• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ভাঙ্গনের সুর


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ৩০, ২০১৮, ১০:৫৯ পিএম
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ভাঙ্গনের সুর

ঢাকা : স্বল্পতম সময়ের মধ্যে গঠিত হয়ে একটি চমক সৃষ্টি করে আবার স্বল্পতম সময়েই ভাঙ্গনের সুর শোনা যাচ্ছে ড. কামাল হোসেনর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জেএসডির সমন্বয়ে এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। আর এ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়েই এ ভাঙ্গনের সুর উঠেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
 
সূত্রমতে, ২৭ নভেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ বৈঠকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) রাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতে শুধুমাত্র বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল। ঐক্যফ্রন্টের অন্য কোনো শরীক নেতা এতে অংশগ্রহণ করেনি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর মধ্যে একমাত্র মাহামুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ৯টি আসনে সন্তুষ্ট হয়ে নির্বাচনের মাঠে চলে গেছে। এবং বিএনপির সঙ্গেই নাগরিক ঐক্য কাজ করে যাবে বলে মান্না জানিয়ে দিয়েছেন।

ঐক্যফ্রন্টের আরেকজন নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। তিনি কোনো দলের মধ্যে না থাকলেও এবার ধানের শীষ প্রতীক পেয়ে নির্বাচন করছেন।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের জেএসডি এবং গণফোরামের সঙ্গে বিএনপির কোনো সমঝোতা হয়নি। এই দুটি দলই বিএনপির প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট এবং ক্ষুব্ধ বলে ঐ দল দু’টির নেতাদের সূত্রেই জানা গেছে। মাহামুদুর রহমান মান্না ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিএনপির সঙ্গে গাটছড়া বাধায় তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। এই অবস্থায় এখন আপাতত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো কর্মসূচি বা বৈঠক নেই। এমনকি একসঙ্গে যে নির্বাচনী ইশতেহার করার কথা ছিল, সে কাজও থমকে গেছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গণফোরাম এবং জেএসডি অভিযোগ করছে যে ঐক্যফ্রন্ট করে শুধু বিএনপিই লাভবান হয়েছে। তাই এই দুটি দল এখন বিএনপিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আর আগ্রহী নয়। জেএসডির একজন নেতা বলেছেন, তারা আশা করেছিলেন যে ঐক্যফ্রন্টের শরীকদের বিএনপি সম্মানজনক আসন দেবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে। কিন্তু বিএনপি যে নূন্যতম আসন দিয়েছে তা সম্মানজনক নয়, বরং অপমানজনক।

গণফোরামও একই রকম মন্তব্য করেছে। ফলে যেসব নেতা ধানের শীষ প্রতীকের আশায় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছিল, তারা এখন হতাশায় ভুগছে। শেষ পর্যন্ত এই হতাশা থেকে এবং আসন ভাগাভাগি নিয়ে যদি সমঝোতা না হয় তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হয়তো ভাঙনের মুখেই পড়বে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আর স্বল্পতম সময়ের মধ্যে গঠিত হয়ে একটি চমক সৃষ্টি করে আবার স্বল্পতম সময়েই দলটি ভেঙে গেলে রাজনীতিতে এটি হবে একটি বড় প্রহসন।

এদিকে, ঐক্যফ্রন্টের তিন শরিক দল বিএনপির কাছে ১৫ আসন দাবি করেছিল। কিন্তু সেই দাবি থেকে সরে আসলেও মূলত গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুর চাওয়া তিন আসন নিয়েই জটিলতা তৈরি হয়েছে। মোস্তফা মহসীন মন্টু ঢাকা-১, ঢাকা-২ ও ঢাকা-৭ আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।

এই তিন আসনে বিএনপিকে ছাড় দিতে একেবারেই নারাজ গণফেরাম। কিন্তু ঢাকা-১ ও ২ আসনে নিজেদের ২ হেভিয়েট প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। এ দুই আসনে যথাক্রমে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপির প্রার্থী। মোস্তফা মহসীন মন্টুকে ঢাকা-৭ আসন ছেড়ে দিতে রাজি হলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় গণফোরাম। ফলে দফায় দফায় বৈঠকের পরও বিষয়টির সুরাহা করতে পারছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

গণফেরাম ওই তিন আসনে তাদের প্রার্থী দিতে এখনও অনড় থাকায় বিষয়টির সুরাহা হতে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগের দিন পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিস্টরা। এ ব্যাপারে ফের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন প্রতিদিনই ইনফরমাল বৈঠক হচ্ছে। মূলত গণফোরামের সাথে কোনো ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারায় পারায় বিলম্ব হচ্ছে। যদিও আসন ভাগাভাগির বিষয়ে কথা বলতে নারাজ বিএনপি ও গণফোরাম নেতারা। বিএনপির একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তারা। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুও এখনই কোনো কথা বলতে রাজি নন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!