• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জান কবজ হয় যেভাবে


ধর্মচিন্তা ডেস্ক সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০, ১১:৪১ এএম
জান কবজ হয় যেভাবে

ঢাকা: কিভাবে জান কবজ হয়—এ বিষয়ে একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সংক্ষিপ্তভাবে সেই হাদিস তুলে ধরা হলো—

বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই ঈমানদারের যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে পরকালের পথে যাত্রার সময় ঘনিয়ে আসে, তখন উজ্জ্বল শুভ্র চেহারার ফেরেশতারা তাঁর কাছে নেমে আসেন। তাঁদের চেহারাগুলো যেন একেকটি সূর্য। তাঁদের সঙ্গে থাকে জান্নাতি কাফন ও জান্নাতি সুগন্ধি। তাঁরা তাঁর কাছে বসে পড়েন। তারপর মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তাঁর মাথার পাশে বসে বলেন, হে পবিত্র আত্মা! আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে এসো। রাসুল (সা.) বলেন, তারপর পাত্রের মুখ থেকে গড়িয়ে পড়া ফোঁটার মতো তাঁর আত্মা বেরিয়ে আসে। আজরাইল (আ.) সেই আত্মাকে বরণ করে নেন। আজরাইল (আ.) হাতে নেওয়ামাত্র চোখের পলকে অন্য ফেরেশতারা সেই আত্মা নিয়ে জান্নাতি কাফনে ও জান্নাতি সুগন্ধিতে রেখে দেন। তার থেকে মেশকের চেয়ে উত্তম সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে, যা (কখনো কখনো) জমিনেও অনুভূত হয়।

রাসুল (সা.) বলেন, এরপর তাঁরা সেই আত্মা নিয়ে ঊর্ধ্বারোহণ করতে থাকেন। যখনই কোনো ফেরেশতা পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করেন, এটা কার পবিত্র আত্মা? তাঁরা তাঁর নাম উল্লেখ করে বলেন, অমুকের ছেলে অমুক।

এভাবে তাঁরা প্রথম আসমানে পৌঁছেন। আসমানের দরজা খুলতে আহ্বান করেন। তাঁদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হয়। এভাবে সব আসমানের নৈকট্যশীল ফেরেশতারা পরবর্তী আসমান পর্যন্ত তাঁর অনুসরণ করে বিদায় জানান। তারপর তিনি সপ্তম আসমানে পৌঁছে যান। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দার আমলনামা ইল্লিয়্যিনে রেখে দাও এবং তাকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয়ই আমি তাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তাতেই ফিরিয়ে দেব এবং তার থেকে দ্বিতীয়বার বের করে আনব।’

রাসুল (সা.) বলেন, তারপর তাঁর রুহ তাঁর দেহে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর তাঁর কাছে দুজন ফেরেশতা আসেন। তাঁরা তাঁকে বসান। তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার রব কে? তিনি বলেন, আমার রব আল্লাহ। তাঁরা জিজ্ঞেস করেন, তোমার ধর্ম কী? তিনি বলেন, আমার ধর্ম ইসলাম। তাঁরা বলেন, তোমাদের কাছে পাঠানো এই লোকটি কে? তিনি বলেন, তিনি আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা.)। তাঁরা বলেন, তোমার জ্ঞানের উৎস কী? তিনি বলেন, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি। তার ওপর ঈমান এনেছি এবং তা সত্যায়ন করেছি। তখন আসমানে এক ঘোষক ঘোষণা দেন : ‘আমার বান্দা সত্য বলেছে। তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। জান্নাতের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও।’

রাসুল (সা.) বলেন, এরপর তাঁর কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুরভি আসতে থাকে এবং তাঁর দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হয়।

রাসুল (সা.) বলেন, এরপর একজন সুদর্শন সুন্দর পোশাক পরিহিত ও সুগন্ধিযুক্ত লোক আগমন করে বলে, আনন্দদায়ক সুসংবাদ গ্রহণ করো। এটা সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি তোমাকে দেওয়া হয়েছে। তারপর সে বলবে, কে তুমি, হে কল্যাণকামী! সে বলবে, আমি তোমার নেক আমল (অর্থাৎ নেক আমল জীবন্ত হয়ে উঠবে)।

তারপর তিনি বলবেন, হে আমার রব! কিয়ামত কায়েম করুন, আমি যেন আমার পরিবার ও সম্পদের কাছে ফিরতে পারি।

রাসুল (সা.) বলেন, যখন একজন কাফিরের দুনিয়া থেকে বিদায়ের এবং পরকালের পথে যাত্রার সময় ঘনিয়ে আসে, তখন আসমান থেকে অসুন্দর কিছু ফেরেশতা নেমে আসেন। তাঁদের সঙ্গে থাকে হামানদিস্তা। তাঁরা তার সামনে বসেন। তারপর মালাকুল মউত এসে তার মাথার কাছে বসেন। বলেন, হে অপবিত্র আত্মা! আল্লাহর রাগ ও অসন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে এসো। তারপর তিনি তার দেহে আঁচড়াতে শুরু করেন, যেভাবে ছুরিকে ভেজা পশমে আঁচড়ানো হয় এবং দেহ থেকে আত্মাকে উৎপাটন করে নিয়ে আসেন।

আজরাইল (আ.) তা হাতে নেওয়ামাত্র অন্য ফেরেশতারা সেই আত্মা হাতুড়িতে ভরে ফেলেন। তার থেকে মৃত পচা লাশের দুর্গন্ধ বের হয়, যা (কখনো কখনো) দুনিয়ার মানুষও অনুভব করে। তাঁরা একে নিয়ে উর্ধ্বারোহণ করেন। তাঁরা যখনই ফেরেশতাদের কোনো দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করেন, এই নাপাক আত্মা কার? তখন তাঁরা দুনিয়ায় তার কুৎসিত নাম উল্লেখ করে বলেন, অমুকের ছেলে অমুক।

এভাবে তাঁরা প্রথম আসমানে পৌঁছেন। তার জন্য আসমানের দরজা খোলার আহ্বান করা হয়; কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হয় না। তারপর রাসুল (সা.) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন, যার অর্থ হলো, ‘তাদের জন্য আসমানের দরজাগুলো খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সুচের ছিদ্রপথে উট প্রবেশ করবে।’ আল্লাহ তখন বলবেন, তার আমলনামা জমিনের সর্বনিম্নে সিজ্জিনে রেখে দাও। তারপর তার রুহ ছুড়ে ফেলা হয়। এরপর রাসুল (সা.) কোরআনের আয়াত পাঠ করেন, যার অর্থ হলো, ‘এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করল, সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অতঃপর মৃতভোজী পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোনো দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩১)

তারপর তার রুহ দেহে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তার কাছে দুজন ফেরেশতা আসেন। তাঁরা তাকে বসান। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার রব কে? সে বলে, হায় আফসোস! আমি জানি না। তাঁরা জিজ্ঞেস করেন, তোমার ধর্ম কী? সে বলে, হায় আফসোস! আমি জানি না। তাঁরা বলেন, তোমাদের কাছে পাঠানো এই লোকটি কে? সে বলে, হায় আফসোস! আমি জানি না।

তখন আসমান থেকে একজন ঘোষক বলেন, ‘সে মিথ্যা বলেছে। তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও।

জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও।’

ফলে তার কাছে জাহান্নামের উত্তাপ ও লু হাওয়া আসতে থাকে। তার কবর এতটা সংকীর্ণ করে দেওয়া হয় যে তার এক পাঁজরের হাড়গুলো অন্য পাঁজরে ঢুকে যায়।

তার কাছে একজন কুৎসিত চেহারা, দূষিত পোশাক ও দুর্গন্ধযুক্ত এক লোক এসে বলে, দুঃসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাকে এই দিনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

সে বলবে, তুমি কে? অকল্যাণ নিয়ে এসেছ? লোকটি বলবে, আমি তোমার বদ আমল। তারপর সে বলবে, হে আমার রব! কিয়ামত যেন সংঘটিত না হয়।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!