• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি বছরে প্রশাসনে যত কেলেঙ্কারি


নিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৯:৩৬ পিএম
চলতি বছরে প্রশাসনে যত কেলেঙ্কারি

ঢাকা: ২০১৯ সাল শেষ হতে মাত্র ৩ দিন বাকি। আর বছরের নানা ঘটনা প্রবাহে মহাকালের গর্ভে ঠাঁই করে নিয়েছে নানা কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতি। এতে জড়িয়ে ছিল প্রশাসনও। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নারী কেলেঙ্কারিসহ কয়েকটি নেতিবাচক ঘটনায় বছরভর প্রশাসনে ছিল অস্বস্তি। বিদায় নিতে যাওয়া বছরে প্রশাসনে সমালোচনার শীর্ষে ছিলেন- পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান, কারা সেক্টরের ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ শংকর বণিক, ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রশীদ, সাবেক ডিসি আহমেদ কবীর ও দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছির এবং সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

ডিআইজি মিজানুর রহমান: নারী কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির অভিযোগে দেশজুড়ে আলোচিত হন পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান। জোর করে এক নারীকে বিয়ে করে তা গোপন রাখতে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্তে নামে দুদক। দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলে নতুন করে বিতর্কে আসেন এই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। 

গত ২৪ জুন তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলা করে দুদক। এরপর গত ১ জুলাই হাইকোর্টে যান জামিন নিতে। কিন্তু হাইকোর্ট তার জামিন আবেদন খারিজ করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। পরদিন তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় ২২ জুলাই দুদকের সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে তিনিও কারাগারে আছেন।

পার্থ গোপাল বণিক: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালন করার সময় ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ২৮ জুলাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। পরে ঘুষ ও দুর্নীতির কয়েক লাখ নগদ টাকা বাসায় রয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়ে দুদকের একটি দল রাজধানীতে তার ধানমণ্ডির ভূতেরগলি বাসায় অভিযান চালায়। বণিকের ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুদক। এর পরেই তাকে আটক করা হয়। পরদিন দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।

বজলুর রশীদ: কারা অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত টাকা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে স্ত্রীকে পাঠানোর বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। এরই অংশ হিসেবে বজলুর রশীদ ও তার স্ত্রীকে গত ২০ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদে ডাকে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেপ্তার করে দুদক টিম। গ্রেপ্তারের আগে তার বিরুদ্ধে দুদক কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দায়ের করা হয়। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

সাবেক ডিসি আহমেদ কবীর: চলতি বছরের (২০১৯) আগস্ট মাসের শেষের দিকে জামালপুরের তখনকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে ডিসির সঙ্গে তার অফিসের এক নারীকর্মীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। এতে তুমুল সমালোচনার মুখে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে গত ২৫ আগস্ট আহমেদ কবীরকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তারপর তদন্ত শেষে ২৫ সেপ্টেম্বর আহমেদ কবীরকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

মোয়াজ্জেম হোসেন: মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

এরপর আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা মামলাটি তদন্ত করে ২৩ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তার ২০ দিন পর ১৬ জুন মোয়াজ্জেমকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে একই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন একই বিচারক। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।

এছাড়া, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী জাকিয়া ইসলাম অনু অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায়, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এএসআই সাদেকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২ মেয়ের পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য উচ্চ আদালতের এক বিচারপতির স্ত্রীর কাছে ২ হাজার টাকা ঘুষ দাবির মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!