• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের এক বছর

তদন্তই শেষ হয়নি এক-তৃতীয়াংশ মামলার


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০, ০৯:০৮ এএম
তদন্তই শেষ হয়নি এক-তৃতীয়াংশ মামলার

ঢাকা : ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর এক-তৃতীয়াংশের তদন্ত শেষ হয়নি। অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ১২ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলাসহ ১৬টি মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়েছে। ৯টি মামলা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। এসব মামলার তদন্ত ও বিচার শিগগিরই শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এরপরই ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে রাজধানীর চারটি ক্লাব বন্ধ করে দেয়া হয়। ক্লাবগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় যুবলীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলা ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যুবলীগ নেতা সম্রাটসহ ১২ জন গ্রেফতার হন। তাদের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে।

জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে আদালতের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয় চাঞ্চল্যকর সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রসিকিউশনকে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রভাবশালী এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচার দ্রুত শেষ করা উচিত। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলে সরকারের অবস্থান আরও পরিষ্কার হবে। একই সঙ্গে সরকারের ওপর জনগণের আস্থা আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল বলেন, অস্ত্র ও মাদক মামলার চার্জশিট এলেও সম্রাট চিকিৎসাধীন থাকায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে হাজির করছে না। ফলে এসব মামলার বিচার এখনও শুরু করা যায়নি। আর মহানগরের পৃথক দুটি আদালতে জিকে শামীমের অস্ত্র মামলায় ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার মাদক মামলায় বিচার শুরু হয়েছে।

এছাড়া ক্যাসিনোসংক্রান্ত অন্য মামলাগুলোর চার্জশিট দেয়া হলেও বিচারের লক্ষ্যে তা এখনও আদালতে আসেনি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এসব মামলায় অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

১২ প্রভাবশালীর মামলা, তদন্ত ও বিচার : ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত নেতা হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া সাজা তিনি ইতোমধ্যেই ভোগ করেছেন। এছাড়া অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। মামলা দুটি বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।

আর সম্প্রতি করা মানি লন্ডারিং আইনের মামলা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা দুটি তদন্তাধীন রয়েছে।

গত বছরের ৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সংগঠনের সহ-সভাপতি মো. এনামুল হক আরমানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় আরমান মাদক সেবনরত অবস্থায় থাকায় তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। সম্রাটের সঙ্গে মাদক আইনের মামলার আসামিও তিনি।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুদকের মামলাও রয়েছে। বর্তমানে আরমান কারাগারে আর সম্রাট কারা হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন। কথিত যুবলীগ নেতা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীমের (জিকে শামীম) বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে তিনটি মামলা হয়েছে।

এছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। মামলাগুলোর মধ্যে অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই অস্ত্র আইনের মামলায় সাত বডিগার্ডসহ জিকে শামীমের বিচার শুরু হয়েছে। বাকি মামলাগুলো তদন্তাধীন রয়েছে।

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মাদক আইনের মামলা ছাড়াও অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুদকের মামলা রয়েছে।

মাদক মামলায় ইতোমধ্যেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলাটি বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। আর দুদকের মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলা ছাড়াও অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুদকের মামলা রয়েছে।

অস্ত্র ও মাদক আইনের দুটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলা দুটি বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। আর দুদকের মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।

রাজধানীর ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনোর মালিক ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি, মাদক আইনে দুটি ও মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা ছাড়াও অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুদকের মামলা রয়েছে।

অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয়া হলেও মানি লন্ডারিং ও দুদকের মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। অনলাইন ক্যাসিনো জুয়ার আন্তর্জাতিক গডফাদার সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মাদক ও অর্থ পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৪টি মামলা রয়েছে।

মাদক মামলায় চার্জশিট দেয়া হলেও দুটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। বাড়িতে সিন্দুক ভর্তি টাকা ও স্বর্ণ পাওয়ার ঘটনায় সাতটি মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে।

আর এনু ও রুপনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিক মারধরের অভিযোগে আরও একটি মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। মামলাগুলোর মধ্যে মানি লন্ডারিং আইনের চার মামলায় ইতোমধ্যেই আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। চার্জশিটে এনু ও রুপনের আরও তিন ভাইকে আসামি করা হয়েছে।

মামলাগুলো বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। বর্তমানে এনু ও রুপন কারাগারে থাকলেও তার তিন ভাই- শহিদুল হক ভূঁইয়া, রশিদুল হক ভূঁইয়া ও মেরাজুল হক ভূঁইয়া পলাতক রয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল তারেকুজ্জামান রাজীবের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক মামলা রয়েছে। এ দুই মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

এরপর ২৬ কোটি ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। এছাড়া মোহাম্মদপুর থানায় রাজীবের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করে সিআইডি। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

কাউন্সিলর ময়নুল হকের (মনজু) অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলায়ই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে গ্রেফতার হন। ওই সময় তার কাছে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন এবং নগদ দুই লাখ টাকা পাওয়া যায়।

অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় শ্রীমঙ্গলে এবং অর্থ উদ্ধারের ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় অর্থ পাচার আইনে দুটি মামলা হয়েছে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক আরেকটি মামলা করে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!