• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি নেতারা যা বললেন


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৬, ২০১৯, ০১:০০ পিএম
জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি নেতারা যা বললেন

ঢাকা : সাম্প্রতিক রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে জামায়াতে ইসলামী বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে। জামায়াত নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত মূলত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের একটি সাক্ষাৎকার ও একটি সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে।

ভারতের একটি বহুল প্রচারিত গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকার ও নির্বাচনোত্তর ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলনে প্রবীণ এই আইনজীবী জামায়াত ইসলামীকে নিয়ে কথা বলেন।

তার সাক্ষাৎকার ও সংবাদ সম্মেলনের মূল কথা ছিল-বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে নিজ দলীয় প্রতীক ধানের শীষ দিয়ে ভোট করার সুযোগ দেবে জানলে তিনি বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করতেন না। তাদের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) সঙ্গে ঐক্য ধরে রাখতে হলে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে হবে।

ড. কামালের এই বক্তব্যের পরই তোলপাড় শুরু হয়। বিএনপির প্রতি চাপ সৃষ্টি হয় জামায়াত ছাড়ার। আবার জামায়াতের উপর অভ্যন্তরীণ চাপ শুরু হয় যে, বিএনপি যদি জামায়াতকে বোঝা কিংবা দায় মনে করে তবে তাদের সঙ্গে থাকার যুক্তি কি?

জানা গেছে, জামায়াত ইস্যুতে টানাপোড়েন চলছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটিকে ছাড়ার চাপে রয়েছে ফ্রন্টের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর জোটের অন্যতম শরিক ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে বিএনপির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হবে। বিদেশিদের দিক থেকেও একই চাপ রয়েছে।

বিএনপির মধ্যম সারির অনেক নেতা মনে করছেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকায় বিএনপি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের জোট থেকে বের করে দেয়া উচিত।

তবে ভোটের হিসাবসহ নানা কৌশলগত কারণ দেখিয়ে দলটিকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছে না বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

তবে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা বলছেন, জামায়াতের জোট হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাদের। সুতরাং বিএনপি চেয়ারপারসনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন, আর কেউ নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জামায়াতকে নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও নানা রকমের সংকটে ছিল বিএনপি। ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরামসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে জোট গড়তে দেরি করে মূলত জামায়াতের কারণে।

একপর্যায়ে ২০ দলীয় জোটের বাইরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন জোট গড়া হলেও জামায়াত নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে আসন ছেড়ে দেয়ায় নির্বাচনের পর অসন্তোষ ব্যক্ত করেন ড. কামাল হোসেন।

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন শনিবার বলেছেন, নির্বাচনে জামায়াতের ২২ নেতাকে যে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হবে, তা তিনি জানতেন না।

জামায়াতের সঙ্গে একই প্রতীকে ভোট করাকে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জানান, জামায়াত ছাড়তে বিএনপিকে চাপ দেয়া যেতে পারে। অবশ্য ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের নেতারা ড. কামালের বক্তব্যের বিরোধিতা না করলেও ২০ দলীয় জোটের শরিকরা একে নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন।

জামায়াতকে জোটে রাখার পক্ষের নেতারা মনে করছেন- জামায়াতের সঙ্গে ১৯৯৯ সাল থেকে বিএনপির জোট। এই জোট আদর্শিক নয়, আন্দোলন ও ভোটের জোট। ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে গত বছর। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট রয়েছে, তা জেনেই ঐক্যফ্রন্টে এসেছে শরিক দলগুলো। জামায়াত ঐক্যফ্রন্টের নয়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক। তাই এ নিয়ে বিতর্ক অহেতুক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জামায়াত ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্টে কোনো ফাটল ধরার সুযোগ নেই। এই জোট অটুট থাকবে।

কারণ আমরা অভিন্ন দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন করছি। জামায়াত নিয়ে গণফোরামের সভাপতি হিসেবে ড. কামাল হোসেন বক্তব্য দিয়েছেন। তা ঐক্যফ্রন্টের বক্তব্য নয় বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ড. কামাল হোসেনের জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি না করার প্রস্তাবকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি।

একই সঙ্গে তার কাছে আমাদের দাবি, তিনি (ড. কামাল) যেন আওয়ামী লীগের কাছে আহ্বান জানান, যেসব জামায়াত নেতাকে আওয়ামী লীগ ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছে, যাদের ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ে চেয়ারম্যান, মন্ত্রী-এমপি বানিয়েছে তাদের যেন বাদ দেয়া হয়। তাতে জনগণ খুশি হবে। তিনি বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন নির্বাচন কমিশন দিয়েছে। হাইকোর্টেরও একটি রায় আছে।

এরপর জামায়াতকে কেন আওয়ামী লীগ বাদ দিচ্ছে না। এখন শুনছি দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করতে আইন সংশোধন করা হবে। এটা নিয়েও তারা রাজনীতি করতে চায়।

সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময়ই জামায়াতকে নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন সামনে চলে আসায় কিছুটা গোঁজামিল দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়।

পরে বিষয়টি সামনে চলে আসে নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে। বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াত নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক দেয়ায় তা মেনে নিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতা।

এ নিয়ে মতবিরোধ ছিল বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও। বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, জামায়াত প্রথমে তাদের জানিয়েছিল তারা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবেন।

বিএনপিও সিদ্ধান্ত নেন তাদের আসনে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী দেবে না, যা জামায়াত নেতাদের জানিয়েও দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জামায়াত তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়।

এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই একমত ছিলেন না। পরে স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্যের কারণে ২২ আসনে জামায়াত নেতাদের ধানের শীষের প্রতীক দেয়া হয়।

এ নিয়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণফোরামের এক নেতাদের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী ওই নেতার বাকবিতণ্ডাও হয়েছিল। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, বিএনপি-জামায়াতের কোনো প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়নি। তারা সবাই বিএনপির প্রার্থী। এ নিয়েও সে সময় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল।

বিএনপির মধ্যম সারির অনেক নেতা জামায়াতকে জোটে রাখার বিপক্ষে। ছাত্রদলের একজন সহ-সভাপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এবং তরুণ প্রজন্ম মনে করে জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধীদের দল।

তরুণ ভোটাররাও জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া এবং বিএনপিদলীয় ধানের শীষ প্রতীক দেয়াকে ভালো চোখে দেখেননি। বিএনপিসহ ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক বেশি মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। অথচ জোটে জামায়াত থাকার কারণে আওয়ামী লীগসহ বাম দলের নেতারাও নানা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে।

ঐক্যফ্রন্টের নেতা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ড. কামাল সাহেবের বক্তব্য আমরা পূর্ণ সমর্থন করি। আমাদের ঐক্যফ্রন্টের মূল কথাই ছিল আমরা জামায়াতকে নেব না।

তিনি বলেন, একটি জিনিস প্রমাণিত ভোটের বাজারে জামায়াতকে দিয়ে বিএনপি কোনো লাভবান হয়নি। এখন জামায়াত যদি ক্ষমা চেয়ে রাজনীতি করতে চায় তা হলে আমরা ভেবে দেখব। তা না হলে বিএনপির উচিত তাদের বর্জন করা।

বিএনপি জামায়াত দূরত্ব : এদিকে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ চললেও বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে জামায়াতের। এ দূরত্ব এতদিন খুব একটা প্রকাশ না পেলেও এখন অনেকটাই দৃশ্যমান।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সেই দূরত্ব বেড়েছে কয়েক গুণ, বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক এখনও তলানিতে। বিশেষ করে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টন ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উপর বিএনপির অতিমাত্রায় নির্ভরতার বিষয়টি মানতে পারছে জামায়াত। এর বহির্প্রকাশ ঘটেছে দলটির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে।

বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ১৯৯৭-৯৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক ছিল সবচেয়ে মধুর। জামায়াতকে রাজনীতিতে শক্ত জায়গা করে দেয়ার জন্য বিএনপিকে কম কথা শুনতে হয়নি। বিশেষ করে ২০০১ সালে জামায়াতের দুই নেতাকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেয়া ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় বিএনপিকে এখনও অনেকে সহ্য করতে পারছে না।

জামায়াতও বিএনপির সেই আস্থার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করেছে প্রতি পদে পদে। বিশেষ করে ২০০৫ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের সরকার বিরোধী আন্দোলনে মাঠে থেকে বিএনপিকে সর্বোচ্চ সহায়তা করে জামায়াত।

শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালের নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়টাতে একতরফা ভোট ঠেকাতে জামায়াত ছিল বিএনপির রাজপথের সঙ্গী। সারা দেশে আন্দোলন সংগঠিত করতে কাণ্ডারির ভূমিকা রেখেছে ধর্মভিত্তিক এ দলটিই।

দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর। যখন আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের একের পর এক দণ্ড- এমনকি ফাঁসি দিতে থাকে, তখন বিএনপিকে পাশে পায়নি জামায়াত। এমনকি জামায়াতের ওই সব নেতার পক্ষে কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখায়নি জোটসঙ্গী বিএনপি। এতে হতাশ ও চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে জামায়াত।

এর পর থেকে বিএনপি সরকারবিরোধী যত আন্দোলন-সংগ্রামের ডাক দিয়েছে, সেগুলোতে জামায়াত নৈতিক সমর্থন দিয়েই দায় এড়িয়েছে। কৌশলগত কারণে জোট থেকে বিচ্ছিন্ন না হলে আগের সেই সখ্য আর দেখা যায়নি। এমনকি ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতাকেও দেখা যায়নি।

বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে একাদশ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে বিএনপি আলাদা একটি মোর্চার শরিক হওয়ার পর। বিএনপি কার্যত ২০ দলকে পেছনে ফেলে নতুন জোটের নেতাদের ভ্যানগার্ড হিসেবে বেছে নেয়। ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের কেউ-ই জামায়াতকে মেনে নিতে পারেনি।

এমনকি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করায় বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বিএনপির সঙ্গে জোটে আসেনি। ড. কামাল-কাদের সিদ্দিকী-আ স ম রব-মাহমুদুর রহমান মান্নারা শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোট করলেও দলটির সঙ্গে জামায়াতের গাঁটছড়া এমনকি অস্তিত্ব মেনে নেয়নি।

এসব বাস্তবতা সত্ত্বেও বিএনপি সুকৌশলে চেষ্টা করেছে ২০ দলকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সমান্তরালে হাঁটতে। এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে হোঁচট খেতে হয়েছে পদে পদে। শেষ পর্যন্ত ২০ দলকে আড়ালে রেখে ঐক্যফ্রন্টকেই সামনে দিয়ে নির্বাচন করেছে বিএনপি। এমনকি ২০ ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা আজ পর্যন্ত সামনাসামনি বসেনি। সিদ্ধান্ত নিতে দুই জোটের সঙ্গে আলাদা আলাদা বসতে হয়েছে বিএনপিকে। এ ক্ষেত্রে বাধা জামায়াত। এসব নিয়ে দুই জোটের শরিকদের মধ্যে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।

বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব তীব্র হয় একাদশ নির্বাচনে দুই জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে। একাদশ নির্বাচনে জামায়াতের চাহিদা ছিল অন্তত ৩৫-৪০ আসন। বিএনপি শুরুতে ২৫ আসন জামায়াতকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে দলটি। শেষ দরকষাকষিতে জামায়াতকে দেয়া হয় মাত্র ২০ আসন। জামায়াত এটি মেনে নিতে পারেনি। তারা জোট থেকে বের না হলেও বেশ কয়েকটি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীদের পাশাপাশি নিজেদের প্রার্থীও দিয়েছে।

একাদশ নির্বাচনে ‘শোচনীয়’ ভরাডুবি হয় বিএনপি জোটের। দুই জোটের ২৭ দল মিলে পায় মাত্র সাতটি আসন। বিএনপি পাঁচটি আসন পেলেও জামায়াত একটি আসনও পায়নি।

এর পরই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অপরিহার্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। বিএনপিতে জামায়াতবিরোধী বলয় হিসেবে যারা পরিচিত, তারা এখনই মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলটির সঙ্গ ছাড়তে চাপ সৃষ্টি করছে শীর্ষ নেতাদের। তবে এ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো নেতা এখনই মুখ খুলতে নারাজ।

যারা জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে- এতদিন জামায়াতের ভোট ব্যাংকের কথা বলে তাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধার কথা বলা হতো। এবার তো প্রমাণ হল জামায়াতের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।

তবে বিএনপিতে এখনও যারা জামায়াতকে সঙ্গী হিসেবে দেখতে চান, তাদের যুক্তি হচ্ছে- একাদশ নির্বাচন জনপ্রিয়তা কিংবা ভোটের মানদণ্ড হতে পারে না। সেটি হলে বিএনপির মতো এত বড় দল সারা দেশে পাঁচটি আসন পাবে কেন?

এদিকে জামায়াতও এত প্রশ্ন কিংবা বঞ্চনা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে থাকবে কেন, তা নিয়ে ভাবছে। দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একটি বড় অংশের যুক্তি হচ্ছে- শুধু বিএনপিকে রাজপথে ও ভোটের মাঠে শক্তি জোগানোর কারণে তাদের (জামায়াত) এই রাজনীতির পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। একে একে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এতকিছুর পরও জামায়াত নিয়ে বিএনপি অস্বস্তিতে ভুগলে তাদের সঙ্গে থাকার দরকার কি?

এসব ভাবনা-চিন্তার দোলাচলে সম্প্রতি বিএনপির ডাকে সাড়া দেয়নি জামায়াত। নির্বাচনের পর গত বৃহস্পতিবার ধানের শীষের সব প্রার্থীকে ঢাকায় ডাকে বিএনপি। সেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের অন্য শরিকদের প্রার্থী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও জামায়াতের কেউ ছিল না। এটিকে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতির বিচ্ছেদ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!