• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগকে নির্দেশনা


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২২, ২০১৯, ০২:৫৩ পিএম
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগকে নির্দেশনা

ঢাকা : দেশের স্বায়ত্তশাসিত সব বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন আয়োজনে আন্তরিক সরকার। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে রাজনীতিতে শিক্ষিত নেতৃত্ব তুলে আনা, শিক্ষার্থীদের মৌলবাদের দিকে ঝুঁকে পড়া রোধ ও সংস্কৃতিচর্চাকে নিয়মিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনের প্রতি সরকারের নির্দেশ আছে।

সরকারের আন্তরিকতা, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আগ্রহ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিরাজমান স্থিতিশীল পরিবেশ বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনের পর অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এসব নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কৃতিচর্চাকে নিয়মিত করতে ছাত্রলীগের প্রতি নির্দেশ আছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিতর্কে না জড়াতে ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করতে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কড়া নির্দেশও দেওয়া হয়েছে সংগঠনটিকে।

ডাকসু নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সহযোগী ছাত্রদলসহ সব দলের সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ছাত্রলীগ যে গণতান্ত্রিক আচরণ করেছে, তেমন আচরণ করতে সংগঠনটির প্রতি নির্দেশ আছে। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্রকরে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বড় কোনো ধরনের বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়নি। এটাকে দলের জন্য স্বস্তিদায়ক ও ইতিবাচক বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। সব দলের ছাত্র সংগঠনের অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতর্কমুক্ত রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দেখাতে চায় ক্ষমতাসীন দল।

সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্রলীগ নেতাদের আবারো নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক আট শীর্ষ নেতা গত ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশ দেন।

সূত্রমতে, দলের ওই নির্দেশের কথা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দলের পক্ষ থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সভাপতির ঢাকার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নির্দেশগুলো জানানো হয়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে ওইদিন বৈঠক করেন ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক কয়েক শীর্ষ নেতা।

দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্রমতে, প্রায় তিন দশক পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া ও প্রায় সব দলের ছাত্র সংগঠনের এতে অংশ নেওয়ার বিষয়গুলোকে আওয়ামী লীগ দল ও সরকারের জন্য ইতিবাচক মনে করছে। বিভিন্ন সরকারের আমলে বন্ধ থাকায় ডাকসুর সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচন আয়োজনের কৃতিত্ব এ সরকারের পক্ষে যাচ্ছে। দেশের ‘দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে খ্যাত এ নির্বাচন গণতন্ত্রকে সুসংহত ও নেতৃত্ব তৈরির জন্য অপরিহার্য বিবেচনায় ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। রাষ্ট্রপতির আহ্বান, বিশেষজ্ঞদের দাবি, উচ্চ আদালতের নির্দেশ, সরকারের আন্তরিকতা ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের বিভিন্ন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ডাকসুর কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের স্বায়ত্তশাসিত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। এ নির্বাচন অনুষ্ঠান রাজনৈতিক অঙ্গনের মতো নতুন প্রেরণা ও উদ্যমে আলোচনার উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট ও প্রক্টোরিয়াল বডির সভায় চাকসু নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। ধাপে ধাপে কয়েকটি কাজ শেষ করার পরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। তিন দশক পর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নানা কারণে ভোট না হলেও ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ প্রশাসন চায় ছাত্র সংসদ পুনরায় চালু হোক। প্রতিষ্ঠানটিতে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও চায় অচিরেই সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসন। সেখানে আওয়ামী লীগের ও সরকারের হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে সেসব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিতে পারে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা আলোচনা করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করে প্রার্থী মনোনীত করতে পারেন। এর বাইরে দলের কারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!