• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
৪৪৮ নদী ও খাল খননের বড় প্রকল্প চলছে

টেকসই পানি উন্নয়নে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০, ০৪:০৭ পিএম
টেকসই পানি উন্নয়নে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা

ঢাকা : পানির সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকার টেকসই পানি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

সরকার মনে করছে, আগামী দিনে সবার জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে পানিসম্পদের সুষ্ঠু ও টেকসই ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।

সূত্রগুলো বলছে, এই বিবেচনায় সরকার এরই মধ্যে সারা দেশে ৪৪৮টি নদী ও খাল খনন শুরু করেছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই প্রকল্প শেষ হবে। এর মাধ্যমে নদীর ড্রেজিং সিস্টেমে বড় অগ্রগতি আসবে। নদী ও খালগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়বে।

জানা গেছে, একটা বদনাম ছিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সাধারণ মানুষের অভিযোগ ছিল, নদী ভেঙে যায় কিন্তু স্থানীয় কর্মকর্তাদের পাওয়া যায় না। প্রকৌশলীদের পাওয়া যায় না। সংবাদমাধ্যমেও এসব তথ্য খবর হয়েছে। তবে বর্তমানে চিত্র পাল্টে গেছে। এখন কর্মকর্তারা মাঠে-ঘাটে কাজ করছেন।

এসব বিষয় নিয়ে জানতে গত সোমবার কথা হয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সঙ্গে।

আলাপকালে তিনি বলেন, অতীত থেকে বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও এর অধীনের সংস্থাগুলো অনেক বেশি গতিশীল। মাঠপর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

তদারকি ও মাঠে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে একটি প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে, যেখানে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মাঠে গিয়ে কর্মকর্তারা ছবি দিচ্ছেন, তথ্য দিচ্ছেন। ফলে আমাদের নির্দেশনা ও তদারকি সরাসরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। দায়িত্ব নিয়েছে এক বছর পেরিয়ে গেছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ অধিদপ্তরসহ যেসব সংস্থা রয়েছে সেগুলো নিয়ে বিশদ পরিকল্পনা হাতে  নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়সহ সংস্থাগুলো কীভাবে আরো গতিশীল করা যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী নিজেই গত এক বছরে প্রায় ১৭০টি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমও অনেক এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার নিয়মিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেউ এখন আর বসে নেই। মন্ত্রণালয়সহ দপ্তরগুলোতে আলাদা আলাদা টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা তারা পরিদর্শন করে প্রকল্পগুলো দেখছেন।

আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি এলাকা যখন ভাঙনের মুখে পড়ে তখন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কিংবা এর কোনো অধিদপ্তরের কর্মকর্তা থাকলে সাধারণ মানুষ কিছুটা ভরসা পান। ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীনের সময় কর্মকর্তারা থাকলে মানুষ মনে রাখেন। তবে এটা ঠিক, অনেকে অনিয়ম করেন। যারা অনিয়ম করছেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থাও নিচ্ছি। আবার যারা ভালো কাজ করছেন তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে।

সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রণালয়ের কাজে গতিশীলতা এসেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আমরাও সেই গতির সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। কয়েকদিন পর মুজিববর্ষে পা দেবে দেশ। এই বছর ঘিরে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে টেকসই পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করতে।

জাহিদ ফারুক বলেন, প্রান্তিক মানুষ যাতে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, দুর্দশায় না ভোগেন তার জন্য অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। গত বর্ষায় অতীতের থেকে বৃষ্টি বেশি হয়েছে। বন্যার প্রকোপ ছিল বেশি। কিন্তু প্রস্তুতির কারণে মোকাবেলা করা গেছে। ৬৪ জেলায় আমাদের খাল খনন চলছে। ৪৪৮টি নদী ও খাল খনন চলছে। চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু শেষ হয়তো করা যাবে না। আগামী বছরের জুনে শেষ হবে আশা করি। এই খাল খননের কারণে প্রচুর বৃষ্টিতেও ক্ষতি কম হয়েছে।

তারপরও যেখানে নদী ভাঙনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অতীতের থেকে নদীভাঙন বেড়ে গেছে। এখন শুষ্ক মৌসুম চলছে। নদীভাঙনের কথা নয়। কিন্তু এখনো নদী ভাঙছে। অল্প স্রোতে নদীর পাড় ভেঙে যায়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রচুর পলিমাটি দেশে আসে। প্রতি বছর প্রায় এক বিলিয়ন টন পলিমাটি আসে। এগুলো ড্রেজিং করে সরাতে হয়। এই পলি মাটিতে নদীর গভীরতা কমে যায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে এসব কর্মকাণ্ড বাড়াতে। এজন্য বড় তহবিল দরকার। বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশি ও বিদেশি অর্থায়নে নতুন আরো ৩০ প্রকল্প গ্রহণের চিন্তা রয়েছে। বড় বড় প্রকল্প হলে পুরো নদী ব্যবস্থায় কার্যকর ড্রেজিং করা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, নদীকে কীভাবে সুশাসনে আনা যায়, বড় নদীকে কীভাবে সীমাবদ্ধ করা যায় এবং নদীর পাড়ে নতুন নতুন নগর ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গড়ে তোলা যায়। এসব চিন্তা নিয়ে কাজ চলছে।

মন্ত্রণালয়য়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে প্রতি বছর আগাম বন্যা হয়। ২০১৭ সালে আগাম বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে গত বছর অগ্রিম প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ফলে ২০১৮ সালে কোনো অসুবিধা হয়নি। এবারো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে পানি যেহেতু দেরিতে নামে তাই আগে কাজ হাতে নেওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বসে নেই। এখানে টিম কাজ করছে।

মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। কিছু নতুন উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা এই সপ্তাহ থেকে সুনামগঞ্জে কাজ করছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। পানির নিরাপদ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমরা একইভাবে অগ্রগতি করতে চাই। আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য- এসডিজি অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে আমরা একসঙ্গে লক্ষ্য অর্জন করতে চাই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!