• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা হবে আন্তর্জাতিক মানের নগরী


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২২, ২০১৯, ১২:৫৬ পিএম
ঢাকা হবে আন্তর্জাতিক মানের নগরী

ঢাকা : রাজধানী ঢাকায় চারটি প্রকল্প পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে চিত্র। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আদলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। দ্রুত সময়ে এসব প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার।

ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাস্তা অনুপাতে ঢাকায় সর্বোচ্চ তিন লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারে। বেশি গাড়ি আর অতিরিক্ত মানুষের কারণেই মাত্রা ছাড়িয়েছে ঢাকার যানজট। সে জন্য সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হচ্ছে নগরীর যানজট নিরসন।

পুরো ঢাকা শহর ২০৩০ সালের মধ্যে সত্যিই স্বপ্নের শহরে রূপ নেবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় ছয়টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং তিনটি রিং রোড অন্তর্ভুক্ত আছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৩ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, এ শহরে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ। রাজধানী ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১৪ লাখ ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ১০ লাখের বেশি রয়েছে অনিবন্ধিত রিকশা। এ ছাড়া ইজিবাইকসহ নিবন্ধনের বাইরে কী পরিমাণ ছোটখাটো যানবাহন আছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘনবসতিপূর্ণ শহরের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের মুম্বাই। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করছেন ৪৪ হাজার ৫০০ জন। আর মুম্বাইয়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩২ হাজার ৪০০ জনের বেশি।

জাতিসংঘ তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ঢাকায় প্রতিদিন নতুন মুখ যুক্তের হার ছিল ১ হাজার ৭০০ জন। গ্রাম ও জেলা শহর থেকে যারা আসছেন তারা স্থায়ীই হয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য বেড়েই চলেছে ঢাকার জনসংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে ঢাকা। হারাবে বসবাসের উপযোগিতা। তাই নগরবিদরা মনে করেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হলে নগরবাসী যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন। ২০২১ সাল থেকেই এসব প্রকল্পের সুফল ভোগ করতে পারবেন নগরীর মানুষ। যা ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যানজট নিরসনে বহুল কাঙ্ক্ষিত প্রকল্প মেট্রোরেল চালু হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ অংশের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। তাই এ বছর ও আগামী বছর প্রকল্পের প্রতিশ্রুত কাজ শেষ হচ্ছে না। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য জানান।

মেট্রোরেলের গড় অগ্রগতি ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই অংশের কাজ শেষ হয়ে গেলে রেল ও বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা হবে। এরপরে রেল ট্রায়াল পর্যায়ে থাকবে।

অন্যদিকে, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেওয়াও চলমান থাকবে। এরপর সবকিছু সেরে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বর্ষ ২০২১ সালের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। তখন উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার উড়াল রুট সম্পূর্ণভাবে খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের রেল ও বিদ্যুতের লাইন বিদেশ থেকে এসে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে গেছে। ভায়াডাক্ট নির্মাণের পর আমরা রেল ও বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ শুরু করব। রেললাইনের ওপরে কোচও বসানো হবে। লাল-সবুজের প্রাধান্য থাকবে কোচে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কোচ ট্রায়াল দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের মেট্রোরেলের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। একদিকে ট্রায়াল চলবে, অন্যদিকে নির্মাণকাজ চলবে। পর্যায়ক্রমে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আমরা সম্পূর্ণভাবে অপারেশনে যেতে পারব। মেট্রোরেলের এই পথে প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। আর তাতে সড়কে চাপ আর যানজটের ভোগান্তিও কমবে। তবে কেবল এমআরটি ৬-এর নির্মাণকাজ শেষ হলেই যানজট শেষ হয়ে যাবে-এমন ভাবনা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর-২০ কিলোমিটার এমআরটি লাইন-১ এর কাজ শিগগিরই শুরু করা যাবে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘এ রুটেই দেশের প্রথম পাতাল রেল বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল হতে যাচ্ছে। এর খরচ হবে পদ্মা সেতু ও এমআরটি লাইন-৬-এর খরচের সমান। মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কারণে সাময়িক অসুবিধা মেনে নেওয়ায় নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, এ নির্মাণকাজের জন্য রাস্তায় সেক্রিফাইস করতে হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী স্বস্তির জন্য সাময়িক দুর্ভোগ মেনে নিতে হয়। ২০৩০ সাল পর্যন্ত এ দুর্ভোগ মেনে নিতে হবে, তবে একটি লাইন শুরু হলে আস্তে আস্তে ভোগান্তিও কমতে থাকবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পথে ১৬টি স্টেশনবিশিষ্ট এমআরটি লাইন-৬-এর কাজ চলছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের ৪০ দশমিক ৫৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে এরই মধ্যে প্রায় ৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট বা সংযোগ সেতু দৃশ্যমান হয়েছে।

তিনি আরো জানান, রেলকোচ ও ডিগো ইকুইপমেন্টের চূড়ান্ত ও বিস্তারিত নকশার কাজ শেষ করা হয়েছে। জাপান থেকে মেট্রো ট্রেন বাংলাদেশে আসার পর সমন্বিত পরীক্ষা ও পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হবে। এ কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।

আবার রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার আসা-যাওয়া করতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। ‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।

অন্যদিকে রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীতে এয়ারপোর্ট রোডের কাওলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত সংযোগ সড়কসহ ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এক্সপ্রেসওয়েটি। প্রকল্পের রুটগুলো হচ্ছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার, কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী)। নির্মাণ শেষে বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ২০ মিনিট। প্রথম ধাপে এক্সপ্রেসওয়েটি বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বনানী পর্যন্ত খুলবে চলতি বছরে। এ রুটের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।

আবার ইসিবি চত্বর থেকে রয়েছে কালশী রুটে ফ্লাইওভার। মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী রোডে চলছে মহাযজ্ঞ। অনেকে মনে করছেন, এটা হয়তো মেট্রোরেলের রুট। আসলে ঢাকার মিরপুরে ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড় পর্যন্ত নতুন একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটির দৈর্ঘ্য হবে ৮৪৪ দশমিক ১২ মিটার। সেই সঙ্গে সড়কও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

রাজধানীর একগুচ্ছ প্রকল্প সম্পর্কে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আরএসটিপি অনুযায়ী ঢাকা শহরে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। শুধু একটি মেট্রোরেল দিয়ে ঢাকার যানজট নিরসন হবে না। তাই আমরা মেট্রোরেলের পাশাপাশি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার ও সড়ক প্রশস্ত করার কাজ করছি। এসব প্রকল্প পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে ঢাকার চেহারা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!