• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলেদের ঘরে ঠাঁই নেই, গোয়াল ঘরে শিকলে বন্দী বৃদ্ধা মা!


বরগুনা প্রতিনিধি অক্টোবর ১৫, ২০১৯, ১০:১৯ পিএম
ছেলেদের ঘরে ঠাঁই নেই, গোয়াল ঘরে শিকলে বন্দী বৃদ্ধা মা!

বরগুনা : জন্মের পর গর্ভে ধারণ করে পরম যত্নে বুকে আগলে রেখে লালন পালন করলেও বৃদ্ধ বয়সে সেই মায়েরই ঠিকানা হয়েছে গোয়াল ঘরে। এমনকি মানসিক রোগী আখ্যা দিয়ে কোমড়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন ছেলেরা। 

এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের চরধুপতি গ্রামে ।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, গত ৫ মাস ধরে মা খবিরুন্নেসা (৭৫) কে গোয়াল ঘরে বিছনা পেতে গরু বাঁধার রশী দিয়ে তাঁকে বেঁধে রাখা হয়। একদিন রশী খুলে তিনি মেয়ের বাড়িতে যাবার পথে ফের তাকে ছেলেরা ধরে এনে একই স্থানে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। শেকল বাঁধা অবস্থায় প্রায় ৫ মাস তিনি গোয়াল ঘরেই জীবন যাপন করছেন। 

বয়সের ভারে কানে একটু কম শুনলেও খবিরুন্নেসাকে তাঁরা স্বাভাবিক হিসেবেই জানেন। মূলত জমি-জমা ভাগ বাটোয়ারা হওয়ার ছেলেদের কেউ বৃদ্ধা মায়ের যত্ন নিতে রাজী নন। যে কারণে তাকে অযত্ন অবহেলায় গোয়াল ঘরে ফেলে রাখা হয়েছে। ওই গোয়াল ঘরেই দিনে একবার তাকে খাবার দেয়া হয়।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১০টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধা খবিরুন্নেসাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি গোয়াল ঘরের বিছানায় শেকল বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। 

এদিকে, শান্তিতে একটি নোংড়া বিছানায় বসে তিনি নাতী-নাতনীদের ডাকছিলেন। শেকলে বাঁধা থাকায় তিনি বিছানা ছেড়ে নামতেও পারছিলেন না। এমনকি মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে মশারীরও কোনো ব্যবস্থা নেই ।এর পরেও ছেলেদের ব্যপারে কোনো অভিযোগ নেই খবিরুন্নেসার।

বিষয়টি নিয়ে ছোট ছেলে বাচ্চু জানান, তিনি মায়ের ঠিকমতই ভরন পোষণ দিচ্ছেন। গোয়াল ঘরে কেন রাখলেন, জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন. ‘মায়ের মাথায় সমস্যা, আমি বাইরে কাজবাজে ব্যস্ত থাকি. মা কোথায় কখন চলে যায় তাই বেঁধে রেখেছি’।

যদিও বড় ছেলে বাদলকে পাওয়া যায় নি তাই তার স্ত্রী বেবি বলেন, শ্বাশুড়ি মানসিক রোগী। সে কারণে তাঁকে ছেলেরা বেঁধে রেখেছেন। 

তবে প্রতিবেশীরা জানান, খবর পেয়ে সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রেট ও ইউপি চেয়ারম্যান ওই বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেণ। নিজ চোখে একজন মায়ের করুণ দৃশ্য দেখে পুলিশের কনস্টেবল রেজাউল গাজী খবিরুন নেছাকে পড়ার জন্য দুইটি মেসকি, কিছু ঔষধ একটি পার্টি, সাবান দিয়ে আসেন।

এ বিষয়ে গৌরিচন্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদেও পক্ষ থেকে বৃদ্ধা খবিরুন্নেসাকে যথাসাধ্য সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়াও তার ভরন পোষণ যাতে নিশ্চিত করা হয় সে ব্যপারে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রেট জাকির হোসেন, বলেন, বিষয়টি চরম অমানবিক। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে উদ্ধার করে মেয়ে তাসলিমার জিম্মায় দিয়ে ছেলেদেও ভরন পোষন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছি।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!