• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাবি মেডিকেল আধুনিকায়নে বাধা, প্রশাসনের অন্তকোন্দল


শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন, জাবি প্রতিনিধি এপ্রিল ২০, ২০১৯, ০৫:০৯ পিএম
জাবি মেডিকেল আধুনিকায়নে বাধা, প্রশাসনের অন্তকোন্দল

জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের অপর্যাপ্ত জনবল, ওষুধের স্বল্পতা ও প্যাথোলজি বিভাগে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকট বহুদিনের। ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেডিকেল আধুনিকায়নের দাবি জানিয়ে আসছে বহুদিন ধরে। কিন্তু গত বছরের জুলাই মাসে হওয়া এডহক ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে হওয়া নিয়োগ নিয়ে ‘অসন্তুষ্ট’ মেডিকেল সেন্টারের পরামর্শক কমিটির প্রধান প্রো-ভিসি অধ্যাপক আমির হোসেন। এই কারণে তিনি মেডিকেল নিয়ে খুব একটা ভাবেন না।

জানা যায়, গত ৩১ জুলাই ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এডহক ভিত্তিতে ডাক্তার পদে সানজিদা মৌরিন, একই তারিখে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ল্যাব সহকারী পদে রনিউল ইসলাম, ফার্মাসিস্ট পদে সিরাজুল ইসলাম ও গত ২০ সেপ্টেম্বর পিয়ন পদে কামরুল ইসলাম, ৩১ মার্চ ক্লিনার পদে কিরণ বাবুকে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগ নিয়ে অবগত ছিলেন না মেডিকেল সেন্টারের প্রধান পরামর্শক ও প্রো-ভিসি  অধ্যাপক আমির হোসেন।

মেডিকেল সেন্টারের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একজন কর্মকর্তার স্ত্রীকে ডাক্তার পদে নিয়োগ দিতে আগ্রহী ছিলেন অধ্যাপক আমির হোসেন। কিন্তু তার আড়ালে নিয়োগ হওয়ায় তিনি মেডিকেল নিয়ে আর মাথা ঘামান না।’

এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, মেডিকেলে কি হয়, তা নিয়ে আমি ওয়াকিবহাল নই। কোন বিষয়ে আমাকে জানানো হয় না। শুধু ছাত্ররা ঘেরাও করলে আমাকে ডাকা হয়। এটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্কটের কারণে হতে পারে। মেডিকেলের এডহক ও দৈনিক মজুরির নিয়োগ নিয়োগ নিয়ে আমাকে জানানো হয়নি। ডাক্তার সানজিদা মৌরিন ভাইভা দিয়ে সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। তার নিয়োগ ঠিক আছে। কিন্তু অন্যান্য দৈনিক মজুরির  নিয়োগগুলো ফেয়ার না। এ নিয়ে ভিসি মহোদয়কে প্রশ্ন করলেও আমি ভাল উত্তর পাইনি।

আরেকজন মেডিকেল কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের স্বামী ডা. মাসুদুর রহমান চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে তিনি এখনো মেডিকেলে আছেন। তার খবরদারির কারণেও ডাক্তারদের মধ্যে অসন্তুষ্টি আছে।

তবে নাম প্রকাশ করে মেডিকেল সেন্টারের কেউ এসব অন্তকোন্দল নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অপ্রতুল আসবাব নিয়ে চলছে মেডিকেল সেন্টার। রোগী বসার পর্যাপ্ত চেয়ার নেই। নেই প্রয়োজনীয় জনবল। প্যাথলজি বিভাগে যৎসামান্য সরঞ্জাম। এমনকি ডাক্তারের রুমে ওজন মাপার মেশিন পর্যন্ত নেই। ১৬ হাজার শিক্ষার্থী ও কমিউনিটির জন্য রয়েছে মাত্র ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স। এর মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বাসায় নির্ধারিত থাকে। একটি অ্যাম্বুলেন্সের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার এখনো আসেনি। বাকি চারটির মধ্যে দুইটি ১৬ বছরের পুরানো যার মধ্যে একটি বর্তমানে নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। সচল তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রয়েছে ছয়জন চালক। অথচ তিনটি শিফটে যেখানে একটি অ্যাম্বুলেন্সের জন্যই তিনজন চালক দরকার। অ্যাম্বুলেন্স অনেকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগও আছে। গত সেপ্টেম্বর ২০১৮ এর গাড়ি ব্যবহারের তালিকা থেকে দেখা যায় সচল তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ৮০% ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ও ২০% ক্ষেত্রে শিক্ষক কর্মকর্তারা ব্যবহার করেছেন। ভিসির বাসায় থাকা অ্যাম্বুলেন্সটি ৪৩% সময় শিক্ষার্থীরা ও ৫০% সময় শিক্ষকরা  ব্যবহার করেছেন। চালকরা অভিযোগ করেন অনেক ছাত্র অসুস্থ বলে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন।

মেডিকলে সেন্টারে ৩২ ধরনের ওষুধ থাকার তালিকা থাকলেও অনেক ওষুধই থাকে না। ওষুধ ক্রয়ের বাজেটও অপ্রতুল। মেডিকেল সেন্টারের ওষুধ ক্রয়ের জন্য প্রতি তিনমাসে বাজেট দেওয়া হয় ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। যার মধ্যে যাবতীয় ওষুধ, ড্রেসিং ও প্যাথলজি রি-এজেন্ট সামগ্রী কিনতে হয়। ১৬ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য হিসেব করলে এই বাজেট হয় প্রতি মাসে মাথাপিছু ৮ টাকা।
 
মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তার রয়েছে নয়জন যার মধ্যে দুইজন ছুটিতে রয়েছেন। এর পাশাপাশি ছয়জন খন্ডকালীন দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ডাক্তার রয়েছে। কিন্তু মেডিকেল সেন্টারে স্থায়ী ১৪জন ডাক্তারের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া মেডিকেল চারতলা হওয়ার কথা থাকলেও তা একতলায় থেমে আছে। ফলে প্রশাসনিক কাজ ও মেডিকেল সেবা এক রুমে করতে হচ্ছে।

এদিকে ১৩ এপ্রিল রাতে ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে চিকিৎসা অবহেলাকে দায়ী করে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেলের দাবিতে ১৩ দফা দাবি পেশ করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে বিভিন্ন দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু  এখন পর্যন্ত মাত্র একটি ইসিজি মেশিন কেনা হয়েছে। যদিওবা এই মেশিন চালানোর জন্য জনবল বা কোনো হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নেই মেডিকেল সেন্টারে।

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে আমরা মেডিকেলের বিভিন্ন সংকটের কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। কিন্তু তারা শিক্ষার্থীদের দাবি আমলে নিচ্ছে না। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে আমাদের দাবি সন্তুষজনক না মানলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।’

এর আগে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মেডিকেল আধুনিকায়নে শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও সাত দফা দাবি পেশ করা হয়। গত আগস্ট মাসে বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেডিকেল আধুনিকায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!