের পথ ধরে বিএনপির নির্বাচিত বাকিরাও অচিরেই শপথ নেবেন। তিনি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েই সংসদে যোগ দিয়েছেন। তার নির্বাচনি এলাকার জনগণের ভোটের মান রেখেছেন। সুলতান মনসুরের পথ ধরবেন ঐক্যফ্রন্টের বাকিরাও।

অন্যদিকে গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ধানের শীষ প্রতীকে (বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক) অংশ নেওয়া ঐক্যফ্রন্টের ৭৪ প্রার্থী উচ্চ আদালতে নির্বাচনী মামলার আবেদন করেন। আবেদনে তারা ওই নির্বাচন বাতিল চান। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থীরা নির্বাচনী মামলা করেন। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনে ভরাডুবির পর ফল প্রত্যাখ্যান করে ফ্রন্ট। পরে তিনশ আসনে অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার ঘোষণা দেয় ফ্রন্ট। পরাজিত প্রার্থীদের আগ্রহ না থাকায় ওই অবস্থান থেকে প্রথমে সরে আসে ঐক্যফ্রন্ট।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রায় ৫০ জেলার নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্স করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মামলা করার। মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে সুবিচার না পেলেও নির্বাচন ইস্যুতে জনগণের কাছে দলের অবস্থান তুলে ধরতে চায় দলটি। এছাড়া মামলা দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ওই নির্বাচনের ‘গ্রহণযোগ্যতার’ প্রশ্ন তুলে ধরতেও কাজে লাগাতে চায় দলটি।

তবে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে উচ্চ আদালতে দায়ের করা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মামলা আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। মামলায় ‘ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ’ আনা হলেও এসব বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল বিব্রত নয়। মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে প্রধান প্রতিপক্ষ আপাতত কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে পারবে বলে মনে করেন না দলটির শীর্ষ নেতারা। ঐক্যফ্রন্ট ‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এসব মামলা’ করেছে বলে মনে করে দলটি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!