• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ড্যান্ডি’র নেশায় বুঁদ পথশিশুরা


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ৩০, ২০১৯, ০৯:২৭ পিএম
‘ড্যান্ডি’র নেশায় বুঁদ পথশিশুরা

ঢাকা : জুতার সোল লাগানোর আঠা (সুল্যশন) দিয়ে তৈরি হচ্ছে নেশাদ্রব্য। নতুন এই মাদকের নাম ‘ড্যান্ডি’। রাজধানীর পথশিশুরা এই নেশাদ্রব্যের মূল গ্রাহক হলেও তা দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যবিত্তদের মধ্যেও। ইদানীং টোকাই বা পথশিশুদের কুড়ানো কাগজ ও প্লাস্টিকসামগ্রীর কিনে নগদ টাকা না দিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সল্যুশন সরবরাহ করে থাকেন ভাঙারি দোকানিরা।

রাজধানীর ফকিরাপুল, কমলাপুর রেলস্টেশন ও ফার্মগেট আনন্দ সিনেমার গলি, গুলিস্তান, ওসমানী উদ্যান ও সচিবালয়ের ফুটপাতসহ অর্ধশত পয়েন্টে প্রতিদিন কয়েকশ পথশিশু ড্যান্ডির নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ সব মাদক বেচাকেনা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে। তবে মরণ নেশা ড্যান্ডি সেবন চলে প্রকাশ্যেই। ড্যান্ডির উপকরণ সল্যুশন বিক্রিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এই নেশায় আসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। ড্যান্ডি সাধারণত জুতার সোল লাগানোর কাজে লাগে। যে কোনো হার্ডওয়্যারের দোকানে যে কেউই কিনতে পারে সল্যুশন। বিশেষ করে রাজধানীর পথশিশুরাই এ নেশায় আক্রান্ত।

গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা। ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের পাশেই ৫-৬ কিশোর গোল হয়ে বসে আছে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকের হাতে বাতাসভর্তি ফোলানো পলিথিনের প্যাকেট। কিছুক্ষণ পরপর পলিথিনের মুখে নাক লাগিয়ে টান দিচ্ছে। সব কিশোরই করছে এ কাজ। পথঘাটে, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট এলাকায় এদের পদচারণ বেশি লক্ষ করা যায়।

একাধিক ড্যান্ডি সেবনকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সারা দিন কাগজ, প্লাস্টিকসামগ্রী, লোহাজাতীয় বস্তু কুড়ায়। পরে তা স্থানীয় ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে। এসব দ্রব্যের নির্ধারিত কোনো মূল্য নেই।

ভাঙারি দোকানির ইচ্ছে অনুযায়ী, যখন যা দেয় তা নিয়েই খুশি থাকে পথশিশুরা। দিনশেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন আড্ডায় বসে এরা তখনই মাতে ড্যান্ডি নেশায়। এরা জানায়, প্রথমাবস্থায় হার্ডওয়্যারের দোকানে গিয়ে সল্যুশন কিনে আনত। কিন্তু বারবার একই দোকানে গেলে দোকানদাররা সন্দেহ করে। অনেকেই জানতে চায় কোন দোকানে কাজ করে। এসব পথশিশু বেশিরভাগই নিজেদের জুতা সেলাইয়ের কাজ করে বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ পরিচিত হয়ে গেলে আর দোকানে গিয়ে সল্যুশন কিনতে পারে না। তখন শরণাপন্ন হয় ভাঙারি দোকানির। আর ভাঙারি দোকানি নিজের স্বার্থে হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে সুল্যশন সংগ্রহ করে পথশিশুদের সরবরাহ করে থাকে।

শিশুরা জানায়, কাগজ বা প্লাস্টিকসামগ্রীর বদলে অনেক সময় সল্যুশন দেয় ভাঙারি দোকানিরা। এক কৌটা সল্যুশনের দাম ৫০ টাকা। তিন-চারজন মিলে এক কৌটা কেনে এরা। আবার কখনো কেউ একা কিনলে তা চলে দিনভর। সেবনকারীরা জানায়, এক কৌটা দিয়ে তিন-চার দিন চলে। পলিথিনের মধ্যে যতক্ষণ সলুশনের গ্যাস থাকে ততক্ষণই টানা যায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এই নেশায় আক্রান্তদের সম্পর্কে আমাদের দেশে এখনো সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। দুই দশক ধরে এই প্রকার নেশায় আসক্তদের সংখ্যা আমাদের দেশে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সাধারণত সহজ প্রাপ্যতা, সহজলভ্যতা ও আইনত নিষিদ্ধ পদার্থ হিসেবে স্বীকৃত না হওয়ায় এই প্রকার নেশার প্রকোপ যেন এক মহামারী রূপ নিয়েছে। এই নেশার কালো থাবা সমাজের নিম্নশ্রেণি হয়ে মধ্যবিত্ত সমাজে বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে হার্ডওয়্যারের দোকানগুলোতে সুল্যশন বিক্রির বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে ইমামগঞ্জের হার্ডওয়্যার দোকানি সুলতান ট্রেডার্সের মালিক মো. হাফিজ এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সল্যুশন একটি আঠা। এটা আমরা আবহমানকাল ধরে জেনে আসছি। আমার বাপ-দাদার ব্যবসা এটা।

এই সল্যুশন জুতার সোল, প্লাস্টিকসামগ্রীসহ নানান কিছু জোড়া লাগাতে সাহায্য করে। কিন্তু ইদানীং শুনছি এটা টোকাইরা পলিথিনের মধ্যে ঢুকিয়ে সেটার ধোঁয়া টেনে নেশা করে। এটা যেহেতু মানুষের জীবনের প্রয়োজনে অনেক কাজে লাগে। এটা নিষিদ্ধ করাটাও ঠিক হবে না। বরং টোকাইরা যাতে এটা অপব্যবহার না করতে পারে-সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!