• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাপে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২, ২০১৮, ০৭:৩৭ পিএম
চাপে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড

ঢাকা : বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অব্যাহত দাম বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ওপর চাপ বাড়ছে। কারণ তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে দেশের মোট বিদ্যুতের প্রায় ৩৩ শতাংশ (ক্যাপটিভ বাদে) আসে। ডিজেলচালিত ওসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি তেলের দাম বিপিডিবি পরিশোধ করে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ওসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের বাড়তি দাম পরিশোধে বিপিডিবির উপর আরো চাপে পড়ছে। এমনিতেই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে বিপিডিবি আর্থিকভাবে ন্যুব্জ হয়ে আছে।

 বিগত ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিপিডিবির লোকসানের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আর্থিক সংকটের কারণে বেসরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ওই প্রতিষ্ঠানটি। বিপিডিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে জ্বালানি তেলের দাম। অক্টোবরের শুরুর দিকেই প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৮৬ ডলারে উঠেছিল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা আগামী বছরের শেষ নাগাদ তা ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে।

বিগত ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের উপরে উঠেছিল। তবে পরবর্তী সময়ে তা কমতে থাকে এবং ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারের নিচে নেমে আসে। গতবছরের নভেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবারো বাড়তে শুরু করে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অন্যতম জোগানদাতা ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে শেল অয়েলের উৎপাদন কমে যাওয়াতেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। তাছাড়া জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকও উৎপাদন কমিয়ে পণ্যটির দাম বাড়াতে চাইছে। ইতিমধ্যে তার ফলাফলও দেখা যাচ্ছে। গত অক্টোবরেই প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ৯০ ডলারের কাছাকাছি চলে যায়।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অব্যাহত দাম বৃদ্ধি বিপিডিবির আর্থিক চাপ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপিডিবির ভর্তুকির পরিমাণ এখনকার দ্বিগুণ করতে হবে। তা না হলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে।

আর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অন্যান্য খাত, সর্বোপরি দেশের অর্থনীতির ওপর। যদিও পৃথিবীর কোথাও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সম্পর্ক নেই। অনেক আগেই ওসব দেশ জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎকে আলাদা করে দিয়েছে। কিন্তু এদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখনো জ্বালানি তেলের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ওই কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের দামও বেড়ে যায়। অর্থনীতির জন্য যা ঝুঁকিপূর্ণ।

সূত্র আরও জানায়, ক্যাপটিভ পাওয়ারসহ (৩৪০০ মেগাওয়াট) দেশে বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার ৪৩০ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক সাড়ে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ওই বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস, ফার্নেস ও ডিজেল অয়েল, হাইড্রো এবং কয়লা- এ চার ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করা হচ্ছে। তা মধ্যে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে ৩৩ শতাংশ বিদ্যুৎ, যার উৎপাদন ব্যয় গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের চেয়ে অনেক বেশি।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে গ্যাসভিত্তিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্রয়ে পিডিবির ব্যয় হয়েছে মাত্র ২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৫৩ পয়সা। যদিও একই সময়ে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিপরীতে পিডিবির গড় ব্যয় হয়েছে ১১ টাকা ২৩ পয়সা। আর ডিজেলভিত্তিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ হয়েছে গড়ে ২৭ টাকা ২৭ পয়সা, যা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের চেয়ে ৪ গুণ থেকে ১২ গুণ পর্যন্ত বেশি।

এদিকে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দরবৃদ্ধি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। ২০১৯ সাল শেষ নাগাদ তা ১১৮ ডলারে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) মনে করছে, ২০১৯ সালে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম বর্তমানের চেয়ে গড়ে দেড় থেকে ২ ডলার বাড়তে পারে। আর যুক্তরাষ্ট্রে শেল অয়েল ও ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় উৎপাদন বাড়লেই কেবল জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এমন পর্যায়ে থাকবে বলে তারা জানিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে শেল অয়েলের উৎপাদন ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয় উল্লেখ করে বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ জানান, তাতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ওই দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে গ্রাহককে দিতে গেলে বিপিডিবির ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে। সেক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে বাজেটারি সাপোর্ট বা ভর্তুকির বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!