• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চালের দাম নিয়ে ধোঁয়াশা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৭, ২০১৯, ০১:৩১ পিএম
চালের দাম নিয়ে ধোঁয়াশা

ঢাকা : নতুন বছর শুরু হওয়ার পর থেকেই চালের বাজার চড়া। অথচ গেল মৌসুমে চালের বাম্পার উৎপাদন ছিল। মজুতের পরিমাণও ছিল পর্যাপ্ত। তারপরও চালের বাজার কেন ঊর্ধ্বমুখী তার কোনো সদুত্তর নেই কারো কাছে। চাল বাজারের কারসাজি খুঁজতে গত কয়েক দিন এ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করার পরে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে ‘চালের দাম বাড়েইনি।’

কিন্তু বাজারে গিয়ে প্রতিকেজি সরু চাল কিনতে ভোক্তাকে অতিরিক্ত ৪/৫ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সদ্য বাজারে আসা আমনের মোটা চাল ২/৩ টাকা বেশি দিয়ে কিনছে দরিদ্র মানুষেরা। দাম বাড়ার আগেও যে চাল সকল স্তরের মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে ছিল তা নয়।

২০১৭ সালের পর থেকে চালের দাম দীর্ঘ সময় উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে ছিল। তবে চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক বলেছে ভিন্ন কথা। গত বোরবার চালের দাম আদৌ বেড়েছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণে সারাদেশ থেকে তথ্য নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সে পর্যবেক্ষণে মন্ত্রণালয় চালের দাম বাড়েনি বলে তথ্য পেয়েছে।

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ) ওমর ফারুক বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারাদেশে চালের দাম সংগ্রহ করা হয়েছে। সেসব তথ্যে দেখা গেছে, মোটা চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সরু চালের দাম কোথাও কোথাও ৫০ পয়সা বাড়লেও সেটা এখন কমে এসেছে।

তবে এ নিয়ন্ত্রকের কথার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি খোদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিদিনের বাজার পর্যবেক্ষণের তথ্যের সঙ্গে। কারণ, মন্ত্রণালয়ের ‘দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি’ প্রতিবেদন বলছে, রাজধানীর বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরণের চালের দাম ২ টাকা বেড়েছে। আবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার দর পর্যবেক্ষক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। উল্টো মাসের ব্যবধানে সেটা কমেছে। আর সেখানেও বলা হচ্ছে সরু ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ২ টাকা।

দেশের চালকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কথায় দেশের কোনো মিলে চালের দাম বাড়েনি। উল্টো শেষ দু-একদিনে চালের দাম আরো কমে এসেছে। এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, মিলগুলোতে চালের দাম বা‌ড়ে‌নি। নির্বাচনের সময় কিছু কিছু জায়গায় চিকন চালের দাম বে‌ড়ে‌ছিল। তাও সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা। তবে কোনো মিলে মোটা চালের দাম বা‌ড়ে‌নি, কিন্তু চালের দাম এত কেন সেটা আমরাও বুঝি না।

মিল থেকে ঐ চাল বাজারে আসলে দাম কিভাবে বাড়ে সে প্রশ্ন সাধারণ মানুষেরও। কারণ বাজারে গেলে বিক্রেতারা তাদের এখনো বলছে গত সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। ধানের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের কথা বলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মিল মালিকেরা।

নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে দাম নিয়ে কোনো কারসাজি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। আবার রাজধানীর বাজারগুলোও সরজমিনে পরিদর্শনের কথা ছিল খাদ্যমন্ত্রীর। তবে দাম বাড়েনি এমন তথ্য পাওয়ার পরে এসব কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে কোনো মহল কৃত্রিমভাবে চালের মূল্য বাড়িয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি অযৌক্তিক, এর কোনো কারণ নেই। গত দুই দিন চালের মূল্য নতুন করে বাড়েনি, কমেওনি।

তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে কৃষকের কাছে ধান নেই। ধান মিলারদের কাছে। তাই হঠাৎ করে চালের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে কোনো মহল কৃত্রিমভাবে চালের মজুত করে মূল্য বাড়িয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

যেখানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত বোরো মৌসুমে ১ কোটি ৯০ লাখ টন এবং আমনে ১ কোটি ৩৫ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। যা এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে বিশ্বের যে কটি দেশে চালের উৎপাদন বেশি হারে বেড়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এমন পরিস্থিতিতে চাল নিয়ে এমন ধোঁয়াশা অপ্রত্যাশিত বলছেন বিশ্লেষকরাও।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!