• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টাকার টানাটানিতে পড়তে হবে নতুন সরকারকে


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮, ০৩:৩৫ এএম
টাকার টানাটানিতে পড়তে হবে নতুন সরকারকে

ঢাকা : অর্থনীতির নিয়মিত চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে। ধারাবাহিকভাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান নেই। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ একটি জায়গায় আটকে আছে। রাজস্ব আদায় কয়েক বছর ধরে সন্তোষজনক নয়। দেশের রাজস্ব-জিডিপির হার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর থেকে অনেক কম।

রোববার (৩০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনী বছরে ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে থাকতে সরকার নানা খাতে খরচ বাড়িয়েছে। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের তথ্য বলছে, ভোটের বছর রাজস্ব আহরণ কমে যাবে। ফলে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সরকার পরিচালনায় তাকে অর্থের টানাটানিতে পড়তে হবে। প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংকঋণ বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার ফের রাষ্ট্র পরিচালনায় আসতে বিশেষ কৌশল হাতে নিয়েছে। ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবী, কৃষকসহ প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দিয়েছে নানা সুবিধা। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি- এ কৌশলের অংশ হিসেবে।

পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য নির্বাচনের আগে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। একই সঙ্গে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য যন্ত্রপাতি আমদানিতেও শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রমকে আরো এগিয়ে নিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও উৎসে কর কমানো হয়েছে। এসব কারণে সরকারের রাজস্ব আহরণ সীমিত হয়ে এসেছে। অন্যদিকে বেড়ে গেছে খরচ, যা সামাল দিতে হবে নতুন সরকারকে।

চলতি অর্থবছরের জন্য মোট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজেটের প্রথম ৬ মাস বর্তমান সরকার দায়িত্বে আছে। বাকি ৬ মাস নতুন সরকারের। ঘোষিত বাজেটে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার মধ্যে কর থেকে আসবে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত কর থেকে আসবে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি। প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।

সরকারের তথ্যই বলছে, জাতীয় নির্বাচনের সময় ২০০১-০২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এর আগের অর্থবছরের চেয়ে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এর আগের অর্থবছরের ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ থেকে প্রবৃদ্ধি কমে ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ হয়।

কিন্তু দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বিরাজ করার পরও চলতি অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আহরণ সন্তোষজনক নয়। এনবিআর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মেয়াদে মোট ৫৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর বিপরীতে এ সময় আদায় হয়েছে ৪৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১১ হাজার কোটি টাকা কম।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি শুল্ক, স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং আয়কর খাতে নেতিবাচক আদায় থেকে এমনটি হয়েছে। সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই মেয়াদে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। রাজস্ব আহরণ আরো কমে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, আর্থিক সঙ্কটে যাতে তারা না পড়ে সে জন্য এনবিআর সক্রিয়। মনে হচ্ছে না নতুন সরকারকে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণ কিছুটা কম হলেও সার্বিকভাবে আমরা পিছিয়ে থাকব না। সবাই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী বললেও তা অর্জন করা যাবে।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নির্বাচনের বছরে এনবিআর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য থেকে সব সময় দূরে থাকে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও (ভোটের বছর) রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল এনবিআর। ওই বছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি। এমনকি পুনর্নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকেও আদায় ৫ হাজার কোটি টাকা কম ছিল।

রাজস্ব আদায় কম হলেও সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় নগদ টাকার জোগান রাখতে হবে। এ জন্য বাজেটে ব্যাংকঋণের সুযোগ থাকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের মোট ঘাটতি নির্ধারিত আছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার ঋণ নেবে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা ব্যাংক খাত থেকে আসবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আহরণ কমে গেলে সরকারের ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যদি নতুন সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হয় তাহলে বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ কমে যাবে। সেটি হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে চাঙ্গাভাব তৈরি হওয়ার কথা, তা ব্যাহত হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!