• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জেলার দর্শনীয় স্থান


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯, ০২:৫৪ পিএম
জেলার দর্শনীয় স্থান

টাঙ্গুয়ার হাওর : টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। অথৈ পানি, জলাবন, নীল আকাশ, পাহাড় ও চোখ জুড়ানো সবুজ এই হাওরকে অপরূপ সাজে সাজিয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের মোট আয়তন ৬ হাজার ৯১২ একর। তবে বর্ষাকালে এই হাওরের আয়তন বেড়ে প্রায় ২০ হাজার একর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

 টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ এবং ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপের সমন্বয়ে জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। শীতকালে এই হাওরে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখির বিচরণ ঘটে। টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়গুলো দেখা যায়। মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট বড় ঝরনা বা ছড়া টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে মিশেছে।

শীত মৌসুমে ব্যাপক পাখির আগমন ও অবস্থানে মুখরিত হয় টাঙ্গুয়ার হাওর। মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য দেশের মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধি করা। ১২০টি বিল ও ১৮০টি নিম্নাঞ্চল/কান্দা মিলে এই হাওরের সৃষ্টি। তাই স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ‘নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল’ নামে পরিচিত।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট বড় প্রায় ৪৬টি দ্বীপের মতো ভাসমান গ্রাম বা দ্বীপ গ্রাম আছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে। আর ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার সাইটের তালিকায় স্থান করে নেয়। মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দেশের মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধি করা।

যাদুকাটা নদী : যাদুকাটা নদী সুনামগঞ্জ জেলায় বাংলাদেশ-ভারত উত্তর-পূর্ব সীমান্তের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে। রেণুকা হচ্ছে যাদুকাটা নদীর আদি নাম। জনশ্রুতি আছে, নদী তীরবর্তী কোনো এক গাঁয়ের বধূ তার শিশুপুত্র যাদুকে কো‌লে নি‌য়ে এই নদীর মাছ কাট‌ছি‌লেন। একপর্যায়ে অন্যমনস্ক হ‌য়ে মা‌ছের বদলে তার কোলের শিশুকে কেটে ফেলেন। পরবর্তীকালে সেই প্রচলিত কাহিনি থেকেই নদীটির নাম হয় যাদুকাটা নদী। মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড় থেকে বয়ে চলে যাদুকাটা নদীটি প্রায় ২০ মাইল পর্যন্ত গিয়ে ‘রক্তি’ নামে সুরমা নদীতে মিলিত হয়। নদীর এক পাড়ে দেখা যায় সবুজ বৃক্ষরাজিময় বারেক টিলা; অন্যদিকে খাসিয়া পাহাড়।

নীলাদ্রি লেক : নীলাদ্রি লেক খ্যাত পর্যটন স্থানটি চুনাপাথরের পরিত্যক্ত খনির লাইম স্টোন লেক। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট নামক গ্রামে নীলাদ্রি লেকের অবস্থান। এই লেকের প্রকৃত নাম শহীদ সিরাজ লেক। অবশ্য স্থানীয় লোকজন একে টেকেরঘাট পাথর কোয়ারি নামে চেনে। লেকের চমৎকার নীল পানি, ছোট বড় টিলা আর পাহাড়ের সমন্বয় নীলাদ্রি লেককে করেছে অপার্থিব সৌন্দর্যের অধিকারী। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য নীলাদ্রি লেক দেখে অনেক পর্যটক একে বাংলার কাশ্মীর হিসেবে অভিহিত করেন।

হাসন রাজার জাদুঘর : হাসন রাজার বাড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে মিউজিয়াম, যা তার বাড়িটিকে হাসন রাজার জাদুঘর হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। জাদুঘরের প্রবেশপথে প্রথমেই চোখে পড়ে লালন শাহের ছবি। এরপর ১৯৬২ সালে কলকাতার একটি স্টুডিও থেকে সংগ্রহ করা হাসন রাজার একমাত্র আলোকচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। হাসন রাজার জাদুঘরটি হাসন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন জিনিসপত্রের সংগ্রহে যেন জীবন্ত হয়ে আছে। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘হাসন একাডেমি’কে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেন, যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে হাসন রাজার জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত।

বারেক টিলা : বারেক টিলা তাহিরপুর উপজেলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত। বারিক্কা টিলা বা বারিক টিলা নামেও পরিচিত। টিলার উপর থেকে মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড় দেখা যায়। বারিক্কা টিলায় প্রায় ৪০টি আদিবাসী পরিবার বাস করে। সবুজে পরিপূর্ণ টিলার মধ্য দিয়ে টেকেরঘাট যাওয়ার রাস্তা নির্মিত হয়েছে। বারেক টিলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যাদুকাটা নদী। বারেক টিলার উপর থেকে সূর্যোদয়ের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।

ডলুরা শহীদদের সমাধি সৌধ : যেখানে গেলে মুহূর্তেই ৪৮ জন মহান শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় অন্তত চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তার নাম ডলুরা। পাহাড়ের পাদদেশে চলতি নদীর তীরে লুক্কায়িত আছে সেই একাত্তরের রক্তত্যাগ সংগ্রামের স্মৃতিচিহ্ন। মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জের ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধে সীমান্তবর্তী ডলুরা ছিল সুনামগঞ্জের অন্যতম রণাঙ্গন। ১৯৭৩ সালে ৪৮ জন শহীদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ডলুরা শহীদ মাজার।

পাইলগাঁও জমিদারবাড়ি : প্রাচীন পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও জমিদারবাড়ি। প্রায় সাড়ে পাঁচ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তিনশ বছরেরও বেশি পুরনো বাড়িটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন। এ জমিদার পরিবারের শেষ জমিদার ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের কংগ্রেস সভাপতি এবং আসাম আইন পরিষদের সদস্য। জমিদারবাড়ির দক্ষিণ দিকে সিলেটের কুশিয়ারা নদী বহমান।

শিমুল বাগান : শিমুল বাগান তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা এক শিমুল গাছের বাগান। ২০০৩ সালের দিকে অর্থাৎ প্রায় ১৫ বছর আগে ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে তিন হাজার শিমুল গাছ লাগানোর মাধ্যমে জয়নাল আবেদীন নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী এই বাগান শুরু করেন। এই বাগানে অনেক লেবুগাছও রয়েছে। বসন্তকালে শিমুল বাগানের দিকে তাকালে গাছের ডালে ডালে লেগে থাকা লাল আগুনের ঝলকানি চোখে এসে লাগে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!