• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জাপার সাংগঠনিক শক্তি তলানিতে


বিশেষ প্রতিবেদক মার্চ ১৯, ২০১৯, ১১:৩১ এএম
জাপার সাংগঠনিক শক্তি তলানিতে

ঢাকা : জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অসুস্থ থাকায় দলটির সব কিছুতেই যেন তৈরি হয়েছে হযবরল অবস্থা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব মিলিয়ে সাংগঠনিকভাবে এত নাজুক সময় দলটি আর কখনও পার করেনি। জাতীয় পার্টির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। জাতীয় পার্টি ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। বর্তমানে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন প্রায় তলানির কোটায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, একাদশ নির্বাচনের আগে থেকে  দলের প্রেসিডিয়াম ও বর্ধিত সভা হচ্ছে না। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে অংগসংঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় নেই। ফলে দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম জানান,  জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা কেমন, তা বলতে পারব না। পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রমে আমরা জড়িত হই না। দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠক হচ্ছে না, এতটুকু জানি।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, জাতীয় পার্টির মধ্যে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টিও। এতে করে বর্তমানে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ আছে। নেতৃত্বেও কারও সঙ্গে সমন্বয় নেই।
ফলে করুণ দশার সৃষ্টি হয়েছে দলটিতে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন,  জাতীয় পার্টির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আগের মতো করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন না। তারা দল ছেড়ে অন্য দলে যোগদানের জন্য চেষ্ট করছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আগের মতো দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে তৎপরও নেই। প্রথম ধাপে ৭৮টি উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা একটিতেও জয়লাভ করতে পারেননি। নির্বাচনে তাদের জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এমনকি জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে খ্যাত বৃহত্তর রংপুরেও উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জমানত হারিয়েছে।

দলটির নেতাকর্মীরা এ সর্ম্পকে জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে কর্মীরা ছিলেন চুপচাপ। কেন্দ্রীয় নেতারাও নির্বাচনের বিষয়ে কোনো খোঁজখবর নেননি। ফলে প্রথম ধাপের ৭৮টি উপজেলার নির্বাচনে ১৭ জন প্রার্থীই তাদের জমানত হারিয়েছেন। এমনকি এই তালিকায় রয়েছেন লালমনিরহাট থেকে সংসদ সদস্য নির্বচিত জিএম কাদেরের এলাকা (লালমনিরহাট সদর উপজেলা) জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাহিদ হোসেন ডাব্লিউও।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবির অনেক কারণ রয়েছে। একদিকে যেমন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি, অন্যদিকে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের জন্যও তৃণমূল নেতাকর্মীরা তৎপর হননি ভোটের মাঠে।

দলের কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, বৃহত্তর রংপুর ও বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই দলত্যাগের চিন্তা-ভাবনা করছেন। বিষয়টি জেনে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। দল টিকিয়ে রাখতে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের দলত্যাগ না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থীদের এই করুণ দশা হতাশ করেছে চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে। উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এমন ভরাডুবি তিনি মেনে নিতে পারেননি। এই ভরাডুবির জন্য দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকা ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব রয়েছে বলেও তাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এরশাদ।

এদিকে, দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অসুস্থ অবস্থাতেও স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় পার্টি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। দলটির মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব ফিরে আসবে। পার্টির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভা এবং কাউন্সিল করে দলের মহাসচিব পদে আবারও পরিবর্তন করবেন তিনি। এরই মধ্যে দলটির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিনকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনেকটা ঈঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে রুহুল আমিন দায়িত্ব নিতে রাজি নন বলে চেয়ারম্যানকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

সম্প্রতি এরশাদ তার বাসভবনে বসে রংপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ-আলোচনা করেছেন। এসময় তিনি  জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করার জন্য তাদের আহ্বান জানান। কেউ যেন দল ছেড়ে না যায়, সেদিকে নজর রাখারও অনুরোধ করেছেন তিনি।

দলের এমন দুরাবস্থার বিষয়ে জানতে দলটির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!