• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
শিক্ষা মন্ত্রণালয়

জবাবদিহিতার প্রশ্নে অস্বস্তিতে কর্মকর্তারা


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৫, ২০১৯, ১১:২৪ এএম
জবাবদিহিতার প্রশ্নে অস্বস্তিতে কর্মকর্তারা

ঢাকা : প্রায় ৩ ঘণ্টা আলোচনার পরও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের খুটিনাটি পুরোপুরিভাবে জানতে পারলেন না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পুরোপুরিভাবে সব বিষয় জানতে শিগগিরই বিভাগের সব শাখা প্রধান, এবং এর আওতাধীন সব দপ্তর, অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের ‘মেগাবৈঠক’ করবেন তারা।

তবে ৩ ঘন্টার আলোচনায় মন্ত্রীরা যেটুকু জেনেছেন এবং তা থেকেই যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাতেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অস্বস্তি শুরু হয়েছে। গত ১০ বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে যে স্বাধীনতা ছিল তা ভবিষ্যতে না থাকারই আভাস পেয়েছেন কর্মকর্তারা। এখন থেকে কাজের জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক হচ্ছে বলে বৈঠক সূত্র বলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ৬টি শাখা ও ২টি প্রশাখার কাজ সম্পর্কে কর্মকর্তারা মন্ত্রীদেরকে বোঝাতে চেয়েছেন, কিন্তু মন্ত্রীদের পাল্টা প্রশ্নের জালে তারা আটকা পড়েছেন। তবুও হাল না ছেড়ে কর্মকর্তারা মন্ত্রীদের সাধ্যমত বুঝিয়েছেন। কিন্তু তাতে মন্ত্রীরা কতটুকু ‘তৃপ্ত’ হয়েছেন তা বোঝা যায়নি। বস্তুতপক্ষে বৈঠক শেষে কোনো কর্মকর্তাই মুখ খুলতে চাননি।

প্রায় সবাই বলেছেন, শিক্ষার সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে ভবিষ্যতে আরও হবে। বৈঠকের বিষয়ে একজন মন্ত্রী বলেছেন, ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। তবে আরও আলোচনা হবে। কি কি আলোচনা হয়েছে তার বিস্তারিত বলেননি। শুধু বলেছেন, শিক্ষায় পাওয়া সফলতার ধারাবাহিকতা রাখার চেষ্টা করব।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি শুরু হয় বেলা ১১টায়।

সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এই বৈঠকটি শেষ হয় প্রায় ২টায়। বৈঠকে মন্ত্রীদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের সবাই অংশ নিয়েছিলেন। শুরুতে বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে কর্মকর্তারা মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন। কিন্তু বের হওয়ার সময় কর্মকর্তাদের চোখে-মুখে একধরণের অশান্তির ছাপ দেখা গেছে। বৈঠকের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে খোদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তাও ঠিকঠাক কথা বলেননি। কিছুটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। শুধু এই কর্মকর্তাই নয়, বহু কর্মকর্তাই বৈঠকের বিষয়ে কথা বলতে চাননি।

বৈঠকে কি এমন হয়েছে যে কর্মকর্তারা কথা বলতে চাননি-জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, বেশ আগ্রহভরে সচিব উপস্থাপনা শুরু করলেও তাতে ভাটা পড়ে। মন্ত্রীদের প্রশ্নের মুখে বার বার তাকে থামতে হচ্ছিল। কারণ এই উপস্থাপনার মধ্যেই মন্ত্রীরা সচিবকে নানা প্রশ্ন করে জেনে নিচ্ছিলেন-কোথায় কি? উত্তরে কখনও প্রীত হয়েছেন আবার কখনও বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন মন্ত্রীরা।

পরে এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলেননি। দীর্ঘ বৈঠক নিয়ে তিনি বলেন, ‘ম্যাক্রো’ লেভেলে শিক্ষার সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ‘মাইক্রো’ লেভেলে পরে আলোচনা হবে। কোচিং ব্যবসা, অতিরিক্ত ফিস নেয়া, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা, নোট-গাইড বইয়ের বিষয়ে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার সব বিষয় আমরা মাননীয় মন্ত্রীদ্বয়কে অবহিত করেছি। তারা অবহিত হয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো হবেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, অতিরিক্ত ফিস নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি চাঁদপুরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার কথা আলোচনায় টেনে এনে বলেছেন দেশের আর কোথায় কোথায় কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ফিস নেওয়া হয়-এমন তথ্য কারো কাছে আছে কি না জানতে চান।

তখন সচিব বলেন, আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) বলেছি, দেশের কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে তার তালিকা করে মন্ত্রণালয়কে জানাতে। পুরো তালিকা মন্ত্রণালয়ে আসার পর খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কোচিং সংক্রান্ত আলোচনাও হয়েছে বৈঠকে। কিভাবে এই ব্যবসা বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে করণীয় জানতে চান মন্ত্রী।

আরেকজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে সবকিছু শুনে নতুন শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা খাতের সফলতার ধারাবাহিকতাকে আরো জোরদার করতে চান। এজন্য হয়তো তিনি শিক্ষা প্রশাসন এবং পাঠ্যবইয়ের কারিকুলামে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন। বৈঠকে মন্ত্রী এমনই একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এই পরিবর্তন তিনি কিভাবে এবং কবে করবেন সে বিষয়ে বৈঠকে কোনো ধারণা দেননি। একইসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাবোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) জনবান্ধব করতে নজরদারিতে রাখার কথাও বলেছেন। শিক্ষা আইন না হওয়ার বিষয় সম্পর্কে মন্ত্রী জানতে চান। তখন সচিব মন্ত্রীকে সর্বশেষ তথ্য জানান।

সববিষয় নিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বহু বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন ঝূঁকি সম্পর্কে। এই পরীক্ষায় কি কি ঝূঁকি রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভেতরের সব খবরতো বলব না। তাতে ঝূঁকি না কমে বরং বাড়বে।

এ ছাড়া অফিসিয়াল সিক্রেসি আইন রয়েছে। যতটুকু বলার ততটুকুই বলব। শিক্ষা প্রশাসন কিংবা শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসবে কি না এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, গত ১০ বছরে শিক্ষায় বড় সাফল্য রয়েছে। এই সাফল্য ধরে রাখার জন্য আমরা কাজ করছি।

আমরা ধারাবাহিকতায় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, শিক্ষায় সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ‘রেসপনসিবল’ হওয়া। পাশাপাশি শিক্ষাখাতে মনিটরিং বাড়ানো, নিয়মিত করা। এসব করতে পারলেই আমরা শিক্ষায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!