• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
ক্রাইস্টচার্চে হামলার পর বেড়েছে জঙ্গিদের তৎপরতা

টার্গেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২৭, ২০১৯, ০৮:৩১ পিএম
টার্গেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ঢাকা : নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে জঙ্গি হামলার বাতাস বইছে বাংলাদেশেও। ইতোমধ্যে ক্রাইস্টচার্চের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস। নারকীয় ওই হামলার পর বাংলাদেশেও জঙ্গিরা তৎপরতা শুরু করেছে।

পুলিশ সদর দফতর অবস্থা আঁচ করতে পেরে সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। বাংলাদেশে যাতে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী নাশকতামূলক তৎপরতায় লিপ্ত হতে না পারে সে লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আত্মগোপনে থেকেও জঙ্গিরা ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলার পর নিজেদের অনলাইনে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। নব্য জেএমবির সদস্যরা এ অপতৎপরতা শুরু করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তারা প্রথমত হামলা পরিকল্পনা করছে, দ্বিতীয়ত অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে সংগঠনকে চাঙ্গা রাখার জন্য। জেএমবি ছাড়াও হিজবুত তাহরিরও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা রাতের আঁধারে রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিলি করছে এবং নরগরীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগিয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলোর মতে, জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা নির্মূল হয়নি। আত্মগোপন করে আছে। ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে জঙ্গি হামলা এবং আইএসের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণার পর বাংলাদেশে অব্যাহত পুলিশি অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়া জঙ্গিরা নড়াচড়া শুরু করেছে। এ অবস্থায় দেশের পুলিশ র্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দফতর থেকে।

সূত্র মতে ৮ বিভাগের ডিআইজি নগর পুলিশ কমিশনার এবং ৬৪ জেলা পুলিশ সুপাররা নিজ নিজ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। যাতে কোথাও জঙ্গিরা সংগঠিত হতে না পারে সেই লক্ষ্যে চোখ কান খোলা রেখে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার জন্য মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। সূত্রের দাবি জঙ্গিদের প্রথম টার্গেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ইতোমধ্যে জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার হুমকি দিয়েছে। সুতরাং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টে, স্টেশন এবং যেকোনো অবস্থানে চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে পারে।

এ ব্যাপারে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, না তেমন কোনো থ্রেট আছে বলে মনে করছি না। কারণ বাংলাদেশে জঙ্গিরা এখন নিজেরাই দৌড়ের ওপর আছে। অব্যাহত পুলিশ অভিযানে তারা নিজেরাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সুতরাং বড় ধরনের হামলা করার সক্ষমতা তাদের এখন নেই। তবুও তারা যেহেতু সক্রিয় হওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত, সেহেতু আমরাও আমাদের মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এডিশনাল ডিআইজি মনিরুজ্জামান বলেন, হামলার আশঙ্কা আছে আবার নেইও। কারণ জঙ্গিরা হারিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় আছে। এমন হতে পারে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার পরবর্তী আইএসের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা শুনে তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। অনলাইনে হুমকি ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে।

এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের সাবেক প্রধান ও বর্তমান অতিরিক্ত আইজিপি এইচআরএম মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফলতার সঙ্গে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করেছে এবং করছে। জঙ্গিরা কিন্তু বসে নেই। তারা বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে অপতৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা খবর পেয়েছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরেও ফেলছে।

আইএসের হুমকি : ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলার পর মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে ডেইলি নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে জানানো  হয়, আইএসের  জ্যেষ্ঠ নেতা আল মুজাহির অডিও বার্তায় বলেন, ‘দুই মসজিদে গণহত্যার এই দৃশ্য দেখে বোকা মানুষদের এবার জেগে ওঠা উচিত। আর তাদের ধর্মের ওপর এমন হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য খিলাফতের (আইএস) সদস্যদের উৎসাহিত করা উচিত।’

আল মুজাহির এই গণহত্যাকে সিরিয়ায় তাদের শেষ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে চালানো গণহত্যার তুলনা করেন। তিনি আরো বলেন, ‘এই  যে সিরিয়ার বাঘিজ, সেখানেও মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে। মুসলিমদের ওপর এমন গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, দীর্ঘ ছয় মাসের নীরবতা  ভেঙে আল মুজাহির প্রতিশোধের আহ্বান জানালেন। আইএসের এই  জ্যেষ্ঠ নেতা মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন নৃশংস হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সব মুসলিমদের আইএস যোদ্ধাদের সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

কেন ওই হামলা : অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রাফটন শহরের অধিবাসী  ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। হামলার আগে সে টুইটারে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ শিরোনামে ৮৭ পৃষ্ঠার দীর্ঘ একটি  মেনিফেস্টো প্রকাশ করে। নিজেকে মার্কিন  প্রেসিডেন্ট  ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বলেও দাবি করা ব্রেন্টন ট্যারেন্ট কেন এই হামলা চালিয়েছেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।

অস্ট্রেলিয়ার কিছু গণমাধ্যম বলছে, ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল সুইডেনের স্টকহোম শহরে জঙ্গিদের ট্রাক চাপায় হতাহতের ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই নাকি ট্যারেন্ট এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই ধারণার পেছনে হামলাকারীর রাইফেল লেখা কিছু শব্দ যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে নিউজ ডটকম এইউ, টাইমস নাও এর মতো মিডিয়াগুলো।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ জুমার নামাজের সময় ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামে এক বন্দুকধারীর অতর্কিত গুলিতে ৪ বাংলাদেশিসহ ৫০ মুসল্লি নিহত হয়। এই ঘটনার পর কিন্তু দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন সেই ভীতির সম্ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নানা কালজয়ী পদক্ষেপ নিয়ে জয় করেছেন সবার মন।

সারা বিশ্বে এখন জাসিন্দার ‘হূদয় জয়ে’র গল্প। বিশ্বের সব দেশে প্রয়োজন জাসিন্দার মতো নেতা। ঘটনার পর জাসিন্দার উদ্যোগ ও সাহসী পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়, হামলার সঙ্গে সঙ্গেই জাসিন্ডা দেশটির বিদ্যমান অস্ত্র আইনে সংস্কারের উদ্যোগ নেন।

হামলার এক সপ্তাহ না গড়াতেই নিউজিল্যান্ডে সব ধরনের স্বয়ংক্রিয় এবং আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিষিদ্ধ হয়। বছরের পর বছর শত শত রক্তক্ষয়ী বন্দুক হামলার পরও কোনো মার্কিন নেতা এরকম শক্তিশালী অবস্থান দেখাতে পারেননি। মার্কিন গান লবির সামনে সবাই হাঁটু মুড়ে বসতে বাধ্য হয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!