• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জনবল সঙ্কটে মাঠপর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনায় হযবরল অবস্থা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৮, ২০১৬, ১২:৩৮ পিএম
জনবল সঙ্কটে মাঠপর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনায় হযবরল অবস্থা

তীব্র জনবল সঙ্কটে দেশের মাঠপর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনায় হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের নানা স্থানের ভূমি অফিসগুলোর অধিকাংশ পদই শূন্য। এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই নিম্নপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচ্চপদের কাজকরতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কাজ না বুঝলেও তাদের করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। কারণ একজনের জায়গাজমি আরেকজনের নামে নামজারি হচ্ছে।

ভুয়া দলিলে অন্যের জমি দখলের ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে একাধিকবার পদক্ষেপ নেয়া হলেও জনবল সঙ্কট না কাটায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় সফলতাও আসেনি। মূলত ভূমি ব্যবস্থাপনায় জনবল নিয়োগ-সংক্রান্ত মামলার কারণেই সরকার শূন্য পদগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারছে না। ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাঠপর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনায় কানুনগো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় ২৭ বছর ধওে ওই পদে কোনো নিয়োগ দিতে পারছে না। আর দেড় শতাধিক সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি (ল্যান্ড) পদেও কোনো কর্মকর্তা নেই। সহকারী ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা (এএসও) পদেও নেই প্রয়োজনীয় জনবল।

তাছাড়া অন্যান্য পদ-পদবিগুলোর অবস্থাও একইরকম। ফলে অফিসগুলোর বিদ্যমান পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটছে না। এ অবস্থায় স্বল্পসময়ের মধ্যেই আরো কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাচ্ছে। ফলে দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী সঙ্কটে ভূমি অফিসের অবস্থা আরো নাজুক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র জানায়, জনবল সঙ্কটের কারণে ভূমি ব্যবস্থাপনায় মাঠপর্যায়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদে দ্বিতীয় শ্রেণির, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা পদে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী এবং তৃতীয় শ্রেণির পদে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় নানা সঙ্কট তৈরি হচ্ছে।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তার অনুপস্থিতির সুযোগে নামকাওয়াস্তে দায়িত্ব পালনকারী অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়ে প্রকৃত মালিকের বদলে অন্য কারও নামে জমিজমা নামজারি করছে। এতে সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়ছে। পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এমনকি মূল্যবান সরকারি সম্পত্তিও চলে যাচ্ছে বেদখলে।

সূত্র আরো জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয় ১৯৮৯ সাল থেকে একাধিকবার কানুনগো পদে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নিলেও তা সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে অনেকে অবসরে চলে গেছে। তবে সরকার কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর ফলে কেউ কেউ অতিরিক্ত সেবা দিয়েছে। তাছাড়া কানুনগোদের বর্তমানে অনেক স্থানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদের কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে।

দেশে বর্তমানে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মঞ্জুরিকৃত পদ ৪৮৭টি। সেখানে কাজ করছেন মাত্র ৩৪১ জন। কর্মকর্তা না থাকায় এক উপজেলার কর্মকর্তাকে অন্য উপজেলার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কানুনগোদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে। এভাবে সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) ১৪৬টি শূন্য পদে অলিখিতভাবে কাজ করছে কানুনগোরা। দ্বিতীয় শ্রেণির পদ হলেও কর্মকর্তার অভাবে তারাই অফিস প্রধানের দায়িত্ব পালন করছে। 

তাছাড়া বর্তমানে সহকারী ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তার (এএসও) ৫০টি পদ শূন্য রয়েছে। এএসও পদটি প্রথম শ্রেণির। কিন্তু ওসব পদেও দায়িত্ব পালন করছে দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত কানুনগোরা।

মাঠ প্রশাসনে কানুনগোর মঞ্জুরিকৃত পদ এক হাজার ৫৯৭টি। কিন্তু বর্তমানে কাজ করছে ৪৪৮ জন কানুনগো। এক হাজার ১৪৯টি কানুনগো পদ শূন্য রয়েছে। ফলে একেকজন কানুনগোকে একাধিক উপজেলায় চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে চলতি দায়িত্ব পাওয়ার জন্যও অনেকে লাখ লাখ টাকা খরচ করছে।

এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয় ১৯৯৭ সালে কানুনগো, সার্ভেয়ার, চেইনম্যান ও অডিটর পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। কিন্তু আইনি জটিলতায় ভূমি মন্ত্রণালয় শেষ পর্যন্ত ওসব শূন্যপদে নিয়োগ দিতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে আবারো কানুনগোসহ বিভিন্ন শূন্য পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়।

২০০৫ সালের আগস্ট মাসে কানুনগো পদের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ৯৩ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী পরীক্ষায় অংশ নেয়। আর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সাড়ে ১২ হাজার জন। কিন্তু তারপর এক দশক পার হলেও মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণদের ডাকেনি ভূমি মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গে ভূমি সচিব মেজবাউল আলম বলেন, জনবল সঙ্কট দূর করা চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি পদে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। সেগুলোতে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তবে কয়েকটি পদ নিয়ে আইনগত জটিলতা রয়েছে। সেসবও কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ভূমি প্রতিমন্ত্রী মো. সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মাঠপর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনেক পদ শূন্য আছে। কিন্তু জনবল নিয়োগ-সংক্রান্ত মামলা থাকায় দ্রুত জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে আইন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। দ্রুতই মামলাগুলো নিষ্পন্ন করে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!