• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে আওয়ামী লীগ


বিশেষ প্রতিবেদক অক্টোবর ২৬, ২০১৮, ০৯:৪২ এএম
চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে আওয়ামী লীগ

ঢাকা : ঘনিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যদিও এখনো তফসিল ঘোষণা করা হয়নি, তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে পুরোদমে চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি। দলটির নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির কাজও চূড়ান্তপর্যায়ে। জোট-মহাজোট গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের খসড়া সম্পন্ন হয়েছে। চলছে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনেরও কাজ। অনেক আগে থেকেই ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

এজেন্ট প্রশিক্ষণ, বিভাগীয় বর্ধিত সভাসহ নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত অন্যান্য কর্মসূচির দিন-তরিখ নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের যৌথ সভা আহ্বান করা হয়েছে আজ শুক্রবার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই সভায় রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ দখল রাখার কৌশল, ইশতেহার চূড়ান্ত করা, নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়েই আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে এই সভাতেই।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের (পার্লামেন্টারি পার্টি) সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে এই যৌথ সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আগামী ২৬ অক্টোবর আমাদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

কী কী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার, একাদশ নির্বাচনে আমাদের ইশতেহার চ‚ড়ান্ত করা, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি, নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।’

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এইচটি ইমামকে কো-চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাও এ কমিটির অন্তর্ভুক্ত।

দলীয় সূত্র জানায়, খোদ দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন চ‚ড়ান্তের কাজ করছেন। অনেক আগে থেকেই প্রার্থী মনোনয়নের জন্য একাধিক জরিপও করা হয়েছে। এই জরিপগুলো করা হয়েছে সাংগঠনিক মাধ্যম, পেশাগত গবেষণা সংস্থা, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে। দলের সভাপতি তার নিজস্ব সূত্রেও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় একটি সূত্র জানায়, তিনশ’ আসনের কোনও কোনও আসনের জন্য একাধিক প্রার্থী-তালিকার খসড়াও করা হয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নির্বাচনে আসা না আসার দোলাচল থাকার কারণেই এই একাধিক তালিকা করা হয়েছে। তবে, বিএনপি ও অন্যরা আসুক বা না আসুক, নির্বাচনি জোট-মহাজোট চ‚ড়ান্ত হওয়ার পর প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করা হবে।

এদিকে, আগামী নির্বাচনি ইশতেহারের খসড়াও চ‚ড়ান্তের পথে। এই মাসের প্রথম সপ্তাহে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক করে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এইচটি ইমাম), ড. মসিউর রহমান, ড. অনুপম সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল মান্নান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ব্যারিস্টার ফরহাদ হোসেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।

গত নয় অক্টোবর একটি বৈঠকের মাধ্যমে ইশতেহার কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। এর আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক নিজে ইশতেহার তৈরির কাজ তত্ত¡াবধান করছেন। তিনি বলেন, ‘ইশতেহার চ‚ড়ান্তের পথে। আনুষাঙ্গিক কাজ শেষে দ্রুতই তা প্রকাশ করা হবে।’

বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, আগামী ২৬ অক্টোবরের পর যেকোনও দিন ইশতেহার প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচনি জোট নিয়েও অনেক আগে থেকে আলাপ-আলোচনা চলছে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে, যা মহাজোট নামে সক্রিয় আছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন আদর্শিক জোট ১৪ দল নতুন করে শরিক না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি নির্বাচনি জোট গড়ার আলোচনা রয়েছে।

এ বিষয়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, তারা ১৪ দলে আর কোনও দলকে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু যারা এ জোটের যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের নির্বাচনি জোটে নেওয়া হবে। যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে, তাহলে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), ১৪ দল ও অন্যান্য দল মিলে মহাজোট গঠিত হবে। আর বিএনপি না এলে সবাই আলাদা নির্বাচন করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিতে আগ্রহী জাকের পার্টি, তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি ছোট দলের জোট তথা ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাল্যায়েন্স’ বিএনএ (নাজমূল হুদা), ইসলামী ফ্রন্ট ও বামপন্থী সাত দলের সমন্বয়ে গঠিত আরেকটি ছোট জোট।

সূত্র জানায়, এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে জাকের পার্টির শীর্ষ নেতারা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে জোটে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আর অনেক আগে থেকেই এ আগ্রহ দেখিয়ে আসা বিএনএ ও ইসলামী ফ্রন্টকে নির্বাচনি জোটে নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাম সাত দলের জোটটির ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত আসে, তা আওয়ামী লীগের আজ শুক্রবারের যৌথসভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন।

জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বিএনএ চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা ও ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতি সৈয়দ বাহাদুর শাহ জানান, তাদের নির্বাচনি জোটে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও গবেষণা সংস্থা সিআরআই নির্বাচন সংক্রান্ত সব তথ্য বিশ্লেষণ করছে। সেখানে বর্তমান এমপির পাশাপাশি প্রার্থী হতে আগ্রহীদের সব তথ্য ও কর্মকাণ্ড, ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের তথ্য, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ চলছে।

সারাদেশে ভোটকেন্দ্র কমিটি গঠনের কাজ চলছে, যা অক্টোবরেই শেষ হবে। আর এজেন্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধনের জন্য আগামী ২৮ অক্টোবর খসড়া তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় এ তারিখ পেছাতে পারে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দলের নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচন সংক্রান্ত সব কাজ পুরোদমে চলছে। দ্রুতই প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়াও শুরু হবে।’

তিনি জানান, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের প্রার্থী তালিকাও প্রায় চ‚ড়ান্ত। তবে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন- তা জানা যাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!