• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জোট-রাজনীতির চাপে বিএনপি


বিশেষ প্রতিবেদক নভেম্বর ২৪, ২০১৮, ১০:০৪ পিএম
জোট-রাজনীতির চাপে বিএনপি

ঢাকা : আসন ভাগাভাগি নিয়ে সরকারবিরোধী শিবিরে দেখা দিয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ। বেশ কয়েকটি আসনে ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির একাধিক হেভিওয়েট মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায়, বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন কয়েকজন।

যদিও বিএনপি বলছে, নির্বাচনে ভালো ফলের স্বার্থে জোটের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত সবাই। একদিকে বিশ দলীয় জোট। আরেকদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। মাঝখানে দুই জোটেরই প্রধান দল বিএনপি আসন ভাগাভাগি নিয়ে মিত্রদের চাপে।

এদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের জন্য সর্বোচ্চ ৭০ আসনে ছাড় দেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। তবে এখন পর্যন্ত আসন বণ্টনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

জানা গেছে, ঢাকা দুই ও তিন আসন থেকে নির্বাচন করতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ডক্টর কামাল হোসেনের দল গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। কিন্তু ঢাকা দুই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চারবারের এমপি আমানউল্লাহ আমান। ঢাকা তিন আসন থেকে ধানের শীষের টিকিট চাইছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। দুটি আসন নিয়ে হেভিওয়েট তিন মনোনয়নপ্রত্যাশীর লড়াইয়ে ছিটকে পড়ার ঝুঁকিতে একজন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান জানান, ‘আমি মনে করি দল চিন্তা করেই প্রার্থী বাছাই করবে। কাকে কোথায় প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিলে জয়ী হয়ে আসতে পারবে, সেদিক বিবেচন করেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া উচিত।’

চট্টগ্রাম চৌদ্দ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান চারবারের এমপি, বিশ জোটের শরিক দল এলডিপির সভাপতি অলি আহমেদ। কিন্তু এই আসন থেকে লড়তে চান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এবং জামায়াতে ইসলামীর শাসমুল ইসলামন। ত্রিমুখী লড়াই থাকলেও অলি আহমেদকেই এই আসন ছেড়ে দেয়ার আভাস রয়েছে।

এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, ‘এই আসনে শুধু হেভিওয়েট প্রার্থী হলেই হবে না, গ্রহনযোগ্যতাও দেখতে হবে। জনগনের সাথে সম্পর্ক দেখতে হবে। যোগ্যতা থাকতে হবে। যাদের জনগণের সাথে সম্পৃক্তা নেই এমন ব্যক্তিকে তো কেউই ভোট দেবে না।’

এ বিষয়ে গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিশ্বাস মনোনয়ন নিয়ে আমাদের মধ্যে খুব বেশি দরকষাকষি হবে না। আমি ঢাকা ছয় আসন থেকে প্রর্থী হবার আকাঙ্খা প্রকাশ করেছি।’ আসন ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা থাকলেও সব পক্ষেরই ছাড় দেয়ার মানসিকতায় সমস্যা সমাধানে আশাবাদী বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, ‘বর্তমান অবস্থা থেকে যেখানে যেটা প্রয়োজন অর্থাৎ এই অবস্থা থেকে মুক্ত হবার জন্য যতখানি ত্যাগ প্রয়োজন সেটা করতে সব পক্ষই প্রস্তুত আছে।’

শরিকদের ছাড় দেবে বিএনপি : অনেক জল্পনা-কল্পনার পর আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিএনপিকে এখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে নতুন চ্যালেঞ্জ। আসন বণ্টন নিয়ে জটিলতায় রয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক জোটের শীর্ষ দল বিএনপি। যদিও জোটবদ্ধ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তাদের নতুন নয়।

কিন্তু এবার বিএনপিকে সামাল দিতে হচ্ছে জটিলতর এক জোট-রাজনীতি। বিএনপি শরিক দলগুলোর পাশাপাশি যুক্ত রয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাই হিসাবটা কিছুটা কঠিন। অতীতে জোটের শরিক দল জামায়াতের সঙ্গে আসন বণ্টনকে কেন্দ্র করে দলে নেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা কোন্দল।

এবার কোন দল কতটা আসনে লড়বে তা নিয়েই চলছে দরকষাকষি। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের পাঁচটি দলের মধ্যে বিএনপি বাদে বাকি দলগুলো ১৫০ আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা ভাবছে।

অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোও প্রার্থী দিতে চায় ১৫০ আসনে। প্রতিটি দলই মনে করছে নিজেদের যথেষ্ট ভোট রয়েছে ওইসব আসনে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কতটি আসনে জোট শরিকদের ছাড় দেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়। এবার জোটের পাশাপাশি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ে।

ফলে অনেক বেশি ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়েই তাদের চূড়ান্ত করতে হবে প্রার্থী মনোনয়ন। কৌশলে শান্তিপূর্ণভাবেই মেটাতে হবে শরিক দলগুলোর আসন চাহিদা। চারদলীয় জোটবদ্ধভাবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে শরিকদের ৪১টি আসন ছেড়েছিল বিএনপি। এবার একই সঙ্গে দুটি জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করছে বিএনপি। দুই জোটের শরিকদেরই আসনের চাহিদা বেশি। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার বিএনপিকে অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি আসন ছাড়তে হবে।

ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমঝোতা হলে আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াত যেখানে প্রার্থী দেবে সেখানে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী দেবে না। আবার ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী থাকলে জামায়াতও প্রার্থী দেবে না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!