• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাবি ছাত্রীকে ফেসবুকে নিজের বিশেষ অঙ্গের ছবি পাঠালেন শিক্ষক!


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০, ১২:০২ পিএম
ঢাবি ছাত্রীকে ফেসবুকে নিজের বিশেষ অঙ্গের ছবি পাঠালেন শিক্ষক!

ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে নিজের বিশেষ অঙ্গে ছবি পাঠানোর অভিযোগে উঠেছে বরগুনার এক কলেজশিক্ষকের বিরুদ্ধে। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে কলেজশিক্ষকের যৌন হয়রানির বিষয়টি প্রকাশ করেছেন ওই ছাত্রী। বিষয়টির সত্যতা প্রমাণ করতে ম্যাসেঞ্জারের কিছু স্ক্রিনসটও আপলোড করেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, বরগুনার বামনা উপজেলার বেগম ফাইজুন্নেসা মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আসরাফুল হাসান লিটন নিজের বিশেষ অংশ ছবি পাঠিয়েছেন ওই ছাত্রীর কাছে। ওই ছাত্রী এক সময় সেই কলেজে পড়তেন। বর্তমানে তিনি ঢাবির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্ট্যাডিজ বিভাগে অধ্যায়নরত। 

বেগম ফাইজুন্নেসা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মুর্তযা আহসান মামুন বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত শেষে গভর্নিং বডি ও শিক্ষক পরিষদের যৌথ সভায় কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে সরাসরি বরখাস্ত করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত চলছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে আইনগত আরও কঠিন ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।’

ছাত্রীর ফেসবুকে দেওয়া স্ক্রিনসটে দেখা যায়, শিক্ষক আসরাফুল হাসান লিটন প্রথমে তার সাবেক ছাত্রীকে বারবারই কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে মোবাইল নম্বর চান। একপর্যায়ে ভিডিও কলে কথা বলেন, কল কেটে প্রথমে স্যরি বলেন। আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের বিশেষ অংশ ছবি পাঠান ওই শিক্ষক।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি এখানে তুলে ধরা হলো :
‘(কেউ কেউ) পড়তে নিলে পুরোটা পড়বেন। আধপড়া বিষয়ে পরে ভারী কটূক্তি ছুঁড়বেন না। আমার হজম হবে না।

আমি জানি না আমি কী লিখতে যাচ্ছি। তবে এটুকু বুঝতে পারছি, অন্তত কিছু মানুষের মুখোশ উন্মোচন অবশ্য প্রয়োজন। কোনোদিনও ভাবিনি যে, পরিচিত মানুষের নোংরা মেসেজে আমার ফেসবুক ওয়াল নোংরা করতে হবে। আর আমি এতটুকু ভীত নই যে, এ জন্য পরবর্তীতে আরও ভয়াল কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় কি না! আমি নিজের ব্যাপারে অন্তত এতটা কনফিডেন্ট। একটি মানুষের সাথে যে ভালোবাসার সম্পর্ক আছে কখনো তিনিও চাইলে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারবেন না। যদিও তিনি সম্পূর্ণ বিপরীত চিন্তার মানুষ। তাই আমার কিছুতেই কিছু যায় আসে না। কাল যদি লোকে ওই লুচুটার ওপর না হেসে আমার ওপর হাসে এই টপিক উল্লেখ করে, তবে আমিও তাদের তথা এই সমাজের ওপর উলটো হাসি হেসে দেব।

আমাদের সমাজের খুব একটা প্রবণতা আছে কোনোপ্রকার হ্যারাসমেন্ট হলে যদি ভিকটিম অভিযোগ করে সেক্ষেত্রে তাকেও এই হ্যারাসমেন্টের জন্য দায় নিতে হয়। আর কিছু মুখস্ত কথা তো থাকেই কুটনা মনোভাবের মানুষগুলোর। এরা বলবে ‘এক হাতে কি তালি বাজে’, এই টাইপ কথাবার্তা। তাদের জ্ঞাতার্থে পুরো কনভারসেশন আগা টু মাথা স্ক্রিনশট নিলাম। এরপরও যদি আপনার নোংরা কমেন্ট থেকে আমি নিজেকে প্রোটেক্ট করতে না, পারি আমি মেনে নেব আমি সিরিয়সলি আপনার চিন্তার মতোই...।

শুনে অবাক হবেন যে, এই শুয়োরটা আমার কলেজশিক্ষক ছিল, অন্যদিকে আত্মীয় (বালের আত্মীয়)। আমি মানুষটাকে কী শ্রদ্ধাটাই না করতাম। কতটা মানসিক অবক্ষয় হয়েছে তার ভেবে দেখুন। কলেজে থাকতে শুনতাম হারামিটা বউকে মারধর করে পরক্ষণেই গরুর মাংস কিনে আনে খুশি করতে। তখন ভাবতাম দাম্পত্য জীবনে টুকটাক ঝগড়া তো হয়ই। তবুও তো তিনি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিয়েও করেছে অন্তত ৪-৫টা। এখন বুঝলাম যে, ও কতটা অসুস্থ। আর ওর এই অসুস্থতা যতটা না ওর মনের, তার অধিক ওর শরীরের, কিছু উত্তেজক প্রত্যঙ্গের। গতকাল ফুফুর বাসায় থাকতে অনলাইনে বারবার কল করছিল। আমি ভাবলাম কোনো জরুরি প্রয়োজন কি না। নক করার পর বললাম, আপনি এখানে বলুন, কেননা কথার ধরন অস্বাভাবিক লাগছিল। কিন্তু যে ভাবসাব দেখালো আমারই মনে হলো আমি হয়তো কোথাও ভুল করছি। তাই দিলাম নম্বর। ফোনে কোনো কল আসেনি। আজ আবার মেসেজ দিচ্ছে দেখে আমি রিপ্লাই করলাম।

একপর্যায়ে সে মেসেজে রিপ্লাই না করে ভিডিও কল দিল। রিসিভ হয়ে যাওয়ার পরপরই আবার কেটে দিলাম। এরপর আবার কল এলো। আমি অনেকটা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করি, এটা বলতে যে, কী হয়েছে? কী এমন বলবেন আপনি? আমি দেখলাম, তিনি ক্যামেরাটা ঘুরিয়ে তার উলঙ্গ শরীরের বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করছে, এক কথায় মাস্টারবেট। আমি যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিলাম। কল কাটার পরও সে আমাকে অনবরত তার উলঙ্গ ছবি পাঠিয়ে যাচ্ছিল আর সেই সাথে ননস্টপ ভিডিও কল। আমি অনুভব করতে লাগলাম-আমার বুক কাপছে এবং চোখ থেকে টপাটপ পানি পড়ছে! কিছুতেই নরমাল হতে পারছিলাম না। সারাটা জীবন আমি কী তবে শিক্ষকের ভুল সংজ্ঞা জেনে এসেছি, নাকি শিক্ষক হিসেবে একটা ভুল মানুষকে জেনেছি? মাথায় খেলছে বহু প্রশ্ন, উত্তর নেই একটিরও।

আমি সত্যি কাঁদছি এ জন্য যে, আমার অনেক শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের এখন অনেকে কবরে এবং অনেকেই প্রবীণ। যারা আমার কাছে ছিলেন ঈশ্বরপুত্রের ন্যায়, এমনকি এখনো। মুহূর্তের জন্য হলেও নিজেকে ধিক্কার দিলাম, কাকে আমি স্যার সম্বোধন করেছি? সে তো জানোয়ারের চেয়েও অধঃ। অথচ আমাদের পুরো পরিবার ওকে যথেষ্ট ভালো জানে, আজকের আগে আমিও জেনে আসতাম যেমনটা!

পরক্ষণেই আমি ভাবলাম, নিজেকে কেন দোষ দিচ্ছি? দোষ তো আমার না। দোষ তো এই ধ্রুব প্রথার। চাইলেই যেখানে রাবণ বসতে পারে রামের গদিতে। কথার পিঠে আর এক কথা এলো। এই কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক অথচ একদিন বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছোটদুটা বিখ্যাত লাইনের উপমাবাণী বলতে পারেনি (যতদিন রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরি, মেঘনা বহমান......)। এই তো একটা কালপ্রিট। এমন হাজার কালপ্রিট আছে যেগুলা ভণ্ড শিক্ষকের মুখোশ পরে এখানে ওখানে পড়াচ্ছে আর সুযোগ পেলে এরাই মুখোশ খুলে ধর্ষক হয়ে উঠছে। খোদার কসম প্রত্যেকটার মুখোশ টেনে সত্যিটা দেখানোর অপেক্ষা, কিন্তু দেখাবোই।

নাটকের ছাত্রী তাই উদাহরণও নাটকের চিন্তা চলে আসে। সাঈদ আহমেদের ‘তৃষ্ণায়’ নাটকে তিনি এনথ্রোপমোরফিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পশুর মধ্য দিয়ে মানুষের লোভাতুর চিত্র আর এর বিপরীতে প্রচ্ছন্ন প্রতিবাদের ইঙ্গিত দিয়েছেন। যেখানে কুমির মা তার সাত কুমির বাচ্চাকে শেয়াল পণ্ডিতের কাছে গচ্ছিত রাখে। আর শেয়াল একে একে ছয়টিকে খেয়ে ফেলে। কেবল একটিকে বাঁচিয়ে রাখে এবং কুমির মা সন্তানের খোঁজ নিতে এলে শেয়াল একটি কুমিরকেই বারবার দেখিয়ে মাকে ধোকা দেয়। এটি বিখ্যাত বিস্ট ফ্যাবল থেকে নেওয়া। নাটকের পরিণামে মা তার শেষ সংলাপ দেয়, ‘একদিন সাত নয়, সত্তর নয় সঙ্গে থাকবে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ কুমিরছানা। আমি আবারও আসব সেদিন। দেখব তোর ক্ষুধা মিটতে কতদূর!’

আমার বোন এখন ওই কলেজেই পড়ছে। প্রধান অভিভাবক প্রিন্সিপাল স্যার যিনি প্রত্যেকটা মেয়ের নিরাপত্তা ছাউনি, তিনি কিছুদিন পর অবসরে যাবেন। তখন এদের নিরাপত্তা কে দেবে? এখন হাজারও বোন পড়ছে, ভবিষ্যতে আসবে আরও হাজার-লক্ষ ছাত্রী। তাও আবার মহিলা কলেজ? আমাদের মায়েরা তাদের সন্তানকে সেখানে মানুষ হওয়ার জন্য পাঠায় আর এসব অমানুষেরা, এই শেয়ালেরা যৌন লালা ঝরানো জিভে ওঁৎ পেতে থাকে ওদের তৃষ্ণা নিয়ে। সুযোগ পেলেই কুমির ছানার নিস্তার নেই। আমাদের মায়েরাও দেখবে, আমরাও দেখব আর কতক্ষণ, কতদিন, কত যুগ তোর ওই কামাতুর অঙ্গ তিরিং বিড়িং করতে পারে। একটা সময় তো ক্লান্তি আসবেই, আসবে দমনও। বরাবরের মতো প্রার্থনা, এই পঞ্চম, না না শ্রেণিহীন বর্গের প্রাণিদের বিপজ্জনক হয়ে ওঠার সাথে সাথে খসে পড়ুক। ঠিক টিকটিকির লেজ যেমন খসে পড়ে।

সর্বশেষ ওই ছাত্রী লেখেন, বি.দ্র. এই একটা পশুকে দিয়ে আমার বাকি সব শিক্ষকদের বিচার করবেন না, অনুগ্রহ রইলো। জানেনই তো, দেবতার আড়ালেই অশুর হাসে। আর পিচাশটার সব ছবি আপ দিয়েছিলাম না। কিন্তু ভাবলাম ও যেহেতু দেখাতে চায় দেখানোই ভালো। আর আমার সাথে যে বোনরা ফেসবুকে সংযুক্ত আছ, পশুটাকে চিনিয়ে দিও সকলের কাছে। নিজেরাও চিনে নিও সবার আগে। Syed Murtaza Ahsan (Mamun) স্যার আপনি অবশ্যই বিষয়টা দেখবেন, আশা রাখছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আসরাফুল হাসান লিটনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!