• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
আমদানি বন্ধের সুফল নেই

তবু সুবিধাবঞ্চিত কৃষক


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ১৭, ২০১৯, ০৭:০০ পিএম
তবু সুবিধাবঞ্চিত কৃষক

ঢাকা : কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় ধানের ন্যায্যমূল্য এবং মূল্যবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে চাল আমদানি বন্ধ এবং ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সরকারের চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে বেশ আগেই। এছাড়া বাড়ানো হয়েছে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও। তবে এখনো এসব পদক্ষেপের কোনো সুফল পাননি কৃষকরা। মূল্যবৃদ্ধি নিশ্চিত দূরের কথা, উল্টো এখনো কমেই চলেছে ধানের দাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধানের দাম গত এক মাসের ব্যবধানে মণপ্রতি প্রায় ৮০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এর মধ্যে শস্য ভান্ডারখ্যাত উত্তরবঙ্গের নওগাঁয় ধানের দাম কমেছে প্রকারভেদে মণপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা। একইভাবে গত কয়েক সপ্তাহে বগুড়া, দিনাজপুর ও কুষ্টিয়ায় ধানের দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা কমেছে। এছাড়াও দেশের বেশির ভাগ জেলায় ধানের দাম নিম্নমুখী।

যদিও ইরি-বোরো ওঠার পর ধানের দাম কম থাকায় কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রথম দফায় গত মে মাসে চাল আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছিল সরকার। সে সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এসআরও’র (স্ট্যাচুটোরি রেগুলেটরি অর্ডার) মাধ্যমে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ বহাল রেখে রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে।

একই সঙ্গে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়। এতে চাল আমদানির ক্ষেত্রে মোট কর ভার হয় ৫৫ শতাংশ। তবে সে পদক্ষেপের পরে আমদানি কিছুটা কমলেও দেশের বাজারে ধানের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়েনি। পরবর্তী সময়ে ওই মাসেই বাংলাদেশ থেকে

সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাজার বিশ্লেষকের অভিমত দিয়েছিল রপ্তানি রাখতে হবে সীমিত পরিসরে। নতুবা আবারো দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ২০১৭ সালের মতো চালের ঘাটতিতে পড়তে পারে। তবে সে পদক্ষেপের পরও প্রায় দেড় মাস কেটে গেছে, দেশ থেকে কোনো চাল রপ্তানি সম্ভব হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার সচিবালয়ে চাল রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক প্রথমবারের মতো ফিলিপাইনে চাল রপ্তানি করা হবে বলে জানান। তিনি বলেন, ফিলিপাইন দুই লাখ টন চাল নিতে চায়। তবে এক লাখ টন চাল দিয়ে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করবেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ পরিমাণ চাল রপ্তানি হলেও দেশের বাজারে এর তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। বরং সুযোগ নিতে পারে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

রপ্তানির অজুহাতে বেড়ে যেতে পারে চালের দাম, যা আবারো ভুক্তভোগী করবে সাধারণ ভোক্তাদের। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ বলেন, আমদানি নিরুৎসাহিত ও রপ্তানি চালু করতে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটা সঠিক সময়ে হয়নি। ফলে আগেভাগেই দেশে প্রচুর চাল আমদানি হয়ে গেছে আর এখনো কোনো চাল রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে এর সুফল পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

তিনি আরো বলেন, এখন আর দরিদ্র কৃষকের কাছে ধান নেই। ফলে রপ্তানি যদিও কিছুটা হয় তার সুফল কৃষক নয়, পাবে ব্যবসায়ী ও বড় মিলমালিকরা।  

তথ্য বলছে, এবার বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। সরকারি হিসাবে, গেল বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ কোটি টন। এর আগে আমন মৌসুমের উৎপাদন ১ কোটি ৫৩ লাখ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ লাখ টন বেশি। আর আউশের উৎপাদন ছিল ৩৫ লাখ টন। ফলে সরকারের গুদামে এখন চালের মজুদ আছে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টন।

এতে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়ানোর কথা বলা হলেও সারা দেশে এ অভিযান চলছে ধীরগতিতে। কৃষকরা বলছেন, যেভাবে ধান কেনা হচ্ছে, তাতে তাদের কোনো উপকার হচ্ছে না। এ কার্যক্রমের শুরুতে দর সামান্য বাড়লেও তা স্থায়ী হয়নি। গত এক সপ্তাহে দাম আরো কমেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে, চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার টন ধান সংগৃহীত হয়েছে, যা লক্ষমাত্রার এক-তৃতীয়াংশেরও কম। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে বোরো মৌসুমে ধানের ভালো ফলন হলেও কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে।

সে সময় খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ওনারা (ডিসিরা) সাহায্য করছেন, সেটা আরো জোরদার করার জন্য এবং আমাদের লোকেরা যাতে আরো বেশি অ্যাকটিভ হয়, ডিসি সাহেবরা যাতে নির্বাহী অফিসারদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে পারে, সেজন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।

এদিকে অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ হেলাল মনে করেন, কৃষক ও সরকার উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের তুলনায় চালের সরবরাহ এখন বেশি। সেজন্য দাম নেমে যাচ্ছে। কিন্তু দামটা যৌক্তিক পর্যায়ে না আনা যায় তবে আগামী বছর কিন্তু ধান উৎপাদনে কৃষক নিরুৎসাহিত হবে। সে সময় বিপদ আরো বাড়বে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!