• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জোট টিকিয়ে রাখতে মরিয়া বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৮, ২০১৬, ০৯:২৯ পিএম
জোট টিকিয়ে রাখতে মরিয়া বিএনপি

বিশেষ প্রতিনিধি

২০ দলীয় জোট থেকে একের পর এক শরীকরা বেরিয়ে যাওয়ায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে বিএনপি। জোটের অখণ্ডতা টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত জোড়াতালির আশ্রয় নিতে হচ্ছে তাদেরকে। যদিও বিষয়টিকে নিজেদের ব্যর্থতা হিসেবে না দেখে, সরকারের কারসাজি হিসেবেই দেখছেন বিএনপি নেতারা। গত বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে পুরোনো শরিক ইসলামী ঐক্যজোট বেরিয়ে যাওয়ার পর জোটের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও বিএনপির কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রমতে, নানামুখী অসন্তোষ ও পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাতে গিয়ে নিজেদের প্রাপ্তির খাতা শূন্য দেখে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামী ঐক্যজোট। সংখ্যাতাত্ত্বিক নামে জমাট বাঁধা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে ইসলামী ঐক্যজোট বেরিয়ে যাওয়ায় নাম জটিলতায় পড়ে বিএনপি। তাই সংখ্যাতাত্ত্বিক নামটি ঠিক রাখতে দ্রুত বিকল্প পথ বের করে তারা। ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক সহ-সভাপতি (বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা) মাওলানা আবদুল রকিবকে চেয়ারম্যান করে ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই নতুন আরেকটি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করে বিএনপি। গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশ্ববর্তী একটি মাদ্রাসা থেকে কয়েকজন ছাত্র ও শিক্ষক ডেকে এনে গুলশান কার্যালয়েই গঠন করা হয় মাওলানা আবদুল রকিবের নেতৃত্বে নতুন এক ইসলামী ঐক্যজোট। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী ২০ দলীয় জোট ত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর অন্তত পাল্টা আরেকটি কাউন্সিল করে মাওমানা রকিবকে দিয়ে নতুন ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করাতে পারত বিএনপি। কিন্তু সে পথে না গিয়ে জোটের আরেক শরীক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের বিবাদমান একটি অংশের কয়েকজন নেতাকর্মী ও ছাত্র শিক্ষককের সমন্বয়ে আরেকটি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করে বিএনপি রাজনৈতিক অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে। জোটের নাম ও কলেবর ঠিক রাখতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে গুলশান কার্যালয়ে আরেকটি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ। সূত্রমতে, ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল রকিব ও মাওলানা আব্দুল করিম খানের নেতৃত্বে নতুন যে ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করা হয়েছে- এর ড্রাফটাও তৈরি হয়েছে গুলশান কার্যালয়ে। বিএনপির মত একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভূঁইফোড় একটি রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম নিয়েও হাতাশা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। বিএনপির প্রগতিশীল অংশেও ক্ষোভের জন্ম হয়েছে। তবে বিষয়টি যেহেতু খালেদা জিয়ার সম্মতিতে তার কার্যালয়েই হয়েছে, তাই প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না। সূত্রমতে, ইসলামী ঐক্যজোট বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিএনপি প্রধানের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর তিনিই আরেকটি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করে জোটের কলেবর ঠিক রাখার উদ্যোগ নেন। এ কাজে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের এক শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়াকে সহযোগিতা করেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাসের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়া ওই নেতা নতুন ইসলামী ঐক্যজোট গঠনের সময় গুলশান কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাস তখন উপস্থিত ছিলেন আবদুল লতিফ নেজামী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের জাতীয় কাউন্সিলে।

এদিকে গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল রকিব জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে। অথচ ওই সংবাদ সম্মেলন থেকেই ৬৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তালিকা সংবাদকর্মীদের সরবরাহ করা হয়। যেখানে চেয়ারম্যান, ৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান, মহাসচিব, ৭ জন যুগ্ম মহাসচিব, ৪ জন সহকারী মহাসচিব, ৮ জন সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, ৬ জন উপদেষ্টা ও ২৬ জন নির্বাহী সদস্য রয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে নতুন ইসলামী ঐকজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল রকিব বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা এই কমিটির খবর জানেন না? যদি জেনে থাকেন তাহলে ১৫ দিন পর নির্বাহী সদস্যদের নাম ঘোষণা করতে চাইলেন কেন? আর যদি না জানেন তাহলে এই কমিটি কে গঠন করেছে এবং কীভাবে করেছে? নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির তিনজন সিনিয়র নেতা বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে ইসলামী ঐক্যজোট নতুন কমিটি গঠন করেছে এবং ২০ দল থেকে বেরিয়ে গেছে। ঠিক সেই সময় কোনো প্রকার কাউন্সিল বা সভা ছাড়া গুলশান কার্যালয়ে আরেকটি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন মোটেই ভাল দেখাচ্ছে না। এটি খুবই দৃষ্টিকটু হয়েছে। তবে জোটের অখণ্ডতা রক্ষা ও কলেবর ঠিক রাখতে এ কাজটি করা বিএনপির জন্য অনিবার্য ছিল। ২০১২ সালের এপ্রিলে চার দলীয় জোট সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। পরে আরো দুটি দলের ‘ভগ্নাংশ’ এ জোটে যোগ দিলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ২০ দলীয় জোটে রূপ নেয়। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ২০ দলীয় জোটে ভাঙন শুরু হয়। প্রথমেই জোট থেকে বেরিয়ে যায় শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। এর পর শেখ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানীও ২০ দলীয় জোট ছেড়ে দেয়। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগের বড় দুটি অংশ বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে সরে যায়। তবে এসব দলের ভগ্নাংশ দিয়ে নতুন দল গঠন করে ২০ দলীয় জোটের সংখ্যাতাত্ত্বিক নাম ও কলেবর ঠিক রাখে বিএনপি।

 

সোনালীনিউজ/এমএইউ

 

Wordbridge School
Link copied!