• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জোটের কাছে শরীকদের আকাশছোঁয়া দাবি


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৪, ২০১৮, ০১:৩৮ পিএম
জোটের কাছে শরীকদের আকাশছোঁয়া দাবি

ঢাকা : এগিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎপর হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের অধিকাংশ শরীক দলগুলো। জোটবদ্ধ নির্বাচনকে সুযোগ হিসেবে দেখছে তারা।

সাংগঠনিক ক্ষমতা ও জনসমর্থন তেমন একটা না থাকলেও তাদের চাওয়া আকাশছোঁয়া। এ সুযোগে তারা যত পারে আসন দাবি করছে জোটপ্রধানের কাছে। তাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। এ নিয়ে শরীকদের সঙ্গে জোটপ্রধানের দর কষাকষি চলছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, শরিক দলগুলোর অধিকাংশই নিজ প্রতীকের বদলে জোটের প্রধান দলের প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি দলের নেতা বলেছেন, তাদের প্রতীক পরিচিত নয়। ফলে ভোটে ভালো করা যাবে না।

আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আপনারা তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে কী করেছে যে নিজ দলের প্রতীককেও পরিচিত করতে পারেনি? আবার আসন চায় এতগুলো।’

বিএনপির একজন নেতাও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘তারা এত চায় যে আমাদের জন্যই কিছু থাকে না।’

বিএনপির দুই জোট ভোটে আসার ঘোষণা দেয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের মতো মহাজোটে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেইসঙ্গে শক্তি আরও বাড়াতে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টকে নেয়ার চেষ্টা চলছে।

আওয়ামী লীগের কাছে শরিক দলগুলো যে তালিকা দিয়েছে সেগুলো যোগ করলে ১৭৯টি হয়। আবার এখনো জোটে আসার ঘোষণা না দেয়া জাতীয় পার্টি চেয়েছে ১০০টি। যুক্তফ্রন্ট এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চায়নি। তবে তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাওয়ার আলোচনার সময় বিএনপিকে ১৫০টি আসন দিয়ে বাকি সবগুলো ফ্রন্টের শরিকদের জন্য চেয়েছিল।

অন্যদিকে বিএনপির কাছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা ১৫০টি আসন চেয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এর বাইরে ২০ দলের শরিকরাও শতাধিক আসন চেয়েছে। আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে তারা সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৭০টি আসনে ছাড় দেবে। বিএনপির সিদ্ধান্তও একই ধরনের।

জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জিএম কাদের জানিয়েছেন জানিয়েছে তারা আওয়ামী লীগের কাছে ১০০টি আসন চাইবে। তবে দরকষাকষি করে সম্মানজনক আসন পেলেই খুশি।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৩৫টির মতো আসনে ছাড় দেয়া হয়েছিল। এর বাইরে আরও কয়েকটি আসন ছিল উš§ুক্ত যেখানে দুই দলেরই প্রার্থী ছিল।

১৪ দলের শরিকরা সব মিলিয়ে তালিকা দিয়েছে ১৬৯টি আসনের। এর মধ্যে জাসদের দুই অংশই চেয়েছে ৭৫টি।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন অংশ ৫০টি এবং শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন আরেক অংশ চেয়েছে ২৫টি।
বর্তমানে ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আছেন তিন জন।

শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ২৫ জনের একটা তালিকা দিয়েছিলাম। এখন আবার আরেকটা সংক্ষিপ্ত তালিকা দেব।’

ওয়ার্কার্স পার্টি তালিকা দিয়েছে ২৭টি আসনের। বর্তমানে তাদের নির্বাচিত সদস্য আছেন ছয়জন। এর মধ্যে নড়াইল-২ আসনে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা নৌকা নিয়ে প্রার্থী হলে সেখানে ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য বাদ পড়বেন, এটা নিশ্চিত।

দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে আমাদের ছয়জন প্রার্থীর পারফরমেন্স ভালো ছিল। এই নির্বাচনে আশা করি, ১০টি আসনে আমাদের প্রার্থী থাকবে।’

২০১৪ সালে এই দুটি দল ছাড়া কেবল তরীকত ফেডারেশনকে দুটি আসন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার তারাই চাইছে ১৫টি আসন।

কখনো ছাড় না পেলেও এবার গণতন্ত্রী পার্টির ১২টি, জাতীয় পার্টি জেপি ১৬টি, ন্যাপ ১২টি, সাম্যবাদী দল ছয়টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ও বাসদ ও গণআজাদী লীগ দুটি করে আসন চাইছে।

জোটে নেই কিন্তু আওয়ামী লীগের আনুক‚ল্য চায় এমন দলগুলোর মধ্যেও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিএনএ, এসএম আবুল কালাম আজাদের বিএনএফ এবং সৈয়দ বাহাদুর শাহর ইসলামিক ফ্রন্টেরও আছে আলাদা দাবি।

বিএনপি গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করার পর পুরনো জোট ২০ দলকে প্রকাশ্যে আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছে না। আসন চাওয়ার ক্ষেত্রেও ২০ দলের চেয়ে ঐক্যফ্রন্টের দাবি বেশি।

ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির শরিক হিসেবে আছে গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। প্রতিটিই আলাদাভাবে আসন দাবি করেছে।

নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে ৫০টা সংসদীয় আসন চাইব।’

গণফোরাম কয়টি আসন চায়, সেটি এখনো সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে দলের পক্ষ থেকে একশ মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়েছে। তারা ৩০টি আসন চেয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

দলটির কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘গ্রহণযোগ্য এবং নির্বাচনে জয় লাভ করার ক্যাপাবিলিটি আছে এমন প্রার্থী বাছাই করব।’

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মাদ মনসুর আহমেদ নিজে নির্বাচন করবেন জানালেও তার উদ্যোগের কয়জন ভোট করবেন, সেটা জানাননি।

আ স ম আবদুর রবের জেএসডিও চেয়েছে ৩০টি আসন। আর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ দাবি করেছে ২০টি।

ঐক্যফ্রন্ট নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলকে অল্প কয়টা আসন দিতে হবে। আর আমরা নিজেরা কিছু চাইব আর এর বাইরে নাগরিক সমাজের সদস্যদের জন্যও আসন চাইব। কারণ আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাইছি।’

বিএনপির আরেক জোট ২০ দলেরও চাহিদা ১০০টির বেশি। এর মধ্যে জামায়াত বরাবর ৬০টি আসন চেয়ে আসছে। তবে এবার ৫০টির মতো তারা চেয়েছে।

২০০৮ সালে জামায়াতকে ৩৫টি আসনে ছাড় এবং চারটি ছিল উন্মুক্ত। দলের কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘তবে অতীতে যেসব আসনে আমরা নির্বাচন করেছি অন্তত সেগুলো চাই। কিন্তু সেখানে হয়তো কিছু সংযোজন, বিয়োজন হবে।’

বিএনপির কাছে ৩০ জনের তালিকা দিয়েছে এলডিপি। তবে তারা অলি আহমেদের জন্য চট্টগ্রাম-১৪, মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের জন্য কুমিল্লা-৭ এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদৎ হোসেন সেলিমের জন্য ল²ীপুর-১ আসনটি পাওয়ার ক্ষেত্রে অটল।

যদিও এতদিন জামায়াত, বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট এবং জাগপা ছাড়া কাউকে ছাড় দেয়নি বিএনপি। এদের মধ্যে ঐক্যজোট আবার বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছে। কিন্তু এবার প্রতিটি দলই চাইছে আসন।

অনিবন্ধিত জাতীয় পার্টি (জাফর)ই চেয়েছে ১৫টি আসন। কল্যাণ পার্টির ১২ জন নেতা আগ্রহী বলে জানানো হয়েছে বিএনপিকে। যদিও চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে চট্টগ্রাম-৫ আসন দিলেই খুশি তারা।

বিজেপি সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ ভোলা-১ অথবা ঢাকা-১৭ এবং দলের মহাসচিব আবদুল মতিন সউদ ঢাকা-৫ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। যদিও তারা দাবি জানাবে আরও বেশি।

পার্থ বলেন, ‘কত আসনে লড়তে চাই আমরা সেটাও বলা ঠিক হবে না। কারণ অনেকেই আছেন যারা আমাদের দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন।’

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর দুই অংশ দুটি, খেলাফত মজলিস তিনটি, মুসলিম লীগ এবং জাপগা একটি করে আসন চেয়েছে।
ভোটে আসার ঘোষণা দেয়ার পরই গত রবিবার রাতে আসন বণ্টনের বিষয়ে জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানসহ স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য বৈঠক করেন।

জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শরিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই আসনকেন্দ্রিক বিষয় সমাধান হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!