• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা দখলের পথে মুক্তিবাহিনী


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৯, ২০১৯, ১২:১২ পিএম
ঢাকা দখলের পথে মুক্তিবাহিনী

ঢাকা : ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পৌঁছেন চূড়ান্ত বিজয়ের সন্নিকটে। দেশের নানা জনপদ মুক্ত হওয়ার খবর আসতে থাকে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই। লাল-সবুজের পতাকার জন্য তখনো মুক্তিযুদ্ধ চলছে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী বীরদর্পে দেশের নানা জায়গায় বিজয় কেতন উড়িয়ে ঢাকা দখলের জন্য এগিয়ে আসে ৯ ডিসেম্বর। পাকিস্তানি সেনারা চারদিক থেকে অবরুদ্ধ। এদিকে শেষ কূটচাল চালেন হেনরি কিসিঞ্জার। সপ্তম নৌবহর যাত্রার নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু লাভ হলো না, মুক্তিবাহিনী আরো বিপুল উৎসাহে বিজয়ের নেশায় মেতে উঠল। বাংলাদেশকে মুক্ত ও স্বাধীন করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

৯ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী দ্রুত ঢাকা পৌঁছার জন্য চারদিক থেকে অগ্রসর হয়। আগে একটি বাহিনী যায় আশুগঞ্জ, দাউদকান্দি ও চাঁদপুর। পশ্চিমে আরেকটি বাহিনী পৌঁছে মধুমতি নদীর তীরে। আরেকটি বাহিনী কুষ্টিয়া মুক্ত করে চলে যায় গোয়ালন্দ ঘাটের দিকে। হালুয়াঘাট থেকে এগিয়ে আসা বাহিনীও পৌঁছে যায় ময়মনসিংহের কাছাকাছি।

এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. হেনরি কিসিঞ্জার তাকে পরামর্শ দেন বঙ্গোপসাগরের দিকে সপ্তম নৌবহরকে যাত্রা শুরুর নির্দেশ দিতে। ইয়াহিয়া খান ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা ভেবেছিল সপ্তম নৌবহর আসার কথা শুনে যৌথবাহিনীর মনোবল ভেঙে যাবে। সেই সুযোগে একেবারে শেষলগ্নে চরম আঘাত হেনে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে তছনছ করে দেবে। কিন্তু ঘটনা ঘটে উল্টো। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এই কথা জেনে মুক্তিযোদ্ধারা আরো বিপুল উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।

সেদিন বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের আরেক পরীক্ষিত মিত্র, তৎকালীন পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার সপ্তম নৌবহর পাঠানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়। ফলে সপ্তম নৌবহরের যাত্রা শুরু হওয়ার পরই থেমে যায়। এদিনে জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রতিনিধিত্বকারী পাকিস্তানি দলের নেতা মাহমুদ আলী দেশে ফিরে এসে দেখা করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের উচিত বিশ্ব শান্তির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ভারতের পাশ থেকে সরে দাঁড়ানো।’ চীন ও আমেরিকার সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান  তাদের নির্ভীক ও ঐতিহাসিক সমর্থনের জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’

মুক্তিযুদ্ধের এ দিনেই মুক্ত হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি। আর দাউদকান্দি মুক্ত হওয়ার ভেতর দিয়েই শুরু হয় মেঘনা তীরের অঞ্চলগুলো মুক্তির প্রক্রিয়া। দিন না পার হতেই মেঘনার পুরো পূর্বাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। একই দিনে স্বাধীন দেশের পতাকা ওড়ে গাইবান্ধা, গাজীপুরের শ্রীপুর, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও নেত্রকোনায়। নেত্রকোনা শহরের নাগড়া কৃষি ফার্মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধের মাধ্যমেই নেত্রকোনা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে একযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের থানা আক্রমণের ভয়াবহতায় ভীত হয়ে হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকাররা গভীর রাতে সুকৌশলে থানা থেকে পালিয়ে যায়। ৯ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় ঈশ্বরগঞ্জ।

৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের সংগঠিত করে কুমারখালী শহরের চারপাশ ঘিরে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প (বর্তমানে কুমারখালী উপজেলা পরিষদ) আক্রমণ করেন। দীর্ঘসময় যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনী টিকতে না পেরে পালিয়ে কুষ্টিয়ার পথে রওনা হয়। পাকিস্তানি বাহিনীকে বহনকারী ট্রেন চড়াইকোল হাতিসাঁকো এলাকায় এলে বিস্ফোরক দিয়ে রেল লাইন উড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। শহর হানাদারমুক্ত হওয়ার পর সর্বস্তরের জনতা এবং মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল বের করেন।

মুক্তিযুদ্ধের এ সময় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কার্যত বন্ধই ছিল। ১৯৭১ সালের এ দিনে এক সরকারি ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারতীয় হামলার অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!