• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চামড়া সিন্ডিকেটের হোতা আ.লীগের নেতা : রিজভী


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৩, ২০১৯, ০৯:৪৭ পিএম
চামড়া সিন্ডিকেটের হোতা আ.লীগের নেতা : রিজভী

ঢাকা : ক্ষমতাসীন দলের ‘সিন্ডিকেটের কারসাজিতে’ কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম কমিয়ে ‘পাশের দেশে পাচার’ করা হচ্ছে বলে অভিযো্গ করেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে কোরবানির ঈদের পরদিন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার অজুহাতে একটি সিন্ডিকেট বেশ কয়েক বছর ধরেই চামড়া নিয়ে কারসাজি করছে।

এই সিন্ডিকেটের হোতা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা। যার কারণে তাদেরকে চামড়া নিয়ে অনাচার করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এই চক্রের স্বার্থ রক্ষা করছে নিশুতি সরকার।

বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন ট্যানারিতে। এ সময়ই সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা।  

প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য ন্যূনতম দাম ঠিক করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ট্যানারি মালিকদের দাবিতে গত বেশ কয়েক বছর ধরে ওই দাম কমতির দিকে।

এবার ঈদের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গতবছর কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার যে দাম সরকার ঠিক করে দিয়েছিল, এবারও সেটাই রাখা হয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনবেন ব্যবসায়ীরা। আর খাসির কাঁচা চামড়া সারাদেশে ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা দরে কেনাবেচা হবে।

কিন্তু এবারও ঈদের দিন বিকালে চামড়ার দাম পড়ে গেলে ‘সিন্ডিকেটের কারসাজির’ অভিযোগ তোলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সরকারের বেঁধে দেওয়া ওই দামকে ‘হাস্যকর’ বলেন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার বর্গফটু প্রতি একটা হাস্যকর দাম বেঁধে দিয়ে ওই সিন্ডিকেটকে সহায়তা করছে। এই অল্পদামের চামড়া ব্যাপকভাবে পাচার হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশে।

এই বিএনপি নেতা দাবি করেন, তাদের সরকারের আমলে যে চামড়ার কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি হত, এখন তা বিক্রি হচ্ছে দুই-তিনশ টাকায়।

৮০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়ার দাম এবার ২২০ টাকা, এক লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ২২৫ টাকায়। সব জিনিসের দাম হু হু করে বাড়লেও দফায় দফায় কমতে কমতে দশ ভাগের এক ভাগে নেমেছে গরীব-মিসকিনের হক এই কাঁচা চামড়ার দাম।

এমন করুণ অবস্থা দেখে সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি না করে নীরব প্রতিবাদ হিসেবে কোরবানির চামড়া মাটির নিচে পুঁতে রাখছেন অনেকে।

যেভাবে পাট শিল্প ‘ধবংস করা’ হয়েছে, ঠিক সেই পথেই বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পকে ‘ধ্বংস করা হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন রিজভী।

তিনি বলেন, সুইস ব্যাংকে আর কত টাকা পাঠানো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের জনগণ মুক্তি পাবে? আজ জনগণের সরকার নেই বলেই এভাবে জনগণের সর্বনাশ করা হচ্ছে।

এবার ঈদযাত্রায় জনদুর্ভোগ নিয়ে দুই মন্ত্রীর দুই রকম কথার সূত্র ধরেও সরকারের সমালোচনা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব যখন ঈদযাত্রাকে স্বস্তিদায়ক আর আনন্দ যাত্রা বলছেন, তখন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রোববার ফেইসবুকে পোস্টে তুলে ধরেছেন ঈদে বাড়ি ফেরার ভোগান্তির কথা। শাহরিয়ার আলম লেখেন, ‘আমার ট্রেন ১৫ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ল। শিডিউলে থাকা অনেক প্রোগ্রাম মিস করলাম। দুই দিন ধরে টিভিতে দেখলাম মানুষের ভোগান্তি, এগুলো আমাকে অনেক ভাবিয়েছে। আজকে নিজের চোখেও দেথলাম।

রিজভীর ভাষায়, সেতুমন্ত্রী কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে মানুষের চোখকে বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করলেও ভুক্তভোগী মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ঘরে ফেরার যন্ত্রণা।

ঢাকা থেকে কোন গন্তব্যে যেতে কত সময় লেগেছে- তার একটি খতিয়ান সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে তুলে ধরে এই বিএনপি নেতা বলেন, এরপরও সেতুমন্ত্রী সাফাই গাইছেন নিজের সাফল্যের, এরকম নির্লজ্জ আচরণ দেশবাসী আর কখনো দেখেনি। যতদিন তিনি সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রী আছেন, প্রতিটি ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের নাকের পানি, চোখের পানি এক করে ছাড়বেন।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/এমটআই

Wordbridge School
Link copied!