• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জমে ওঠার আভাস


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৯, ০২:৪২ পিএম
জমে ওঠার আভাস

ঢাকা : পঞ্চম দিনে এসে একুশে গ্রন্থমেলা জমে ওঠার আভাস মিলেছে। গতকাল আগের যেকোনো দিনের চেয়ে মেলায় বেচাকেনা ভালো হয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। চোখে পড়ার মতো দর্শনার্থী-পড়ুয়াদের ভিড় দেখা গেছে মেলা চত্বরে। বিক্রয়কর্মীদের আগের দুই দিনের মতো বিরস মুখে বসে থাকতেও দেখা যায়নি। বই ক্রেতাদের আগমনে বিক্রয়কর্মীদের বেশ ব্যস্ত সময় কেটেছে গতকাল।

গুলশান থেকে আগত এক বইপ্রেমীকে দেখা গেল সেবা প্রকাশনীর বেশকিছু বই কিনে ব্যাগে ভরতে। সানজিদা আকতার নামের ওই ক্রেতা জানান, এগুলো মূলত তার মেয়ের জন্য কিনেছেন। সানজিদা আকতারের ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে বইয়ের লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছেন মায়ের হাতে। অফিস থেকে ফেরার পথে সেগুলোই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

সানজিদা বলেন, আমার মেয়ে অনুবাদ সাহিত্যের ভক্ত। সে কারণেই সেবা প্রকাশনীতে এসেছি। দেশে সেবা প্রকাশনী অনুবাদ সাহিত্যের জন্য বিখ্যাত। সেটা আমরা জানি।

সেবা প্রকাশনীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মেলার শুরু থেকেই তাদের স্টলে ভিড় লেগে আছে। বিক্রয়কর্মী আলমগীর বলেন, মূলত সেবার বই পড়ার এক ধরনের মানুষ আছেন। তারা মাসজুড়েই এখানে আসেন। আমাদের স্টলে প্রথম দিন থেকেই বইয়ের বিক্রি ভালো।

সেবা প্রকাশনীর মতো দেদার বই বিক্রি না হলেও অন্যান্য প্রকাশনীর বইও গতকাল ভালো বিক্রি হয়েছে। সাহস পাবলিকেশন্সের কর্ণধার সাহস রতন বলেন, আগের দুই দিনের তুলনায় আজ (গতকাল) বইয়ের বিক্রি ভালো হয়েছে। এটা মেলা জমে ওঠারই আভাস। আশা করছি এ সপ্তাহ শেষ হতে হতে বইমেলা পুরোপুরি জমে উঠবে।

বাংলা একাডেমি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৫২টি। এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ ২০, উপন্যাস ৩৩, প্রবন্ধ ১৫, কাব্যগ্রন্থ ৪০ ও অন্যান্য বিষয়ক গ্রন্থ ৪৪টি।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টায়  গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি সিকান্দার আবু জাফর : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক’ আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি নাসির আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. শিরীন আখতার এবং কবি বায়তুল্লাহ কাদেরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রাবন্ধিক বলেন, কবি সিকান্দার আবু জাফর যে শুধু গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ, নাটক, সম্পাদকীয় গদ্য রচনা করেছেন তা-ই নয়, শিশুদের জন্যও রয়েছে তার নানামাত্রিক গদ্য। তার গদ্যরচনার পরিধি কবিতার চেয়ে বেশি বৈ কম নয়। তারপরও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি এবং পাঠকপ্রিয় কবি। এমনকি একজন উচ্চাঙ্গের গীতিকার হিসেবেও সফল।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রচিত তার বিখ্যাত কবিতা সঙ্কলিত হয়েছিল ‘বাঙলা ছাড়ো’ কাব্যগ্রন্থে। এ বইটি কলকাতা বসেই প্রকাশ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কবি। বাংলাদেশে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন, গণহত্যার ভয়াল চিত্র এ কাব্যগ্রন্থের বহু কবিতায় উৎকীর্ণ। দুঃশাসনের দুঃসময় তথা অন্ধকার শেষে স্বাধীনতার সোনালি আলোয় বাংলাদেশ উদ্ভাসিত হোক, মানুষের মুক্তি আসুক, মানবতার পতাকা উড্ডীন হোক— এ আকাঙ্ক্ষা লালন করেছেন কবি তার আজীবনের সাহিত্যসাধনায়।

আলোচকরা বলেন, সিকান্দার আবু জাফরের গল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধ-নিবন্ধ, সম্পাদকীয় সর্বত্রই বাংলাদেশ ও তার শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তি, মানবতার জয়গান বাঙ্ময় হয়ে উঠেছিল। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুক্তিকামী মানুষের সপক্ষে সোচ্চার ছিল তার ক্ষুরধার কলম। এমনকি তার সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা ‘সমকাল’-এর সম্পাদকীয় নিবন্ধেও আমরা একজন প্রগতিশীল মানবতাবাদী লেখকের কণ্ঠস্বর শুনতে পাই।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন বহুমুখী মননের মানুষ। অঙ্গীকার ও মহত্ত্বের দিক থেকে তার সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের যথেষ্ট মিল রয়েছে। তার কবি ও গীতিকার সত্তা উৎসর্গিত হয়েছে জনমানুষের মুক্তির আবাহনে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেমন তার সাহসী সাহিত্যিক ভূমিকা ছিল তেমনি স্বল্পায়ু জীবনে তিনি মানুষের মানবিক অধিকারের পক্ষে সবসময় ছিলেন সোচ্চার। জন্মশতবর্ষে তার প্রাসঙ্গিকতা আজ নতুন করে অনুভূত হচ্ছে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি সানাউল হক খান এবং তারিক সুজাত। আবৃত্তি পরিবেশন করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং শাহাদাৎ হোসেন নিপু। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী মাহমুদ সেলিম, সমর বড়ুয়া, আরিফ রহমান, সুরাইয়া পারভীন এবং স্বর্ণময়ী মণ্ডল। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), শাহরাজ চৌধুরী তপন (গিটার), সুমন রেজা খান (কিবোর্ড), মো. মেসবাহ উদ্দিন (অক্টোপ্যাড)। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই বিষয়ে আলাপনে অংশ নেন আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া, আলম তালুকদার, আয়শা ঝর্ণা, হামীম কামরুল হক, অরবিন্দ চক্রবর্তী।

আজকের অনুষ্ঠান : বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ষষ্ঠ দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবুল হাসনাত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন বিমল গুহ, গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং শোয়াইব জিবরান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি আসাদ চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!