• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জোটের পরিধি বাড়াতে আ.লীগের দৌড়ঝাপ


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ২৬, ২০১৮, ০৯:৩৮ পিএম
জোটের পরিধি বাড়াতে আ.লীগের দৌড়ঝাপ

ঢাকা : আগামী নির্বাচনে ১৪ দলের কলেবর বাড়ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছ্নে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের শরীক দলগুলোর জন্য ৭০ আসন ছাড়তে পারে আওয়ামী লীগ।

রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক আসনগুলোতে তাদের প্রার্থী মনোনয়ন চুড়ান্ত করবে। এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে, জনগণের কাছে যারা অধিক গ্রহণযোগ্য, তারাই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন।

ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে যুক্ত করতে প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা আলোচনা শুরু করেছেন। খবর ডিডাব্লিউ

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার সিপিবি অফিসে গিয়ে দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এরপর সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে। এছাড়া তিনি কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন।

সাধারণ সম্পাদকের এই তৎপরতা নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এলে জোট ভাঙা গড়া শুরু হয়। এটাও তেমনি একটা তৎপরতা। অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে আসতে চায়। তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। এগুলো খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কলেবর বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে কারা কীভাবে অংশ নেবে তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বলে জানান হানিফ। সামনের দিনে এই আলোচনা আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

জোট-মহাজোটের বাইরের বামপন্থি দলগুলোকে নির্বাচনের মাঠে পাশে পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। জোটে না এলেও অন্তত আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই এমন তৎপরতা চলছে। তবে বাম দলগুলো আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট-মহাজোটের বাইরে ‘বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প’ জোট গঠনের আকাঙ্খার কথা জানিয়েছে।

তাছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে এখনই তাঁরা চূড়ান্ত কিছু বলতে চাইছেন না। বিষয়টি নির্বাচনকালীন পরিস্থিতির ওপরই ছেড়ে দিচ্ছেন তাঁরা।

আওয়ামী লীগেরসাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক এবং আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে ডয়চে ভেলের এক প্রশ্নের জবাবে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আমরা তো আওয়ামী লীগের আদর্শের সঙ্গে একমত না। তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আওয়ামী লীগের জোট হতে পারে বিএনপির সঙ্গে, আমাদের সঙ্গে না। কারণ তাদের দুই দলের আদর্শই এক।

সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ওবায়দুল কাদের অফিসে এসেছেন। সাধারণ দু’চারটি কথা হয়েছে। আর অফিসে আসলেই কথা বলতে হবে এমনও না। নির্বাচনে যাব কি-না সেটা নির্ভর করবে তখনকার পরিস্থিতির উপর। আমরা দরকার মনে করলে নির্বাচনে যাব, আর মনে না করলে নির্বাচনে যাব না। সে কথা এখনই বলা যাবে না।’

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না আসা বিএনপি ও তার মিত্ররা আগামী নির্বাচন থেকেও দূরে থাকলে ঐ নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়তে পারে। তাই যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার প্রচেষ্টা আছে সরকারি নীতিনির্ধারকদের।

সূত্রমতে, জোট সম্প্রসারণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্প্রতি ক্ষমতাসীন জোটটির সঙ্গে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপিসহ নয়টি রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় হয়েছে।

১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ৯ দলের নেতাদের ঐ আলোচনা হয়। সভায় আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে হারাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘কাজ করার আগ্রহ’ ব্যক্ত করেন নাজমুল হুদা।

গত বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও নাজমুল হুদার সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন।

ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে নাজমুল হুদা বলেন, ‘এই ধরনের একটা আলোচনা তো হচ্ছেই। কিন্তু আমি তাদের বলেছি, আমরা ৩১ দলীয় জাতীয়তাবাদী জোট করতে চাই। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিদের নিয়ে হবে এই জাতীয়তাবাদী জোট। জাতীয়তাবাদী আদর্শ আমারও আছে। এটা কোনো একক দলের না। এই কারণেই আমরা জাতীয়তাবাদী জোট করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। আসলে সবকিছু নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের উপর। খুব শিগগিরই তাঁর কাছে আমরা সিদ্ধান্ত পাব বলে আশা করছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪ দলে যুক্ত হতে আগ্রহী দলগুলো হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সম্মিলিত ইসলামিক জোট, কৃষক শ্রমিক পার্টি, একামত আন্দোলন, জাগো দল, ইসলামিক ফ্রন্ট এবং গণতান্ত্রিক জোট৷ তবে এসব দলের ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে আপত্তি রয়েছে ১৪ দলের বর্তমান শরিকদের৷ তাঁরা বলছেন, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ২৩ দফার ভিত্তিতে গঠিত ১৪ দলের নীতি-আদর্শের সঙ্গে এসব দলের কোনো মিল নেই। ফলে তাদের ১৪ দলে নেওয়া হলে জোটের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

নির্বাচন সামনে রেখে অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে আওয়ামী লীগের৷ সম্প্রতি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে।

এরই ধারাবাহিকতায় জোটের পরিধি বাড়ানো প্রসঙ্গে মঙ্গলবার দলীয় ফোরামের বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক জোট থাকলে তার পরিধি বাড়া স্বাভাবিক। আগামী নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই দৃশ্যপটের মধ্যে কিছু কিছু পরিবর্তন আসবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!