• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চার দেশে যান চলাচল উদ্যোগ অনিশ্চিত


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০১৬, ০৭:৩১ পিএম
চার দেশে যান চলাচল উদ্যোগ অনিশ্চিত

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রতিবেশী চার দেশের মধ্যে যান চলাচলের উদ্যোগ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তা চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের  মধ্যে চলতি মাসে সীমিত আকারে সড়ক যোগাযোগ শুরুর বিষয়টিও স্থবির হয়ে পড়েছে। চার দেশে যান চলাচলের ক্ষেত্রে মূলত নেপাল ও ভুটান প্রস্তুত না হওয়ার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চার দেশের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল শুরু করতে বাংলাদেশ ও ভারত ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে। এমনকি যান চলাচলের মাসুল নির্ধারণের বিষয়েও দেশ দু’টির মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা হয়েছে। তবে নেপাল ও ভুটানের সংসদে বিবিআইএন মোটর ভেহিকল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) চুক্তি এখনো রেটিফাই হয়নি। সে কারণে কত দিনে চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে তা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সংশয়ে রয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ফেব্রুয়ারির আগে ভুটানের সংসদে চুক্তিটি অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে নেপালের নতুন সরকার কত দিনে চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য সংসদে তোলে সে বিষয়েও বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত কোনো ধারণা নেই। ফলে নেপাল ও ভুটানের প্রস্তুতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত চার দেশের মধ্যে যান চলাচলের বিষয়টি একরকম অনিশ্চিত।
সূত্র জানায়, ইউরোপের আদলে বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান-নেপালের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট চার দেশের সড়কমন্ত্রীরা গতবছরের ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুুতে বিবিআইএন মোটর ভেহিকল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) সই করেন। ওই চুক্তির ফলে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষে চলতি মাস থেকে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই এক দেশের মধ্য দিয়ে আরেক দেশের পণ্য ও যাত্রীবাহী মোটরযান চলতে পারার কথা ছিল। চুক্তি অনুসারে এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবেশের জন্য প্রতিটি গাড়িকে পৃথক ট্রানজিট ফি দিতে হবে। পাশাপাশি পণ্যবাহী গাড়ির জন্য পৃথক কর ও শুল্ক দিতে হবে। প্রতিটি দেশ পৃথকভাবে ফি ও শুল্ককর নির্ধারণ করবে। তবে ফি ও শুল্ককরে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনতে হলে অন্য দেশগুলোকে জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় গাড়ি চালানোর জন্য চালককে বিশেষ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। আর সংশ্লিষ্ট দেশের সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এ লাইসেন্স অনুমোদন করবে। এক দেশের গাড়ি অন্য দেশে নির্ধারিত রুট ছাড়া অন্য কোনো সড়ক ব্যবহার করতে পারবে না। এছাড়া তৃতীয় কোনো দেশে যাত্রী ওঠানামা করতে পারবে না। অন্য দেশ অতিক্রমের সময় কোনো দেশের যানের জ্বালানির প্রয়োজন হলে তাকে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে জ্বালানি কিনতে হবে। কোনো দেশের সরকারের ভর্তুকি মূল্যে কোনো যান জ্বালানি পাবে না। কোনো যান যে দেশের ওপর দিয়ে যাবে সে দেশের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে তা সার্চ ও ইন্সপেকশন করতে পারবে। তাছাড়া যে দেশে যে পণ্য নিষিদ্ধ সে দেশের ভেতর দিয়ে সেসব পণ্য বহন করা যাবে না। ৩ বছর পর পর এ চুক্তি নবায়ন হবে। তবে কোনো দেশ চাইলে ৬ মাসের নোটিশে চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারবে। ভবিষ্যতে সার্কভুক্ত কোনো দেশ চাইলে চুক্তিতে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। এক্ষেত্রে চুক্তিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা যাবে।
সূত্র আরো জানায, চুক্তির আওতায় প্রতিটি যানকে অন্য দেশে চলাচলে রুট পারমিট নিতে হবে। নিয়মিত চলাচলকারী যানবাহনকে ১ বছরের জন্য এ পারমিট দেয়া হবে। প্রতিবছর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিটি দেশ এ সংক্রান্ত তালিকা বিনিময় করবে। এক দেশের পণ্যবাহী যানকে অন্য দেশ অতিক্রমের ক্ষেত্রে ট্রানজিট কনসাইনমেন্টের জন্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত ছাড়পত্র নিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি দেশের জন্য প্রযোজ্য অন্য কোনো কাগজপত্রও প্রয়োজন অনুযায়ী সংগ্রহ করতে হবে। কাস্টম ও অন্যান্য নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিধানও পালন করতে হবে। পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে পথিমধ্যে মালপত্র চুরি বা নষ্ট হওয়ার নিরাপত্তা দেবে সংশ্লিষ্ট দেশ। সেজন্য সংশ্লিষ্ট দেশকে আর্থিক গ্যারান্টি দিতে হবে।
এদিকে চার দেশের মধ্যে যান চলাচল শুরু করার বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোঃ আবু নাছের বলেন, চলতি মাসের মধ্যে চার দেশের সড়ক যোগাযোগ শুরু হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল তা পুরোপুরি তিরোহিত হয়ে গেছে। এ মুহূর্তে শুধু এটুকুই বলা যায় নেপাল ও ভুটান প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত চার দেশের সড়ক যোগাযোগ শুরু করার সুযোগ নেই। প্রস্তুতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ও ভারত অনেক দূর এগিয়ে রয়েছে। চাইলে দু’দেশই সড়ক যোগাযোগ শুরু করতে পারে। তবে তা করা হলে চার দেশের সড়ক যোগাযোগের ফ্লেভারটি পাওয়া যাবে না।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!