• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সচেতনতার জন্য উদ্যোগ নিলেও আছে নানা রকমের বিভ্রান্তি

তারা করোনার রাজনীতিতে ব্যস্ত, পাশে নেই জনগণের


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২১, ২০২০, ০৪:১১ পিএম
তারা করোনার রাজনীতিতে ব্যস্ত, পাশে নেই জনগণের

ঢাকা : দেশে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার আগে থেকেই ভাইরাসটি নিয়ে রাজনীতিবিদদের মধ্যে অযাচিত ও অপ্রীতিকর তর্কযুদ্ধ শুরু হয়। গত ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর তাদের রাজনীতি আরো তেঁতে ওঠে।

করোনার ছোবলে রাজনীতি আপাতত মাঠ থেকে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ চলে যাওয়ায় দিনে দিনে তা হয়ে উঠছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ নির্ভর। যাদের ‘নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য’ রাজনীতিবিদের ‘তর্ক লড়াই’ চলছে করোনা নিয়ে, সেই জনগণের পাশে নেই বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল।

প্রায় পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ও বাংলাদেশে রোগটি বিস্তারের উচ্চঝুঁকি থাকলেও এসব বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার মতো কর্মসূচি পর্যন্ত নেই অধিকাংশ দলের।

ঢাকায় কিছু কর্মসূচি থাকলেও অন্যান্য জেলায় নেতা-কর্মীরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীচিন্তার ঊর্ধ্বে উঠে করোনা মোকাবেলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তো পরের কথা, নিজ দলীয় কর্মসূচিও নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধান মতে, দেশে করোনা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক ও অজস্র প্রশ্ন। রোগটিতে আক্রান্ত একজনের মারা যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। ভাইরাসটির বিষয়ে সচেতনতা অনেকের মধ্যে থাকলেও ‘অকারণে’ আতঙ্কিত মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

সচেতনতার জন্য সরকারের পক্ষে বিভিন্ন উদ্যোগ ও কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এত আয়োজনের মধ্যেও আছে বিভ্রান্তি। আছে ‘অতি সচেতনতার’ বাড়াবাড়িও। বিভ্রান্ত ও অসচেতন জনগণ করোনার বিষয়ে নানা গুজবের শিকার হচ্ছেন।

ভাইরাসটি থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন থাকতে ও শরীরকে জীবাণুমুক্ত রাখতে দরকারি পণ্যগুলোর বাজারে চড়া দাম। কম আয়ের মানুষরা সেসব কিনতে পারছেন না। ফলে তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন আক্রান্তের ঝুঁকিতে।

কীভাবে তাদের কাছে সেসব পণ্য পৌঁছানো যায়, এ ভাবনা আছে খুব কম দলেরই। মহামারির মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকার বিষয়টি নিম্ন আয়ের মানুষকে আরো বেশি ভোগান্তির মধ্যে ফেলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব বিষয়ে নীরব অধিকাংশ দল। সংসদ সদস্যরাও নেই নিজ এলাকার জনগণের পাশে।

অন্যদিকে একদল আরেক দলের ‘ব্যর্থতার’ বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। তর্কযুদ্ধ বাড়াবার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংবাদ সম্মেলনের সংখ্যাও বাড়ছে। তাদের কার্যক্রম মূলত প্রতিপক্ষের ওপর ‘দায়’ চাপানো ও গণমাধ্যমের সামনে ভাষণ-বৃবিতি দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। একদল আরেক দলের কাঁধে করোনার ‘দায়’ চাপাতে ব্যস্ত থাকলেও ভুক্তভোগীদের পাশে নেই তারা।

রাজধানীতে সাধারণত সচেতন মানুষের বাস বেশি হলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির করোনায় সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম রাজধানীনির্ভর বলেও অভিযোগ উঠেছে।

যেসব রাজনৈতিক দল অন্য সময় প্রায় নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন বা ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধনের আয়োজন করে সরকারের ‘সমালোচনা করেন জনগণের কল্যাণের স্বার্থে’ সেসব দলেরও নেই করোনা পরিস্থিতিতে জনমুখি কোনো কর্মসূচি। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও (জাপা) নেই মানুষের পাশে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও নেই দরকারি পণ্য নিয়ে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকা অসচেতন ও গরিব মানুষের পাশে। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বের মহাজোটের শরিক কোনো দলও নেই মাঠে।

বিএনপির নেতৃত্বের ২০ দলীয় জোটের শরিক কোনো দলের নেই জনগণকে সচেতন করার মতো কর্মসূচিও। জনগণের ইস্যুতে যে বাম দলগুলো সরব, তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই কর্মসূচির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় রাজনীতি ভুলে সবাইকে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘দল ও মতের ঊর্ধ্বে উঠে করোনাকে মোকাবেলা করতে হবে। এটি নিয়ে রাজনীতি করা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের কাছে অনুরোধ জানাব এটি একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ। আমরা সবাই মিলে মতভেদ ভুলে জনগণের পাশে দাঁড়ানো এ মুহূর্তে আমাদের দায়িত্ব।’

খোঁজ নিলে জানা যায়, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের করোনা পরিস্থিতিতে নেই কল্যাণমূলক কোনো কার্যক্রম। বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের কেউ নেই মাঠে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা শুরু করেছে।

শুক্রবার (২০ মার্চ) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির প্রচারণা শুরু হয়। পরে, শাহবাগ, নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত মোড়ে পথচারীদের মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও লিফলেট বিতরণ করেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

‘মানুষকে সচেতন করতে দেশব্যাপী এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে’ বলে জানান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়।

তিনি বলেন, ‘যে হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো বিতরণ করা হচ্ছে, সেগুলো ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে। স্যানিটাইজার তৈরি করতে খুব অল্প টাকা খরচ হয়েছে। এগুলো বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।’

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জানান, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ায় নিজ এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন, তাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানোর পদ্ধতি শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা তারা প্রয়োগ করবেন।’

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে করোনার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করবেন বলেও জানান লেখক ভট্টাচার্য।

নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ ও তাদের শিক্ষার্থী সন্তানদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটাইজার দিচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও ঢাকার পুরানা পল্টনের কার্যালয়ে এ নিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্প খুলেছে সংগঠনটি। সংগঠনটি নিজেদের কর্মীদের বানানো এ পর্যন্ত কয়েক হাজার স্যানিটাইজার দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছে।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘করোনার এই সময়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যপণ্য কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। এজন্য তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনা মূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হচ্ছে।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থ উত্তোলনে ছাত্র ইউনিয়ন গণতহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!