• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘জাজ শেষ হয়ে যায়নি, ঠিক গতিপথেই আছে’


বিনোদন প্রতিবেদক জুন ১৫, ২০১৯, ০২:৪৮ পিএম
‘জাজ শেষ হয়ে যায়নি, ঠিক গতিপথেই আছে’

ঢাকা: ‘জাজ মাল্টিমিডিয়া শেষ হয়ে যায়নি। ঠিক গতিপথেই আছে। এই তো আগস্ট মাসের ২০ তারিখ থেকে ‘জ্বীন’ সিনেমার শুটিং শুরু করতে যাচ্ছি আমরা’ বলেছেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী আলিমুল্লাহ খোকন। তিনি এখন প্রতিষ্ঠানটির দেখভাল করছেন। 

বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব হয়েছিল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার। আবির্ভাবেই চমকে দিয়েছিল চলচ্চিত্রের এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। একের পর এক ডিজিটাল ফরম্যাটের সিনেমা নির্মাণ করে হতাশার মাঝে আশার আলো জ্বালিয়েছিল।

প্রথম দিকে জাজ মাল্টিমিডিয়া চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বাহবা কুড়ালেও, পরবর্তীতে নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটি সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে শুরু করে। যৌথ প্রযোজনার নামে ‘যৌথ প্রতারণা’র ছবি নির্মাণের অভিযোগে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তোপের মুখে পড়ে। যদিও জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যাখ্যা ছিল, নিয়মের মধ্যে থেকেই যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে তারা।

আব্দুল আজিজ ও আলিমুল্লাহ খোকন

এদিকে গেলো কয়েকমাস ধরে জাজ মাল্টিমিডিয়া চুপসে যাওয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। নতুন কয়েকটি ছবি নির্মাণের ঘোষণা দিলেও সেগুলোর কাজ থমকে আছে। আদৌ ছবিগুলো আলোর মুখ দেখবে কিনা—সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রায় ৯১৯ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ ওঠে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজের মালিকানাধীন ক্রিসেন্ট গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আবদুল আজিজসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরপর থেকে আব্দুল আজিজ লোকচক্ষুর অন্তরালে আছেন।

সূত্রের খরব, আব্দুল আজিজ গ্রেফতার এড়াতে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আবার কোনো কোনো সূত্র বলছে, দেশে থেকেই ওপর মহলের সাথে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন।

আব্দুল আজিজের গা ঢাকা দেওয়ার পর তার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পথে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সম্প্রতি একটি ছবির পরিবেশনা করে জাজ। তাতেও জাজ মাল্টিমিডিয়ার মলিন চেহারায় সতেজতা ফিরে আসেনি।

অন্যদিকে জাজ মাল্টিমিডিয়ার ঘরের কয়েকজন চু্ক্তিবদ্ধ নায়িকা ছিলেন। তারা প্রতিষ্ঠানটি থেকে মাসিক অর্থ পেতেন। শোনা যাচ্ছে, সেই অর্থ দেয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি জাজে কর্মরত কর্মচারিরাও ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না। চুক্তিবদ্ধ নায়িকারা অন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ বেকার বসে আছেন কাজের অভাবে। আবার কাজ না থাকায় বিয়ে করে সংসারি হচ্ছেন কেউ কেউ। আর কর্মচারিরাও কাজ খুঁজে নিয়েছেন অন্য প্রতিষ্ঠানে।

বর্তমানে জাজ মাল্টিমিডিয়ার দেখভাল করছেন আলিমুল্লাহ খোকন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, আব্দুল আজিজের অনুপস্থিতি কতটা প্রভাব ফেলছে?  উত্তরে তিনি বলেন, আব্দুল আজিজের অনুপস্থিতি কোনভাবেই প্রভাব ফেলছে না। তিনি ছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানে আমি ও নাদের চৌধুরী ডিসিশন মেকার আছি। তবে এটা ঠিক তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাজের নানা পরিকল্পনা করতেন। সেকারণে তার অনুপস্থিতি কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করলেও আমরা তা ম্যানেজ করে নিচ্ছি।

কিন্তু আব্দুল আজিজ অন্তরালে চলে যাওয়ার পর জাজ কোনো নতুন সিনেমা নির্মাণ করছে না? এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে আলিমুল্লাহ খোকন বলেন, জাজ শেষ হয়ে যায়নি। ঠিক গতিপথেই আছে। এই তো আগস্ট মাসের ২০ তারিখ থেকে ‘জ্বীন’ সিনেমার শুটিং শুরু করতে যাচ্ছি আমরা।

যেসব পরিচালক জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ করেছেন তারাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। জাকির হোসেন রাজু এই প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক ৬টি ছবি পরিচালনা করেছেন। সেগুলো হলো—‘পোড়ামন’, ‘দবির সাহেবের সংসার’, ‘অনেক সাধের ময়না’, অনেক দামে কেনা’, ‘নিয়তি’ ও ‘প্রেমী ও প্রেমী’।

জাজের সমকালীন পরিস্থিতি নিয়ে গুনী এই নির্মাতা বলেন, জাজ যদি আবার আগের অবস্থায় ফিরে না আসে তাহলে সেটা বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য খারাপ হবে। এই প্রতিষ্ঠানটি বড় বাজেটের ছবি প্রযোজনা করে চলচ্চিত্রের প্রাণ সঞ্চার করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি এখন যে অবস্থা পাড় করছে সেটা সত্যিই উদ্বেগজনক। আমি বিশ্বাস করি খুব শিগগিরই জাজ সকল জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়ন করতে হলে জাজের মতো আরও বেশ কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আসা দরকার। তাহলে ঘুরে দাঁড়াবে ঢালিউড। আমার জানামতে, আরও বেশ কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আসবে সিনেমা প্রযোজনায়।

জাজ আবিষ্কৃত নায়িকা নুসরাত ফারিয়া এখন শিবির বদল করেছেন। তিনি কাজ করছেন অন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের হয়ে। তাহলে কী, জাজের ছবিতে ফিরতে নুসরাত ফারিয়ার আরও সময় লাগবে? উত্তরে তিনি বলেন, সময় লাগতে পারে। নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। জাজের ছবি দিয়ে আমার ক্যারিয়ার শুরু। সেকারণে এই প্রতিষ্ঠানের ছবিতে কাজ করতে পারা আমার জন্য আনন্দের। আবারও জাজের ছবিতে অভিনয় করতে চাই, তবে কবে নাগাদ করতে পারব সেটা জানি না।

এই যে বললেন সময় লাগবে। জাজের খারাপ অবস্থার কারণেই কী সময় লাগার কথা বললেন? প্রশ্নের উত্তর নুসরাত ফারিয়া এড়িয়ে যেতে চাইলেন। সোজাসাপ্টা বলে দিলেন, আমি এখন দেশের বাইরে কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এখন শুধু আমি আমার লক্ষ্যের দিকে মনযোগ দিতে চাই। তাছাড়া আমি এখন জাজ মাল্টিমিডিয়া নিয়ে কথা বলতে চাই না। সামনে হয়ত বলব।

জাজের নিভু নিভু অবস্থায় শাপলা মিডিয়া নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান বড় বাজেটের কাজ করছে। বলা যায় শাপলা মিডিয়াই এখন ঢালিউডের প্রাণ ভোমড়া। জাজের দুরাবস্থায় শাপলা মিডিয়ার সম্রাজ্য বিস্তারে কোনো সুবিধা হলো কিনা—জানতে চাইলে শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার সেলিম খান বলেন, আমি তেমনটা মনে করি না। জাজ যখন ছবি বানিয়েছে শাপলা মিডিয়াও তখন ছবি বানিয়েছে। জাজের সাথে আমাদের দ্বৈরথ নেই। আবার এটাও ঠিক যে, জাজ ছবি নির্মাণ না করলেও ক্ষতি নেই। কারণ, শাপলা মিডিয়া ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছবি নির্মাণ করছে। কারও জন্য কিছু থেমে থাকে না। প্রযোজক যাবে প্রযোজক আসবে।

তবে একথা মেনে নিতে হবে যে, কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যদি দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে তার প্রভাব সিনেমার ওপর পড়ে। নিঃসন্দেহে জাজ মাল্টিমিডিয়া বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য আশীর্বাদ ছিল। বড় বাজেটের আধুনিক রুচিশীল ছবি নির্মাণ করে দেশের সিনেমাপ্রেমীদের সিনেমার যোগান দিয়েছে। সেই সাথে নতুন ছবি নির্মাণের মাধ্যমে দেশের অভিনয়শিল্পী থেকে আরম্ভ করে কলাকুশলীদের কাজের সুযোগ করে দিয়েছে।

বর্তমানে চলমান সঙ্কট কাটিয়ে জাজ আবার সিনেমা নির্মাণ করতে পারবে কিনা, সেটা সময় বলে দেবে। তবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে চাইছেন জাজ ফিরে আসুক স্বমহিমায়। আবার বিপরীত একদল মানুষ; যারা জাজের কফিনে শেষ পেরেক ঠোঁকার দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় আছেন। এখন দেখা যাক, জাজের ভাগ্যে কোন ধরণের ক্লাইমেক্স অপেক্ষা করছে! সূত্র: সারাবাংলা

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!