• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চা শিল্প বিকাশে নতুন সম্ভাবনা


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২, ২০১৯, ১১:০৫ এএম
চা শিল্প বিকাশে নতুন সম্ভাবনা

ঢাকা : চায়ের আদি জন্মভূমি চীন দেশে হলেও চা এখন বাংলাদেশের অন্যতম বড় শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে এ শিল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে চায়ের চাষ। অর্থনীতিকে দেখাচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম চা রফতানিকারক দেশের অবস্থানে থাকলেও পরবর্তী সময়ে উৎপাদন ও রফতানি ক্রমেই কমতে থাকে। তবে আশার খবর হলো, ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশাব্যঞ্জক হারে বাড়ছে চায়ের বাজার। দেশে এখনো মোট পানীয় পণ্যের ৭৬ শতাংশই চা। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্বের মোট চাহিদার ৩ শতাংশ পূরণ করছে বাংলাদেশের চা। বাংলাদেশে উৎপাদিত চা দুই দশক আগেও বিশ্বের ২০-২২টি দেশে রফতানি করা হতো।

বর্তমানে বিশ্বের ১৭টি চা রফতানিকারক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৫। রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশের চা সৌরভ ছড়াচ্ছে আফগানিস্তান, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ফ্রান্স, গ্রিস, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইতালি, ভারত, ইরান, জাপান, জর্ডান, কুয়েত, কাজাখস্তান, মিসর, ওমান, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, রাশিয়া, স্লোভাক প্রজাতন্ত্র, সুদান, সাইপ্রাস, সুইজারল্যান্ড, উজবেকিস্তান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে। এসব দেশে বাংলাদেশের চা বিশেষত ‘সিলেট টি’ নামেও খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশে চা উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ইস্পাহানি চা, তাজা চা, সিলন চা, কাজী চা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল টি।

দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশে প্রায় সাত লাখ লোক চা শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। যার মধ্যে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার শ্রমিকই আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। জিডিপিতে চা খাতের অবদান শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। আমাদের দেশে বর্তমানে চায়ের বাজার কমবেশি সোয়া দুই হাজার কোটি টাকার। আরো আশার খবর হলো, গত ১০ বছরে দেশের উত্তরাঞ্চল ও পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র পরিসরে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে চায়ের বাড়তি আবাদ ও উৎপাদন করা হয়েছে। সেখানে উন্নতর ক্লোন জাতের চায়ের চারাগাছ লাগানো হয়েছে। ফলনও হচ্ছে ভালো।

চা বোর্ডে তথ্য অনুযায়ী, চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের চেষ্টায় বর্তমানে চায়ের ১৮টি উচ্চফলনশীল ক্লোন, চারটি বাই ক্লোনাল ও একটি পলি ক্লোনাল বীজ উদ্ভাবিত হয়েছে। এসব ক্লোন জাতের টি অধিক চা উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। চা উৎপাদনে নতুন আশার খবরটি হলো- সমতল এলাকায় চা চাষে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। পঞ্চগড় জেলাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে যেখানে তামাকের চাষ হতো সেসব এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চায়ের আবাদ বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে চায়ের আবাদ বিস্তৃতির পাশাপাশি উৎপাদন ও রফতানির ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নতুন নতুন এলাকায় গড়ে উঠছে চা বাগান।

দেশের চা শিল্পের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৮৫৭ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা-চাষ শুরু হয় সিলেটের মালনীছড়ায়। প্রচলন আছে ব্রিটিশরা ফ্রি চা খাওয়ানোর মাধ্যমে বাঙালিকে নিত্যদিনের অভ্যাসে আসক্ত করেছে চা, যা কালক্রমে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণের ফলে মানুষের চা পানের প্রবণতা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। দেশে গড়ে অভ্যন্তরীণ ভোগ তিন দশমিক ৮৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সে তুলনায় চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়নি।

চাহিদা ও সম্ভাবনার দিক বিবেচনায় চা উৎপাদন এবং রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের রূপকল্প-২০২১ বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ চা বোর্ড ৯৬ হাজার ৭৩৫ দশমিক ৭০ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ১২ বছর মেয়াদি একটি কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। যার মাধ্যমে বাগানে অব্যবহূত চা চাষযোগ্য জমিতে চা সম্প্রসারণ, অনুন্নত চা বাগানের উন্নয়ন, চা চাষাধীন অলাভজনক জমি পুনরাবাদ, চা বাগানের কারখানা সুষমকরণ ও আধুনিকীকরণ, প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট জোরদারকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।

পাশপাশি বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট জোরদারকরণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, চা বাগানের সেচ সুবিধা বর্ধিতকরণ, চা বাগানের শ্রমিককল্যাণ এবং চা বাগানের ব্যবস্থাপনা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন করা হবে। আবার বাংলাদেশের চা শিল্পের উন্নয়নের জন্য কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা ‘ভিশন ২০২৫’-এর বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। এর আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে বার্ষিক ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের মাইলফলক অতিক্রমের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ লক্ষ্য পূরণের জন্য বৃহদায়তনের বাগানের পাশাপাশি ক্ষুদ্রায়তনের জমিতে চায়ের আবাদ বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। দেশের সাতটি জেলায় প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে চা আবাদের লক্ষ্য হাতে নেওয়া হয়েছে। এখানকার আরো চার হাজার ৬৯৮ হেক্টর অনাবাদি জমিতে এক কোটি ২০ লাখ কেজি চা উৎপাদন করা সম্ভব। (দেশের চা শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে আরো বিস্তারিত পড়ুন আজ পৃষ্ঠা-৫ এর কৃষি ও অর্থনীতি পাতায়।)

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!