• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন ফ্রন্টের যুদ্ধে এগিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধারা


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৪, ২০১৯, ০৪:১২ পিএম
তিন ফ্রন্টের যুদ্ধে এগিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধারা

ঢাকা : আজ ৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এদিন থেকেই শুরু হয়ে যায় দেশমাতৃকার মুক্তির সর্বাত্মক যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের এদিন একসঙ্গে স্থলভাগ, কূটনৈতিক ও স্নায়ুযুদ্ধ মোকাবেলা করতে হয়েছিল। একদিকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর প্রবল বিক্রমে আক্রমণ শুরু করে। ফলে পায়ের তলার মাটি সরে যেতে থাকে পাকিস্তানি হানাদারদের।

অন্যদিকে অনিবার্য পতন আঁচ করতে পেরে পাকিস্তানের তৎকালীন অভিভাবক যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে হেনরি কিসিঞ্জার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের দাবিসংবলিত মার্কিন প্রস্তাব পেশ করার প্রস্তুতি নেন।

এদিনই বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার বাংলাদেশের বৈশ্বিক স্বীকৃতির উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য পত্র লেখা হয়েছিল। একাত্তরের ৪ ডিসেম্বরে এভাবে একসঙ্গে তিন ফ্রন্টে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর অবশ্য পাকিস্তানিরা মাত্র ১৩ দিন টিকেছিল বাংলার দামাল ছেলেদের সামনে। যে কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে ৪ ডিসেম্বর।

আগের দিন ভারতে আক্রমণ চালিয়ে বিপাকে পড়ে যায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এ আক্রমণের মাধ্যমে তারা চেষ্টা করেছিল মুক্তিযুদ্ধের গতি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে। বিশ্ববাসীকে বোঝাতে চেয়েছিল, ভারতের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে তারা এ আক্রমণ করেছে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা নিজেরাই ফেঁসে যায়। তাদের এ অলীক গল্প বিশ্বের কেউ আমলে নেয়নি। রাতে দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বেতার ভাষণে বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

পূর্ব পাকিস্তান আর দখলে রাখা যাবে না এবং মুক্তিবাহিনী যে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে সেটা পাকিস্তানিরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিল। রণাঙ্গনগুলোতে ক্রমেই পরাস্ত হচ্ছিল পাকিস্তানি হানাদাররা। এদিন যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয় চারটি অঞ্চল থেকে। এগুলো হচ্ছে, পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তিন ডিভিশনের সমন্বয়ে গঠিত ৪র্থ কোর সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-নোয়াখালী অভিমুখে।

উত্তরাঞ্চল থেকে দুই ডিভিশনের সমন্বয়ে গঠিত ৩৩তম কোর রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া অভিমুখে। পশ্চিমাঞ্চল থেকে দুই ডিভিশনের সমন্বয়ে গঠিত দ্বিতীয় কোর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর অভিমুখে। এছাড়া মেঘালয় রাজ্যের তুরা থেকে আরেকটি বাহিনী জামালপুর-ময়মনসিংহ অভিমুখে অভিযান শুরু করে।

যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে সারা দেশের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাকিস্তানিরা পিছু হটতে শুরু করে। একের পর এক পাকিস্তানি ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানিরা অল্প কিছু জায়গায় তাদের সামরিক শক্তি জড়ো করেছিল। যৌথবাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রতগতিতে ঢাকার দিকে এগোতে থাকে। জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহায়তায় এগিয়ে আসে। আনুষ্ঠানিক এ যুদ্ধের ১৩তম দিনে পতন ঘটে পাকিস্তানিদের।

ওদিকে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরুর দিন পাকিস্তানিরা মেতে ওঠে আরেক যুদ্ধে। আন্তর্জাতিক এ স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয় জাতিসংঘে। পাকিস্তান চেয়েছিল এ যুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে দেখিয়ে সুবিধা হাতিয়ে নিতে। বিশ্ব সমপ্রদায়ের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। যুদ্ধ থামাতে পারলে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগতি রোধ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ তখন দুর্বল হয়ে পড়বে। একাত্তরের এদিনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের অনুরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করে।

এতে দাবি করা হয়, এ মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন এ প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বৈঠকের পর বৈঠক হলেও প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে পাস হতে পারেনি।

এমনই অস্থির সময়ে ভারতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পড়ে যায় চরম উৎকণ্ঠায়। একাত্তরের এ দিনে তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে লিখিত এক পত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করে। চিঠিতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়, ‘এ ভয়াবহ বিপদে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে।

আমাদের আন্তরিক আশা রয়েছে, আমাদের যৌথ প্রতিরোধে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের হীন পরিকল্পনা ও জঘন্য চক্রান্ত ব্যর্থ হতে বাধ্য। আমরা সফল হবই।’ ওই চিঠি লেখার দুদিনের মাথায় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!