• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চোখজুড়ানো সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান


বান্দরবান প্রতিনিধি নভেম্বর ১৬, ২০১৮, ১২:১৩ পিএম
চোখজুড়ানো সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান

বান্দরবান : চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর অনেক জায়গার কারণে বান্দরবান বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের তিনটি উচ্চতম স্থান বান্দরবানে অবস্থিত। সেগুলো হচ্ছে- তাজিনডং (বিজয়), মৌদক মৌল (সাকা হাফং) ও কেওক্রাডং। এই তিন পর্বতশৃঙ্গ জয় করার জন্য যে কেউ খুশিমনে জঙ্গল ও পাহাড়ি নদী বেয়ে চলে যেতে পারে। একবার পর্বতারোহণ শুরু করলে আকর্ষণীয় ঝরনার দেখাও  মিলবে।

আদিবাসীদের কাছ থেকে পাওয়া ব্যতিক্রমী উপহার, খাদ্যসামগ্রী, হস্তশিল্প প্রভৃতি মনকে প্রফুল্ল করবে। এসবের মধ্যদিয়ে আদিবাসী সংস্কৃতির সান্নিধ্যও পাবেন। আজ বান্দরবানের একটি ছোট্ট বর্ণনা ও দর্শনীয় স্থানের বিবরণ পাঠকের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস চালাচ্ছি।

নাফাখুম: বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে নাফাখুম অন্যতম। থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা রেমাক্রিতে পাহাড় ও বনের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা সাংগু নদীতে অবস্থান নাফাখুমের। নাফাখুম আবার রেমাক্রি জলপ্রপাত নামেও পরিচিত। একবার এখানে গেলে বারবার যেতে মন চাইবে। এখানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বাহনও বান্দরবান জেলা শহরেই পাওয়া যায়।

শৈল প্রপাত: শৈল প্রপাত মিলানছড়ি এলাকায় অবস্থিত এবং বান্দরবান থেকে থানচিগামী সড়কের চার কিলোমিটারের মধ্যে। বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য জলপ্রপাতের মধ্যে এটি একটি। বর্ষাকালে এখনকার পানির প্রবাহ খুব বেশি থাকে। এখানে ভ্রমণকালে ছোট ছোট বাজারগুলোতে আদিবাসীদের তৈরি হস্তশিল্প, তাঁতের দ্রব্যাদি ও খাদ্যসামগ্রীর সংস্পর্শও পাওয়া যায়।

জাদিপাই জলপ্রপাত: বাংলাদেশের প্রশস্ততম জলপ্রপাতগুলোর একটি হলো জাদিপাই। এটি রুমা উপজেলায় অবস্থিত। কেওক্রাডং চ‚ড়া থেকে হেঁটে জাদিপাই জলপ্রপাতে পৌঁছতে হলে ঘণ্টাখানেকের পথ অতিক্রম করতে হয়। বান্দরবান জেলা শহর থেকে জিপ কিংবা চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে প্রথমে রুমা বাজারে পৌঁছতে হয়। রুমা বাজার থেকে বগা লেকে যাওয়ার জন্য আবারও একটি জিপ কিংবা চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করতে হয়। বগা লেকে যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায় বিধায় সেখানে রাত যাপন করতে হবে। বগা লেক এলাকায় অনেক আদিবাসী গ্রাম আছে। গাইডের সহায়তায় এখানে থাকা ও খাওয়ার একটি ভালো জায়গা পাওয়া যায়। সকালে খুব তাড়াতাড়ি কেওক্রাডংয়ের পথে যাত্রা শুরু করতে হয়। কেওক্রাডং থেকেও জাদিপাই ঝরনা খুব কাছে নয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টার পথ হেঁটে পৌঁছানো যায় সেখানে।

বগা লেক: বগা লেক বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক হ্রদ। রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বগা লেকের অবস্থান। প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে  বিস্তৃত এই লেক। লেকের স্বচ্ছ নীল পানি আপনার নজর কাড়বেই। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক লেকটি ঘুরে দেখেন বিশেষ করে শীতকালে। লেকটির আশেপাশে বেশকিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসতি রয়েছে। বর্ষাকালে লেকটির চারপাশে ঘুরে বেড়ানো একটু কঠিন। তবে লেকটিতে পর্যটকদের জন্য অবসর বিনোদনের কোনো কমতি নেই। লেকের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব শিলাখণ্ড দেখে নিশ্চিতভাবেই চমকে উঠবেন।

বুদ্ধ ধাতু জাতি মন্দির: বুদ্ধ ধাতু জাতি মন্দিরের আরেক নাম বান্দরবান স্বর্ণমন্দির। বান্দরবান থেকে দশ কিলোমিটার এবং বালাঘাটা থেকে চার কিলোমিটার দূরে পালপাড়ায় এ মন্দির অবস্থিত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি। মাটি থেকে ২০০ ফুট উঁচু এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ ১৯৯৫ সালে শুরু হয়ে ২০০০ সালে শেষ হয়। শুধু বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীই নয়, দেশ-বিদেশের যেকোনো পর্যটকের জন্যই এটি এক আকর্ষণীয় স্থান। পাহাড় চ‚ড়ায় মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি ছোট পুকুর যা ‘দেবতাদের পুকুর’ নামে পরিচিত।

চিম্বুক: চিম্বুক হলো বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা প্রায়  ২৫০০ ফুট। এই এলাকার রাস্তাঘাট আঁকাবাঁকা ও সর্পিল। জিপে চড়ে এসব রাস্তা পার হওয়া এক রোমাঞ্চকর অনুভ‚তি। যাওয়ার পথে বিভিন্ন আদিবাসী পল্লী অতিক্রম করতে হয়। যেহেতু বান্দরবান শহর থেকে চিম্বুকের অবস্থান একটু দূরে তাই এখানে যেতে হলে ব্যাক্তিগতভাবে গাড়ি রিজার্ভ করতে হয়। এছাড়া থানচিগামী বাস কিংবা জিপেও চড়া যেতে পারে। চিম্বুক যাওয়ার পথে একটি মিলিটারি চেকপোস্ট পড়ে এবং পর্যটকদেরকে সেখানে নাম-ঠিকানা নিবন্ধন করতে হয়।

মেঘলা : আকর্ষণীয় অবসর বিনোদন কেন্দ্র হলো মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। বান্দরবান পার্বত্য জেলা কাউন্সিলের খুব কাছেই এটি অবস্থিত। বান্দরবান শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কেরাণীহাট সড়কে অবস্থিত মেঘলায় রয়েছে একটি মিনি সাফারি পার্ক, একটি চিড়িয়াখানা, ঝুলন্ত ব্রিজ, পাহাড়ের নিচে একটি কৃত্রিম লেক এবং নৌকা ভ্রমণের সুবিধা। বান্দরবান শহর থেকে মেঘলায় যাওয়ার জন্য প্রাইভেট জিপ কিংবা অটোরিকশা রিজার্ভ করতে হয়। লোকাল বাসও পাওয়া যায়।

নীলাচল : মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের কাছেই নীলাচল। যা টাইগার হিল নামেও পরিচিত। বান্দরবান শহরের সবচেয়ে নিকটবর্তী পর্যটন স্পট হলো নীলাচল। এর অবস্থান টিগেরপাড়ায়। যা বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলাচলের উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফুট। এখান থেকে পাখির চোখে দেখতে পাবেন পুরো বান্দরবান শহর। বর্ষা মৌসুমে এখানে পাবেন মেঘের মধ্যদিয়ে হেঁটে যাওয়ার রোমাঞ্চ। এখান থেকে শুধু সোনালী রংয়ের গোধূলিই নয়, উপভোগ করতে পারবেন জোছনা রাতের অনাবিল সৌন্দর্যও। শীতকালে পাবেন চোখজুড়ানো কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। শহরের কাছেই অবস্থান হওয়ায় প্রাইভেট জিপ কিংবা অটোরিকশা নিয়ে সহজেই যেতে পারবেন নীলাচলে।

নীলগিরি : বাংলাদেশের উচ্চতম ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর একটি নীলগিরি। প্রায় ৩৫০০ ফুট উঁচু জায়গাটির অবস্থান থানচি থানায়।

বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি রোডে অবস্থিত নীলগিরি বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে। এর কাছাকাছিই রয়েছে ম্রো আদিবাসীদের গ্রাম। ক্যাম্পফায়ার করার জন্য জায়গাটি খুবই উপযোগী। জায়গাটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নীলগিরির একেবারে চূড়ায় তাদের নির্মিত একটি আকর্ষণীয় রিসোর্ট রয়েছে। এখানকার  তাপমাত্রা ১০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরিতে যেতে হলে থানচিগামী বাস কিংবা জিপে চড়তে হয়। নীলগিরি যাওয়ার পথে প্রত্যেক পর্যটককে আর্মি চেকপোস্টে নাম-ঠিকানা নিবন্ধন করতে হয়।

অন্যান্য : এছাড়াও বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো হলো- শুভ্র নীলা, জীবন নগর পাহাড়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট ও জাদুঘর, বাকলাই জলপ্রপাত, রিজুক জলপ্রপাত, চিংড়ি ঝিরি জলপ্রপাত, জিংসিয়াম সাইতার জলপ্রপাত, পাতাং জারি জলপ্রপাত, ফাইপি জলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক, মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, কেওক্রাডাং পাহাড়, তাজিনডং পাহাড় প্রভৃতি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!