• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জাপানে শ্রম বাজারে বাংলাদেশের সুযোগ


কূটনৈতিক প্রতিবেদক নভেম্বর ১৯, ২০১৮, ১২:৫৪ পিএম
জাপানে শ্রম বাজারে বাংলাদেশের সুযোগ

ঢাকা : জাপানে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬৪ লাখ শ্রমিক সংকট দেখা দিবে বলে জানিয়েছে একটি জরিপ। চুয়ো বিশ্ববিদ্যালয় এবং পারসল রিসার্চ অ্যান্ড কন্সাল্টিংয়ের যৌথ এই জরিপে উল্লেখ করা হয়,  জাপানের শ্রমবাজার স্থিতিশীল রাখতে মজুরি বৃদ্ধি, অর্থনীতি এখনকার হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন বজায় রাখতে চাইলে ২০৩০ সাল নাগাদ জাপানে শ্রমিকের দরকার হবে ৭ কোটি। তবে তারা বলছে শুধুমাত্র ৬ কোটি ৪০ লাখ শ্রমিক দেশে পাওয়া যাবে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বা ৪০ লাখ শ্রমিকের ঘাটতি সেবা খাতে,  চিকিৎসা ও কল্যাণ খাতে ১৮ লাখ ৭০ হাজার এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় খাতে ৬ লাখ শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জরিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চুয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাসাহিরো আবে বলেছেন,  সরকার ও বাণিজ্য খাতকে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে দেশটির নারী ও বৃদ্ধদের দক্ষতা কাজে লাগানোর মতো পদক্ষেপ বিবেচনা করে দেখতে হবে। এদিকে গত মঙ্গলবার জাপান সরকার জানিয়েছে সেদেশের অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, অভিবাসন আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনের আওতায় আগামী অর্থবছরে ৪৭ হাজার বিদেশি শ্রমিক জাপানে প্রবেশ করতে পারেন। মঙ্গলবার জাপানের সংসদের অধিবেশনে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন সংশ্লিষ্ট এমন একটি বিল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়, যার আওতায় আগামী বছরের এপ্রিল থেকে আরও বেশি সংখ্যক বিদেশি কর্মীদের জাপানে প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হবে।

জাপানের সরকারি কর্মকর্তারা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন,  আগামী অর্থবছরে জাপানে ৬ লাখেরও বেশি শ্রমিকের ঘাটতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তারা মনে করেন,  যদি বিলটি পাশ হয়, তবে ওই সময়ের মধ্যে ৩৩ থেকে ৪৭ হাজার বিদেশি শ্রমিককে জাপানে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া যাবে। আর ২০১৯ থেকে পরবর্তী ৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার বিদেশি শ্রমিক জাপানে প্রবেশ করতে পারেন।

গত বুধবার জাপান সরকার জানিয়েছে সংসদে নতুন বিল পাস হলে আগামী পাঁচ বছরে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি দক্ষ বিদেশি শ্রমিক ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে সেদেশে প্রবেশ করতে পারবে। সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান মতে,  ১৪টি নির্দিষ্ট শিল্পের মধ্যে শুধুমাত্র নার্সিং কেয়ার সেক্টরে সুযোগ হবে ৫০-৬০ হাজার বিদেশি শ্রমিকের। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মীর দরকার পড়বে রেস্তোরাঁ খাতে। এই খাতে ৪১ থেকে ৫৩ হাজার শ্রমিক,  কন্সট্রাকশন খাতে ৩০-৪০ হাজার এবং বিল্ডিং ক্লিনিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২৮-৩৭ হাজার বিদেশি শ্রমিক প্রয়োজন পড়বে।

ইতোমধ্যে জাপান সরকার অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য ভিসা নিষিদ্ধ করলেও শ্রমিক সংকট কাটাতে স্টুডেন্ট ভিসা এবং ইন্টার্ন ট্রেইনি ভিসার মাধ্যমে অনেককেই কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে শুধুমাত্র টেকনিক্যাল ইন্টার্ন জাপানে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে গত বছর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং আই এম জাপানের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।  প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলামের ভাষ্য- দক্ষ জনশক্তি দিয়ে জাপানে শ্রমিকের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

বাংলাদেশে সফররত আই অ্যাম জাপান (IM Japan)-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ইয়োশিহিরো হোতা বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ জনশক্তি নিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন।  তিনি বলেন,  বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি নিয়োগ করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে পাবনাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা সফর করছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তির দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছি। আশা করছি,  জাপান বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত জনশক্তি নিতে পারবে। এতে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

জাপানের শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জাপানি ভাষা শেখানোসহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি এবার বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নেওয়ার জন্য জাপান আগ্রহ দেখিয়েছে।

জাপানের শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য বড় সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে বলে মনে করেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন,  জাপানের চাহিদা মূলত দক্ষ শ্রমিকের। এই চাহিদার সঙ্গে ম্যাচ করতে আমাদের একটা সমস্যা আছে। দেশটি গতবছরও একটা উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে। জাপানে বেতন,  খাওয়া এবং থাকার পরিবেশ খুবই ভালো। কিন্তু সেখানে যে ধরনের শ্রমিক দরকার সেটা অনেক সময় পাওয়া যায় না। আমাদের এককেন্দ্রিক মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই বাজারে সুযোগ আছে ভালো।

সেজন্য আমাদের দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে হবে,  ভাষা শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোর (টিটিসি) মাধ্যমে এই উদ্যোগ নেওয়া যায়। সরকারকে সেভাবে প্ল্যান করে আগাতে হবে। এই বাজারে আমরা সুযোগ করে নিতে পারলে অন্য বাজারেও প্রবেশ করা আমাদের জন্য সহজ হবে,- বলেন শরিফুল হাসান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!