• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে সেনা কর্মকর্তার জিডি


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৫, ২০১৮, ০৫:২০ পিএম
ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে সেনা কর্মকর্তার জিডি

ঢাকা: বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির এক টক শোতে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে বিরূপ বক্তব্য করায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেছে সেনা সদর। এতে বিধি মোতাবেক তদন্ত করে জাফরুল্লাহসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (মুখপাত্র) উপ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আদালত ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (দক্ষিণ) বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন হাওলাদার জানান, সেনা সদরে দায়িত্বরত মেজর এম রকিবুল আলম গত শুক্রবার থানায় এসে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে ওই জিডি করেন।

সেখানে বলা হয়, ‘২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের পূর্ব রাতে হঠাৎ করে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সেনাপ্রধান সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্যটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিদ্বেষপ্রসূত ও ষড়যন্ত্রমূলক, যা সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি তথা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।’

‘ডা. জাফরুল্লার চৌধুরীর মত একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি কেন, কী উদ্দেশ্যে এবং কাদের প্ররোচনায় এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক, বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্য টকশোতে বলেছেন, তা তদন্তের দাবি রাখে।’

২০ আগস্ট রাতে সময় টিভির আলোচনা অনুষ্ঠান সম্পাদকীয়তে জাফরুল্লাহ চৌধুরী দাবি করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ যখন ‘চট্টগ্রামের জিওসি’ ছিলেন, সেখান থেকে ‘সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি’ যাওয়ার ঘটনায় তার ‘কোর্ট মার্শাল’ হয়েছিল।

এরপর বিষয়টি নিয়ে সেনা সদরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়। সময় টিভি নিজেদের বক্তব্যসহ সেটি প্রচার করে।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট ছিলেন না। ওই সময় চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর ঘটনা ঘটেনি। জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনো কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হননি।

জাফরুল্লাহর বক্তব্যকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে বর্ণনা করে সেনাসদরের প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, ওই বক্তব্য ‘সেনাবাহিনী প্রধানসহ সেনাবাহিনীর মত রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয়।’

সেনাসদরের প্রতিবাদের পর শনিবার (১৩ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, টেলিভিশনের আলোচনায় তার বক্তব্যে ভুল ছিল এবং সেজন্য তিনি দুঃখিত।

ভুল সংশোধন করে নিতে গিয়ে বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতা হিসেবে পরিচিত জাফরুল্লাহ বলেন, ‘জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি ছিলেন না, কমান্ডেন্টও ছিলেন না। তিনি তার কর্মজীবনের এক সময়ে চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারী প্রশিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল হয়নি, একবার কোর্ট অব ইনকোয়ারি হয়েছিল।’

বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন কি না- জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘খুব সহজ-সরলভাবে এখানে বলেছি, আমার শব্দচয়নে ভুল ছিল। এই ভুলের জন্য নিশ্চয়ই দুঃখ প্রকাশ করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে তার ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে আরেকটি প্রতিবাদলিপি সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়।

সেখানে বলা হয়, টেলিভিশন আলোচনায় জাফরুল্লাহ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎস হিসেবে ‘সুকৌশলে’ সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার একটি চেষ্টা করেছিলেন, যা ছিল ‘দুরভিসন্ধিমূলক’।

‘২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণার আগের দিন টেলিভিশন লাইভ টকশোতে এ ধরনের অসত্য বক্তব্য প্রদান উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অসত্য বক্তব্যকে সংশোধন করার কোনো চেষ্টা করেননি।’

‘তার সামগ্রিক বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সকল পদবীর সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেনাবাহিনী প্রধানের ভাবমূর্তি এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।’

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!