• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জ্যোৎস্নাবিলাসীদের হাট বসছে শুভসন্ধ্যার চরে


নিজস্ব প্রতিবেদক, বরগুনা নভেম্বর ১২, ২০১৮, ০৬:৪৬ পিএম
জ্যোৎস্নাবিলাসীদের হাট বসছে শুভসন্ধ্যার চরে

বরগুনা : একদিকে সীমাহীন সাগর আরেক দিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট টেংরাগিড়ি। পাশে দীর্ঘ ঝাউবন, আরেক দিকে তিন তিনটি নদীর বিশাল জলমোহনা। সব মিলিয়ে নদ-নদী আর বন-বনানীর এক অপরূপ সমাহার বরগুনার শুভসন্ধ্যার চর। আসছে পূর্ণিমায় এখানেই জল-জ্যোৎস্নায় একাকার হবে জ্যোৎস্নাবিলাসী হাজারো মানুষ। ২৩ নভেম্বরের এ পূর্ণিমা ঘিরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক আয়োজন।

স্থানীয়ভাবে গত কয়েক বছর ধরেবরগুনায় হয়ে আসছে এই জ্যোৎস্না উৎসব। এবার এটি হবে আরো বড় পরিসরে। পরিণত হবে বাংলাদেশের জ্যোৎস্না উৎসবে। পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনাময় বরগুনার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে এ জ্যোৎস্না উৎসব ঘিরে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

বরগুনার প্রধান তিনটি নদী পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর যেখানে সাগরে মিশেছে ঠিক সেখানে নবগঠিত তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের স্নিগ্ধ বেলাভূমি ‘শুভসন্ধ্যার’ বিস্তীর্ণ বালুচরে চতুর্থবারের মতো এ উৎসব উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জ্যোৎস্না উৎসবের উদ্যোক্তা সাংবাদিক সোহেল হাফিজ জানিয়েছেন, গত ৮ নভেম্বর বরগুনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে এ বিষয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বরগুনার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেন। অংশগ্রহণ করেন জ্যোৎস্না উৎসবের প্রথম দিকের সব সারথিও।

এবারের জ্যোৎস্না উৎসবে বরগুনা থেকে ২৩ নভেম্বর দুপুরে দুটি দোতলা লঞ্চ সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডাবল কেবিন ২০০০, সিঙ্গেল কেবিন ১০০০ এবং ডেকের জন্য ২০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। কেবিন এবং ডেকের টিকেট আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বিক্রি করা হবে।

লঞ্চ শুভসন্ধ্যায় পৌঁছানোর পর কেউ কেবিনে অবস্থান করতে পারবেন না। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের খাবার সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হবে না। তবে লঞ্চে ও উৎসবস্থলে পর্যাপ্ত রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন বরগুনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের সময়োপযোগী ভাবনা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে বরগুনার জ্যোৎস্না উৎসব বাংলাদেশের জ্যোৎস্না উৎসবে পরিণত হতে যাচ্ছে।

জ্যোৎস্না উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা মনির হোসেন কামাল জানিয়েছেন, দুপুর দেড়টায় বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যাবে। বরগুনার খাগদন নদী হয়ে বাইনচটকীর স্নিগ্ধ বনভূমির পাশ দিয়ে কুমিরমারা আর গোড়াপদ্মার নয়নাভিরাম বন-বনানীর কোল ঘেঁষে বিকাল ৫টার দিকে লঞ্চ পৌঁছাবে শুভসন্ধ্যার চরে।

এরপর বিস্তীর্ণ সেই স্নিগ্ধ বালুচরে শেষ বিকালের ঘোরাঘুরির পর রাতভর জ্যোৎস্নার গান, বাউলসঙ্গীত, মোহনীয় বাঁশি, পুথি এবং কবিতা আবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে জলজোছনায় অবগাহন হবে সবার। থাকবে লোভনীয় পুরস্কারের আকর্ষণীয় লটারি। গভীর রাত পর্যন্ত জ্যোৎস্নাস্নাত হয়ে রাত ৩টায় পুনরায় বরগুনার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়বে। সকাল ৬টা নাগাদ লঞ্চ ভিড়বে বরগুনার ঘাটে।

এবারের জোছনা উৎসবে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ রাজধানী ঢাকা এবং দেশ-বিদেশের ২০ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক ভিড় জমাবেন বলে ধারণা আয়োজক কমিটির। বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ সময়, নদনদীর মোহনা এবং শীতের হিম হাওয়ার কথা ভবনায় রেখে এ উৎসবে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

তা ছাড়া যেহেতু দীর্ঘ সময় বালুচরে ঘোরাঘুরি করতে হবে তাই বেলাভূমিতে নিজেদের মতো করে আড্ডা জমাতে হলে ভ্রমণের আগে প্রয়োজনীয় মাদুর, বিছানার চাদর, শীতের কাপড়, বিশুদ্ধ পানি, গামছা বা তোয়ালে, টিস্যু পেপার এবং লাইট ফ্লাস্ক সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যারা ডাক্তারি পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন তাদের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে দরকারি সব ওষুধ সঙ্গে নিতে। শুভসন্ধ্যার বেলাভূমিতে বাহারি খাবারের আয়োজন নিয়ে একাধিক রেস্টুরেন্টসহ ছোট ছোট অনেক স্টল বসবে বলেও ধারণা করা যাচ্ছে।

বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি নারী ও পুরুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হবে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে। মূল স্টেজের পেছনেই থাকবে নারীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার। স্টেজ থেকে একটু দক্ষিণে ঝাউবনঘেঁষে থাকবে নারী ও শিশুদের জন্য বিশ্রামাগার। থাকবে র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চাঁদনী রাতে তিন নদীর জলমোহনায় ছোট ছোট ট্রলার ভাড়া করে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকছে ভাড়ায়চালিত ট্রলারের সুব্যবস্থাও।

দু-এক দিনের মধ্যেই বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি নির্ধারিত হটলাইন নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে। যে নম্বরে যোগাযোগ করে রেজিস্ট্রেশনসহ জ্যোৎস্না উৎসবসংক্রান্ত সব তথ্য জানা যাবে। একই সঙ্গে জ্যোৎস্না উৎসবসংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে খোলা হচ্ছে একটি ফেসবুক পেজও। যেখানে জোৎস্না উৎসবসংক্রান্ত সব তথ্যসহ আকর্ষণীয় সব ডকুমেন্টারি শেয়ার করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!