• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তহবিল গঠনের তাগিদ টিআইবির


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৩০, ২০২০, ০১:৪১ এএম
তহবিল গঠনের তাগিদ টিআইবির

ঢাকা : করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জিডিপির বা মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশের সমপরিমাণ তহবিল গঠনের তাগিদ দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ তহবিল বাস্তবায়ন ও ব্যবহারে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী জার্মানভিত্তিক সংস্থাটি।

শনিবার (২৮ মার্চ) প্রতিষ্ঠানটির পাঠানো এক বিবৃতি টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে দেশবাসীকে পাঠিয়ে নিতান্তই অপ্রতুল ও বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সময় নেই। এখনই সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা-সংবলিত জাতীয় কৌশল চূড়ান্ত করতে ও একই সঙ্গে তার বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থের জোগানের পাশাপাশি বহুমুখী উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত করা ও চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে এবং সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও তাদের অমূল্য অবদানের উপযুক্ত সম্মান দিতে হবে।’

রপ্তানিসংশ্লিষ্ট খাতের শ্রমিক ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যে উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তাকে সাধুবাদ জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কীভাবে এর বাস্তবায়ন হবে, বরাদ্দ করা অর্থ কোন প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের হাতে যাবে এবং এ ক্ষেত্রে কীভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এখনই নির্ধারণ করতে হবে। এই সহায়তার আওতা দেশের হতদরিদ্রদের জন্য সমভাবে সম্প্রসারিত করতে হবে। একইভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন, স্বল্প বেতনের কর্মজীবী মানুষ, দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক, রিকশাচালক, গৃহকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন বা হবেন তাদেরও এর আওতায় আনতে হবে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সংকট চলাকালীন খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ-লাইনের সঙ্গে সচল রাখতে হবে, তা না হলে কোভিড-১৯-এর পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনই মানুষের ক্ষুধা ও মৃত্যুর কারণ হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নিয়োজিত পুলিশের একাংশের বিভ্রান্ত ও অশোভন বলপ্রয়োগ সংকট ঘনীভূত করছে, যা বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘নাগরিকের মৌলিক অধিকার, বিশেষ করে জীবন-জীবিকার অধিকারের পাশাপাশি বাকস্বাধীনতা এবং তথ্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের সব সম্ভাবনা প্রতিহত করা সরকারের দায়িত্ব। অর্থনীতির চাকা পুনরায় দ্রুত সচল করার জন্য জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ সমপরিমাণের বিশেষ তহবিল গঠন করার আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। প্রয়োজনে মেগা-প্রজেক্টগুলোর অর্থায়ন আনুপাতিক হারে কমিয়ে এনে এই খাতে অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বরাদ্দের পাশাপাশি দেশের ধনিকশ্রেণিকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। জনগণের করের টাকায় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের একাংশ বিভিন্ন সময়ে বহুমুখী সুবিধা আদায় করে সম্পদের বিকাশ করেছেন। আজ এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা বিশ্বাস করতে চাই তারা জনস্বার্থে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।’

পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে তহবিল প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তার পুরোটাই জোগানোর দায়িত্ব কি এদেশের মহাধনীজন অনায়াসে নিতে পারেন না, বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

ড. জামান আরও বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এ বিশাল সংকট মোকাবিলায় সফল হতে হলে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার কোনো বিকল্প নেই। তথ্যের স্বচ্ছ ও অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান সচেষ্ট হবে বলে আমরা আশা করি। বিশেষ করে কোন খাতে কত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, অর্থায়নের উৎস এবং কীভাবে ও কতটা কার্যকরভাবে তা ব্যয় করা হচ্ছে, সে তথ্য নিয়মিত প্রকাশ ও হালনাগাদ করতে হবে। এই সংকটকে পুঁজি করে যেন কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয় এবং কেউ যেন অন্যায্য মুনাফা করতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।’

অন্যদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠান দেওয়া তথ্যের ব্যাপারে আস্থাহীনতার সুযোগে গুজব ছড়াচ্ছে, যা জনমনে আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। সংক্রমণ, প্রাণহানি, চিকিৎসা সেবাদান ও সুস্থ হওয়ার সংখ্যাসহ প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক সব কার্যক্রমের তথ্য কোনো ধরনের রাখঢাক না করে প্রকাশ করাটা জরুরি। তাতে জনগণ অধিকতর সতর্ক হওয়ার সুযোগ পাবে। এতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!